বৃত্তের ভেতরে বৃত্ত-দরিদ্রবান্ধব 'মানুষ' বনাম ক্ষুদ্রঋণের জটাজাল by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা নিয়ে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠছে। নিকট-অতীতেও দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এ প্রশ্ন তুলেছেন। এনজিওগুলোর ঋণের বিপরীতে চড়া হারে সুদ আদায় সমাজে চরম বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
কিন্তু আমরা এ-ও মনে করি, সমাজে আয়-বৈষম্য যে হারে বাড়ছে তাতেও গরিব মানুষের পক্ষে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ ক্রমসংকুচিত হচ্ছে। আর এরই সুযোগ নিচ্ছে দেশের সিংহভাগ এনজিও। দরিদ্ররা ক্রমেই পড়ছে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে ক্ষুদ্রঋণের জটাজালে। ক্ষুদ্রঋণের উচ্চ সুদহারই শুধু নয়, ঋণদান পদ্ধতি থেকে শুরু করে পরিশোধ পদ্ধতির পথ নানা জটিলতায় আকীর্ণ। এনজিওগুলো ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে বটে, কিন্তু ঋণ গ্রহণ থেকে পরিশোধ পর্যন্ত গ্রহীতাদের যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হয় তা তর্কাতীতভাবে কঠিন এবং দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে এ ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ২৪ থেকে ৩৬ শতাংশ হারে সুদ আদায় করা হয়, তাহলে দারিদ্র্য বিমোচন কিভাবে সম্ভব? এ ব্যবস্থায় তো মানুষ নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হবে। বাংলাদেশে বিষয়টি বাণিজ্যিকীকরণের কারণে দারিদ্র্য বিমোচনে এ কার্যক্রম তাৎপর্যময় ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এ জটিল বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে নানা মহলে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে বটে; কিন্তু কোনো ফয়সালা হয়নি।
আমাদের অজানা নয়, ক্ষুদ্রঋণের জটাজালে আবদ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে অনেক ঋণগ্রহীতাকে ভিটামাটিও হারাতে হয়েছে। পত্রপত্রিকায় অতীতে এমন সংবাদও এসেছে, ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন আত্মঘাতী পথ। এর বিপরীতে প্রশ্ন আসতে পারে_ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কেউ কেউ কি স্বাবলম্বীও হননি? হয়েছেন। কিন্তু এ প্রশ্নও রাখি, সে সংখ্যা কত আর ঋণ নিয়ে ভেজা গামছা শুকায় না কখনো এমন মানুষের সংখ্যা কত? আমরা ক্ষুদ্রঋণের যে প্রচার-প্রচারণা ও আন্তর্জাতিক দাতাদের এ ব্যাপারে যেসব সন্তুষ্টিমূলক আশার বাণী শুনি বা কার্যক্রম দেখি, সে অনুপাতে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের সফলতা কতটুকু? মহাজনি সুদের কাজ-কারবারের সঙ্গে বিদ্যমান ক্ষুদ্রঋণের তফাতই বা কতটুকু? বিখ্যাত ঔপন্যাসিক কাজী ইমদাদুল হকের 'আবদুল্লাহ' গল্পের মদন গাজী চরিত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। কিন্তু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মদন গাজীর সংখ্যা কেন বাড়ছে, কেন দারিদ্র্যের সিল-মারা এই মদন গাজীরা সামনে এগোতে পারছেন না_এর সন্ধান কে করে? কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করে কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সহজ শর্তে ব্যাপকভাবে উৎপাদন কিংবা কর্মমুখী ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা না করে এনজিওগুলোর জন্য এ দরজাটা এমনভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো কেন_তাও অন্তহীন এক জিজ্ঞাসা বটে। সরকারি তরফে একবার বলা হয়েছিল, এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত, তাই তাদের দিয়ে এ কাজটা করানো সহজতর। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি এমন সহজতর ব্যবস্থার পথ খুলতে পারে না?
