মার্টিন ফ্যাকলার-পারমাণবিক স্থাপনা বিস্ফোরণে সন্ত্রস্ত জাপানের মানুষ

জাপানে উদ্ধারকাজ চলছে পুরোদমে। ইমারতের নিচে চাপা পড়ে আছে যারা কিংবা অবরুদ্ধ হয়ে আছে এমন মানুষদের খাদ্য, পানীয় ও ওষুধের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। জাপানের উত্তরাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সাম্প্রতিক সুনামির আঘাতে। এখনো অনেক মানুষ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। জাপানের পারমাণবিক স্থাপনার আশপাশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।


স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, শুধু মিয়াজি এলাকাতেই মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সুনামিতে যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়াজি তার মধ্যে অন্যতম। যদিও জাপানের সরকারি প্রচারমাধ্যমে বলা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০ পর্যন্ত হতে পারে। তাদেরই কথা, এই সংখ্যা অতি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় মানুষ হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের খোঁজাখুঁজি করছে। কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে এখনো উদ্ধারকারীরা এসে পেঁৗছাতে পারেননি। ফুকুসিমা পারমাণবিক স্থাপনার আশপাশে এলাকার অন্তত তিন লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাপানের নিজস্ব দমকল বাহিনীর লোকরা হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে শিল্পাঞ্চলের আগুন নেভানোর চেষ্টায় লিপ্ত আছেন।
জাপানে কুবেতে ১৯৯৫ সালে যে ভূমিকম্প হয়েছিল সেই থেকে তারা শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তখনো তারা আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আর সে জন্য তাদের অতিরিক্ত ছয় হাজার মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে সমালোচনা হয়েছিল ব্যাপকভাবে।
জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটি আছে। রোনাল্ড রিগ্যানের পাঠানো হেলিকপ্টার, বিমান এবং ডেস্ট্রয়ারগুলো অনেক ক্ষমতাশালী। এগুলো হাসপাতাল হিসেবে কাজ করারও ক্ষমতা রাখে। তাদের যে পানি শোধনাগার আছে, তা-ও আধুনিক। সেই শোধনাগারের মাধ্যমে সমুদ্রের নোনা পানিও সহজেই সুপেয় করা সম্ভব হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাপানে সেদিন অন্তত ৯০ বার ভূকম্পন হয়েছে। যার মধ্যে অন্তত পাঁচটি ছিল ৬ মাত্রার বেশি।
দুইবার পারমাণবিক বোমার আঘাত হয়েছে জাপানে। ভূমিকম্প, সুনামির অভিজ্ঞতা থাকলেও এত ব্যাপক কোনো দুর্যোগ তাদের হয়নি। ভূকম্পন এলাকাতেই রয়েছে ফুকুসিমা পারমাণবিক স্থাপনা। আকাশচিত্রে দেখা গেছে, সেসব এলাকার বহু কারখানায় আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে অনেক কারখানার আশপাশের এলাকা। বেঁচে থাকা মানুষগুলো বাড়ির ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সংকেত প্রয়োগ করছে সাহায্যের জন্য। আর কত মানুষ যে নিখোঁজ আছে শহর থেকে শহরে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি। সেখানে টেলিফোন সংযোগ নেই। যোগাযোগ নেই শত শত মানুষের। তবে এ ক্ষেত্রে বেতার প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। টেলিভিশন এবং বেতারকেন্দ্রগুলো থেকে বিভিন্ন পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে, 'আমরা সুস্থ আছি, দয়া করে তুমি কোথায় আছ আমাদের জানাও।' এভাবেই নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজাখুঁজি চলছে সেখানে।
জাপানের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো আকাশে চক্কর মারছে। গাড়িতে গাড়িতে সৈন্যদের সমাবেশ দেখা যায় উপদ্রুত এলাকাগুলোতে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ৭৪ হাজার মানুষের বসতি কেসেনুমা শহরের এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইয়টে নামক শহরের অধিবাসী ছিল ২৩ হাজার। সেই শহরটিও প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ১.৪ মিলিয়ন বাড়ি এখন বিদ্যুৎবিহীন এবং পাঁচ লাখ বাড়িতে পানি নেই।
সেখানে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়, সাধারণ মানুষও দুর্গতদের সহযোগিতা করতে চাইছে। কিন্তু জাপান সরকার তাদের এগিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করছে। বলা হচ্ছে, পেশাজীবীদের কাজটি তাদেরই করতে দেওয়া হোক। কারণ তাদের আধুনিক সরঞ্জাম আছে। তাদের প্রশিক্ষণও আছে। বিদ্যুতের ব্যাপারটি সরকারের নির্দেশাবলির আওতায় চলছে। পারমাণবিক স্থাপনার বিস্ফোরণে যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় সেদিকটিতেও সরকার গভীর মনোযোগী হয়েছে।
এপি পরিবেশিত সংবাদের ভিত্তিতে নিবন্ধটি লেখা হয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক
দ্য সিয়াটল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.