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান দায়িত্বভার নেওয়ার পর থেকে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনে এবং আর্থিকভাবে দুর্বল কৃষকদের কল্যাণে বেশ সহায়ক। তাঁর সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হচ্ছে, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা। সহজ শর্তে ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে কৃষিঋণ দান পদ্ধতি সহজতর করার পক্ষে তাঁর নবউদ্যোগে কৃষকরা যথেষ্ট সুফল পেয়েছেন, এটিও অনস্বীকার্য। কিন্তু তার পরও পত্রপত্রিকায় চোখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাচারী অসাধুদের বক্রপথে হাঁটার পাঁয়তারা। তবে তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক কম, এ-ও অসত্য নয়। অনেক এনজিও এখন শুধু ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমেই আবদ্ধ নয়; তারা ব্যাংক, বীমা, শিল্প, সেবা খাতসহ নানা রকম লাভজনক ব্যবসার দিকেও হাত বাড়িয়েছে। সেবা খাতের সুবিধা যাতে দেশের প্রত্যেক নাগরিক যথাযথভাবে ভোগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায় তো সর্বাগ্রে সরকারের। এ ক্ষেত্রে সরকারি তদারকিসহ নানা রকম জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির পরিধি বিস্তৃত করা জরুরি এবং তা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি এর বিপরীত চিত্র, যা সাধারণ মানুষের জন্য শুভকর নয়। এনজিওগুলো নানা রকম ব্যবসা করলেও তারা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে বা পাচ্ছে, এ-ও শোনা যায়। অথচ দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহায়ক নীতির চিত্রটা এমন পুষ্ট হলে দেশ জাতির জন্য অনেক কল্যাণকর হতো। ব্যক্তি খাত বিকশিত হলে শুধু যে কর্মসংস্থানের দরজাটাই প্রশস্ত হবে তা-ই নয়, দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রেও আশানুরূপ চিত্র পাওয়া যাবে, অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। কর ধার্য থেকে শুরু করে শিল্প কিংবা কর্মমুখী প্রকল্পবান্ধব কার্যক্রম আনুষঙ্গিক সব ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিলে এর ইতিবাচক প্রভাব বহুমুখী হবে_এ-ও খুব সরল হিসাব। রাজস্ব আয়ও বাড়বে সমানতালে। মাঝেমধ্যেই পত্রপত্রিকায় চোখে পড়ে ভুঁইফোড় এনজিও প্রতারণামূলক ব্যবসা খুলে নানা রকম অপকর্ম করছে। অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এসব এনজিও তুঘলকি কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
এনজিওগুলোর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য কিংবা কার্যধারা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শুধু সচেতন মহলের বিশেষজ্ঞরা নন, সরকারের দায়িত্বশীলরাও বহুবার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এনজিওগুলোর দায়িত্বশীলতা-জবাবদিহিতার জন্য যথাযথ কিংবা সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার তাগিদও এসেছে পাশাপাশি। ক্ষুদ্রঋণ আদায়ে সাফল্যের চিত্র মাঝেমধ্যে তুলে ধরা হলেও এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার তথ্যচিত্র কি সেভাবে তুলে ধরা হয়েছে? একজন দরিদ্র এক এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে আরেক এনজিওর দ্বারস্থ হন। ফলে তাঁর আর ভিজে গামছাটা তো শুকায়ই না, একপর্যায়ে খুব দ্রুত সেটা ছিঁড়েও যায়, তিনি হয়ে যান উলঙ্গ, যা বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় চরম অমানবিকও বটে। সন্দেহ নেই, সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবে ক্ষুদ্রঋণ দান প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদ এবং সার্ভিস চার্জ নিয়ে নিজেদের অবস্থাটা স্ফীত করছে; কিন্তু কষ্টে যাদের জীবন গড়া তাদের নিয়তি কষ্ট ভরাই থেকে যাচ্ছে। এই চিত্র জিইয়ে রেখে আমাদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রকরা দারিদ্র্য বিমোচনের কোন স্বপ্নে বিভোর, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। গফরগাঁওয়ের রেজিয়া, সুনামগঞ্জের বেওয়া আমীরুন, নরসিংদীর রাবেয়া, শিউলি, মুর্শিদা, জয়পুরার সখিনা, মালতী, জামালপুরের মেহেরুন্নেছা, জোবরার সুফিয়া খাতুন_তারা ক্ষুদ্রঋণের তথাকথিত সাফল্যের নির্মম দৃষ্টান্ত। ক্ষুদ্রঋণ হলো উন্নয়নশীল দেশের গরিবদের জন্য গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের একটা বড় ফাঁদ। এ দেশে এর প্রচলকদের কেউ কেউ নিজেরা করমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন এবং তাতে সফলও হয়েছেন! এ ঋণপ্রক্রিয়া অসংখ্য মানুষকে নতুন করে ঋণগ্রস্ত করেছে, অনেককে সুদের মহাজন বানিয়েছে।
এনজিও তথা সেবার উদ্দেশ্যে গঠিত বেসরকারি সংস্থামাত্রই জনসেবায় নিয়োজিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান_প্রায় চার দশকের অভিজ্ঞতায় এ কথা বলার আর জো নেই। জনস্বার্থে কাজ করার পাশাপাশি কোনো কোনো এনজিও প্রতিষ্ঠানকে অনেক অসাধু উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিদেশি অনুদান এনে তা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠায় লাগানো, এমনকি রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর চর্চাও আর গোপন নয়। অন্যদিকে দেশে অজস্র এনজিও রয়েছে, যেগুলোর নিবন্ধনই নেই। কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের এক সংবাদে প্রকাশ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বিপুলসংখ্যক এনজিও কখনো নিবন্ধিতই হয়নি, অথবা তাদের নিবন্ধনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও নবায়ন করা হয়নি। এমনও তো আমরা শুনেছি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য নিবন্ধিত এনজিওগুলোর কোনো কোনোটি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে! এসব কারণেই বেসরকারি সংস্থা তথা এনজিও প্রতিষ্ঠা, পরিচালনাসহ এদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিদেশি অর্থ সাহায্যের ব্যবহার আইনানুগভাবে ও ঘোষিত উদ্দেশ্যে হচ্ছে কি না, দুর্নীতি হচ্ছে কি না এবং সর্বোপরি দেশবিরোধী কাজে এ অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে কি না_বিদ্যমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে তা-ও তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু সত্য, এর কোনোটাই হয়নি সঠিকভাবে। হিতের নামে যা বিপরীতটা ঘটায়, তা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
যে দেশে অনিবন্ধিত অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানোও কঠিন, সেখানে এত বিপুলসংখ্যক এনজিও কিভাবে নিবন্ধন ছাড়াই দেশময় কাজ চালাতে পারছে? অবশ্যই উদ্বেগজনক যে_রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঢাল হিসেবে অনেক এনজিওকে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। আর্থিক প্রতারণা, 'দারিদ্র্য বিমোচন' ব্যবসা থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের কৌশলী হাতিয়ার হিসেবে কোনো কোনো এনজিওর ব্যবহারের কথা যখন ওঠে, তখন বিষয়টিকে মোটেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। ১৯৭৮ সাল থেকে এনজিও রেগুলেশন রুলস নামের একটি আইন বিদ্যমান। জরুরি এ প্রসঙ্গটি আর উপেক্ষিত থাকা মোটেই উচিত নয়। এসব ব্যাপারে ফেডারেশন অব এনজিওস অব বাংলাদেশের (এফএনবি) ভাষ্য জানা গিয়েছিল। তাদের মতে, এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো নিবন্ধন করার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নয়। এখানে নিবন্ধিত না হওয়া অনেক এনজিওই সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা অন্য কোথাও নিবন্ধিত রয়েছে। তাদের মতে, এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোর কাজ বৈদেশিক অর্থ সাহায্য ছাড় করানো। বলা হয়ে থাকে উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও অধিকার প্রশ্নে এনজিও খাতের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। যদি তা-ই হয় তাহলে একটি বিভাগ থেকেই সামগ্রিক সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন। এই তদারকি শুধু ছোট এনজিওর বেলাতেই নয়, বিরাটাকারের দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এনজিওর বেলায়ও প্রয়োজন।
এর পর এক হাজার এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। এর পরবর্তী কার্যক্রম আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। এনজিওর অস্বাভাবিক সংখ্যাই নয়_যেনতেনভাবে এনজিও পরিচালনা, এর ওপর নজরদারির অভাবও বড় সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া না হলেও লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় প্রায় সব এনজিও একে তাদের বড় অবলম্বন করে তোলে। সুদ-বাণিজ্যের এমন রমরমা চিত্র জিইয়ে রেখে আর যা-ই হোক দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। অন্যদিকে এনজিওগুলো লাভজনক ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে কেন যথারীতি সব শুল্ক-করসহ সরকারি রাজস্ব দেবে না_এও জরুরি প্রশ্ন। কোনো কোনো 'ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ী' নিজেদের অবস্থান আইন ও রাষ্ট্রের ওপরে মনে করেন। চালান সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক তিনি যত বড়ই হোন না কেন, যত খ্যাতিই তাঁর থাক না কেন তাঁকে আইন ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য পোষণ করতেই হবে। তাঁরা নানা রকম অজুহাত দাঁড় করিয়ে অনেক কিছু থেকে পারও পেতে চান। মুখের কথায় দারিদ্র্যকে পাঠিয়ে দিতে চান জাদুঘরে! নিজেদের আখেরটা ঠিকই গোছাচ্ছেন ভিন্ন কৌশলে। কী বিচিত্র এই দেশ! তথাকথিত এসব 'দরিদ্রবান্ধব'রা কেন বুঝতে চান না, মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন তাদের অচেতন করে রাখার সব রকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও। দারিদ্র্যকে শুধু উচ্চারিত শব্দের ধাক্কায় নির্বাসনে কিংবা জাদুঘরে পাঠানো যে সম্ভব নয়, তা কম সচেতনদেরও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
লেখক : সাংবাদিক
deba-bishnu@yahoo.com
আমাদের অজানা নয়, ক্ষুদ্রঋণের জটাজালে আবদ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে অনেক ঋণগ্রহীতাকে ভিটামাটিও হারাতে হয়েছে। পত্রপত্রিকায় অতীতে এমন সংবাদও এসেছে, ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন আত্মঘাতী পথ। এর বিপরীতে প্রশ্ন আসতে পারে_ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কেউ কেউ কি স্বাবলম্বীও হননি? হয়েছেন। কিন্তু এ প্রশ্নও রাখি, সে সংখ্যা কত আর ঋণ নিয়ে ভেজা গামছা শুকায় না কখনো এমন মানুষের সংখ্যা কত? আমরা ক্ষুদ্রঋণের যে প্রচার-প্রচারণা ও আন্তর্জাতিক দাতাদের এ ব্যাপারে যেসব সন্তুষ্টিমূলক আশার বাণী শুনি বা কার্যক্রম দেখি, সে অনুপাতে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের সফলতা কতটুকু? মহাজনি সুদের কাজ-কারবারের সঙ্গে বিদ্যমান ক্ষুদ্রঋণের তফাতই বা কতটুকু? বিখ্যাত ঔপন্যাসিক কাজী ইমদাদুল হকের 'আবদুল্লাহ' গল্পের মদন গাজী চরিত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। কিন্তু স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মদন গাজীর সংখ্যা কেন বাড়ছে, কেন দারিদ্র্যের সিল-মারা এই মদন গাজীরা সামনে এগোতে পারছেন না_এর সন্ধান কে করে? কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করে কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সহজ শর্তে ব্যাপকভাবে উৎপাদন কিংবা কর্মমুখী ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা না করে এনজিওগুলোর জন্য এ দরজাটা এমনভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো কেন_তাও অন্তহীন এক জিজ্ঞাসা বটে। সরকারি তরফে একবার বলা হয়েছিল, এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত, তাই তাদের দিয়ে এ কাজটা করানো সহজতর। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি এমন সহজতর ব্যবস্থার পথ খুলতে পারে না?
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান দায়িত্বভার নেওয়ার পর থেকে বিশেষ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দারিদ্র্য বিমোচনে এবং আর্থিকভাবে দুর্বল কৃষকদের কল্যাণে বেশ সহায়ক। তাঁর সবচেয়ে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হচ্ছে, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা। সহজ শর্তে ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে কৃষিঋণ দান পদ্ধতি সহজতর করার পক্ষে তাঁর নবউদ্যোগে কৃষকরা যথেষ্ট সুফল পেয়েছেন, এটিও অনস্বীকার্য। কিন্তু তার পরও পত্রপত্রিকায় চোখে পড়েছে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাচারী অসাধুদের বক্রপথে হাঁটার পাঁয়তারা। তবে তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক কম, এ-ও অসত্য নয়। অনেক এনজিও এখন শুধু ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমেই আবদ্ধ নয়; তারা ব্যাংক, বীমা, শিল্প, সেবা খাতসহ নানা রকম লাভজনক ব্যবসার দিকেও হাত বাড়িয়েছে। সেবা খাতের সুবিধা যাতে দেশের প্রত্যেক নাগরিক যথাযথভাবে ভোগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার দায় তো সর্বাগ্রে সরকারের। এ ক্ষেত্রে সরকারি তদারকিসহ নানা রকম জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির পরিধি বিস্তৃত করা জরুরি এবং তা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি এর বিপরীত চিত্র, যা সাধারণ মানুষের জন্য শুভকর নয়। এনজিওগুলো নানা রকম ব্যবসা করলেও তারা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে বা পাচ্ছে, এ-ও শোনা যায়। অথচ দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহায়ক নীতির চিত্রটা এমন পুষ্ট হলে দেশ জাতির জন্য অনেক কল্যাণকর হতো। ব্যক্তি খাত বিকশিত হলে শুধু যে কর্মসংস্থানের দরজাটাই প্রশস্ত হবে তা-ই নয়, দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রেও আশানুরূপ চিত্র পাওয়া যাবে, অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। কর ধার্য থেকে শুরু করে শিল্প কিংবা কর্মমুখী প্রকল্পবান্ধব কার্যক্রম আনুষঙ্গিক সব ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিলে এর ইতিবাচক প্রভাব বহুমুখী হবে_এ-ও খুব সরল হিসাব। রাজস্ব আয়ও বাড়বে সমানতালে। মাঝেমধ্যেই পত্রপত্রিকায় চোখে পড়ে ভুঁইফোড় এনজিও প্রতারণামূলক ব্যবসা খুলে নানা রকম অপকর্ম করছে। অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে এসব এনজিও তুঘলকি কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
এনজিওগুলোর চরিত্র-বৈশিষ্ট্য কিংবা কার্যধারা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শুধু সচেতন মহলের বিশেষজ্ঞরা নন, সরকারের দায়িত্বশীলরাও বহুবার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এনজিওগুলোর দায়িত্বশীলতা-জবাবদিহিতার জন্য যথাযথ কিংবা সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার তাগিদও এসেছে পাশাপাশি। ক্ষুদ্রঋণ আদায়ে সাফল্যের চিত্র মাঝেমধ্যে তুলে ধরা হলেও এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার তথ্যচিত্র কি সেভাবে তুলে ধরা হয়েছে? একজন দরিদ্র এক এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে আরেক এনজিওর দ্বারস্থ হন। ফলে তাঁর আর ভিজে গামছাটা তো শুকায়ই না, একপর্যায়ে খুব দ্রুত সেটা ছিঁড়েও যায়, তিনি হয়ে যান উলঙ্গ, যা বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় চরম অমানবিকও বটে। সন্দেহ নেই, সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবে ক্ষুদ্রঋণ দান প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদ এবং সার্ভিস চার্জ নিয়ে নিজেদের অবস্থাটা স্ফীত করছে; কিন্তু কষ্টে যাদের জীবন গড়া তাদের নিয়তি কষ্ট ভরাই থেকে যাচ্ছে। এই চিত্র জিইয়ে রেখে আমাদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রকরা দারিদ্র্য বিমোচনের কোন স্বপ্নে বিভোর, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। গফরগাঁওয়ের রেজিয়া, সুনামগঞ্জের বেওয়া আমীরুন, নরসিংদীর রাবেয়া, শিউলি, মুর্শিদা, জয়পুরার সখিনা, মালতী, জামালপুরের মেহেরুন্নেছা, জোবরার সুফিয়া খাতুন_তারা ক্ষুদ্রঋণের তথাকথিত সাফল্যের নির্মম দৃষ্টান্ত। ক্ষুদ্রঋণ হলো উন্নয়নশীল দেশের গরিবদের জন্য গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের একটা বড় ফাঁদ। এ দেশে এর প্রচলকদের কেউ কেউ নিজেরা করমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন এবং তাতে সফলও হয়েছেন! এ ঋণপ্রক্রিয়া অসংখ্য মানুষকে নতুন করে ঋণগ্রস্ত করেছে, অনেককে সুদের মহাজন বানিয়েছে।
এনজিও তথা সেবার উদ্দেশ্যে গঠিত বেসরকারি সংস্থামাত্রই জনসেবায় নিয়োজিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান_প্রায় চার দশকের অভিজ্ঞতায় এ কথা বলার আর জো নেই। জনস্বার্থে কাজ করার পাশাপাশি কোনো কোনো এনজিও প্রতিষ্ঠানকে অনেক অসাধু উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিদেশি অনুদান এনে তা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠায় লাগানো, এমনকি রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর চর্চাও আর গোপন নয়। অন্যদিকে দেশে অজস্র এনজিও রয়েছে, যেগুলোর নিবন্ধনই নেই। কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের এক সংবাদে প্রকাশ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বিপুলসংখ্যক এনজিও কখনো নিবন্ধিতই হয়নি, অথবা তাদের নিবন্ধনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও নবায়ন করা হয়নি। এমনও তো আমরা শুনেছি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সমাজসেবামূলক কাজের জন্য নিবন্ধিত এনজিওগুলোর কোনো কোনোটি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে! এসব কারণেই বেসরকারি সংস্থা তথা এনজিও প্রতিষ্ঠা, পরিচালনাসহ এদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিদেশি অর্থ সাহায্যের ব্যবহার আইনানুগভাবে ও ঘোষিত উদ্দেশ্যে হচ্ছে কি না, দুর্নীতি হচ্ছে কি না এবং সর্বোপরি দেশবিরোধী কাজে এ অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে কি না_বিদ্যমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে তা-ও তদারকির প্রয়োজন রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু সত্য, এর কোনোটাই হয়নি সঠিকভাবে। হিতের নামে যা বিপরীতটা ঘটায়, তা তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
যে দেশে অনিবন্ধিত অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয় চালানোও কঠিন, সেখানে এত বিপুলসংখ্যক এনজিও কিভাবে নিবন্ধন ছাড়াই দেশময় কাজ চালাতে পারছে? অবশ্যই উদ্বেগজনক যে_রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঢাল হিসেবে অনেক এনজিওকে ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। আর্থিক প্রতারণা, 'দারিদ্র্য বিমোচন' ব্যবসা থেকে শুরু করে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের কৌশলী হাতিয়ার হিসেবে কোনো কোনো এনজিওর ব্যবহারের কথা যখন ওঠে, তখন বিষয়টিকে মোটেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। ১৯৭৮ সাল থেকে এনজিও রেগুলেশন রুলস নামের একটি আইন বিদ্যমান। জরুরি এ প্রসঙ্গটি আর উপেক্ষিত থাকা মোটেই উচিত নয়। এসব ব্যাপারে ফেডারেশন অব এনজিওস অব বাংলাদেশের (এফএনবি) ভাষ্য জানা গিয়েছিল। তাদের মতে, এনজিও-বিষয়ক ব্যুরো নিবন্ধন করার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নয়। এখানে নিবন্ধিত না হওয়া অনেক এনজিওই সমাজসেবা অধিদপ্তর কিংবা অন্য কোথাও নিবন্ধিত রয়েছে। তাদের মতে, এনজিও-বিষয়ক ব্যুরোর কাজ বৈদেশিক অর্থ সাহায্য ছাড় করানো। বলা হয়ে থাকে উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও অধিকার প্রশ্নে এনজিও খাতের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। যদি তা-ই হয় তাহলে একটি বিভাগ থেকেই সামগ্রিক সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন। এই তদারকি শুধু ছোট এনজিওর বেলাতেই নয়, বিরাটাকারের দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এনজিওর বেলায়ও প্রয়োজন।
এর পর এক হাজার এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। এর পরবর্তী কার্যক্রম আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। এনজিওর অস্বাভাবিক সংখ্যাই নয়_যেনতেনভাবে এনজিও পরিচালনা, এর ওপর নজরদারির অভাবও বড় সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের অনুমতি দেওয়া না হলেও লাভজনক বিবেচিত হওয়ায় প্রায় সব এনজিও একে তাদের বড় অবলম্বন করে তোলে। সুদ-বাণিজ্যের এমন রমরমা চিত্র জিইয়ে রেখে আর যা-ই হোক দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। অন্যদিকে এনজিওগুলো লাভজনক ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে কেন যথারীতি সব শুল্ক-করসহ সরকারি রাজস্ব দেবে না_এও জরুরি প্রশ্ন। কোনো কোনো 'ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ী' নিজেদের অবস্থান আইন ও রাষ্ট্রের ওপরে মনে করেন। চালান সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক তিনি যত বড়ই হোন না কেন, যত খ্যাতিই তাঁর থাক না কেন তাঁকে আইন ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য পোষণ করতেই হবে। তাঁরা নানা রকম অজুহাত দাঁড় করিয়ে অনেক কিছু থেকে পারও পেতে চান। মুখের কথায় দারিদ্র্যকে পাঠিয়ে দিতে চান জাদুঘরে! নিজেদের আখেরটা ঠিকই গোছাচ্ছেন ভিন্ন কৌশলে। কী বিচিত্র এই দেশ! তথাকথিত এসব 'দরিদ্রবান্ধব'রা কেন বুঝতে চান না, মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন তাদের অচেতন করে রাখার সব রকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও। দারিদ্র্যকে শুধু উচ্চারিত শব্দের ধাক্কায় নির্বাসনে কিংবা জাদুঘরে পাঠানো যে সম্ভব নয়, তা কম সচেতনদেরও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
লেখক : সাংবাদিক
deba-bishnu@yahoo.com
No comments