যুক্তরাষ্ট্রেও থেমে নেই ইসলাম by জহির উদ্দিন বাবর

যুক্তরাষ্ট্রেও থেমে নেই শাশ্বত ইসলামের অগ্রযাত্রা। বিশ্বের নিয়ন্ত্রক এ দেশটির মূলধারার সঙ্গে মিশে গেছেন মুসলমানরা। গত এক দশকে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেড়েছে। গত ১ মে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় শুমারির ফলাফলে এ হিসাব দেওয়া হয়েছে।


অ্যাসোসিয়েশন অব স্ট্যাটিস্টিশিয়ান্স অব আমেরিকান রিলিজিয়াস বডিস এ শুমারির উপাত্ত সংকলন করেছে এবং অ্যাসোসিয়েশন অব রিলিজিয়ন ডাটা আর্কাইভ তা প্রকাশ করেছে। শুমারিতে দেখা যায়, ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ, ২০১০ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে ২৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গত দশ বছরে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৬৬.৭ শতাংশ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মুসলমান। সেখানকার মুসলমানদের মধ্যে 'গ্যালাপ সেন্টার ফর মুসলিম স্টাডিজ' পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে মুসলমানরা বেশি ধার্মিক এবং উচ্চশিক্ষিত। অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্যদের চেয়ে মুসলমানরা কম জড়িত। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশই বলেছে, ধর্ম তাদের জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জন্য তারা ধর্মকর্ম পালন করেন। আমেরিকার মুসলমানদের ৪১ শতাংশ জানিয়েছে, তারা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছেন। তবে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে মুসলমানরা অহেতুক নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাও বিশ্ব মিডিয়ায় এসেছে। তবে এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রশাসনিকভাবে মুসলমানদের ওপর বাড়তি কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলেই মনে করেন সেখানকার অধিবাসীরা। সম্প্রতি আরেক জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে বর্তমানে মসজিদ রয়েছে ২১০৬টি। এ সংখ্যা ২০০০ সালের চেয়ে শতকরা ৭৪ ভাগ বেশি। এর মধ্যে নিউইয়র্ক শহরে রয়েছে ১৯২টি মসজিদ, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ১২০টি, ফ্লোরিডায় ১১৮টি এবং টেক্সাসে রয়েছে ১৬৬টি মসজিদ। এমনকি মন্টানা, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাইরের জনসংখ্যা শতকরা এক ভাগেরও কম, সেখানেও দুটি মসজিদ রয়েছে। ২০০২ সালে মসজিদের সংখ্যা ছিল এক হাজার ২০৯টি। আর ২০০২ সালে যেখানে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছিলেন ২০ লাখ মুসলি্ল, সেখানে ২০১১ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ লাখে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর কমপক্ষে বিশ হাজার মানুষ মুসলমান হচ্ছে এবং ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কারণ তারা এটা বুঝতে পেরেছেন, কয়েকটি উগ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসলামকে এক করে দেখানোর যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। ইসলামে আল্লাহর ওপর নির্ভরতা, এক খোদার প্রতি আনুগত্য, যে কোনো কুসংস্কার থেকে দূরে থাকা ও মানবীয় মূল্যবোধ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় এবং সর্বোপরি কোরআনে কারিমে আজ পর্যন্ত কোনো বিকৃতি না ঘটায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্রমেই ইসলামের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। এসব দেশে কোরআনসহ ধর্মীয় গ্রন্থের বিক্রি বেড়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানের মধ্যে বিরাটসংখ্যক তরুণ নিয়মিত মসজিদে যায়। এসব তরুণ সম্পর্কে কোনো কোনো গণমাধ্যম অপপ্রচার চালাচ্ছে_ তারা মৌলবাদ ও চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কিন্তু দেশটির শতকরা ৮৭ ভাগ মুসলিম নেতা ও ইমাম তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, মুসলিম তরুণদের মধ্যে চরমপন্থা বাড়ছে না। মার্কিন কংগ্রেসে মুসলমানের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কিথ এলিসন। গত বছরের মার্চে মার্কিন কংগ্রেসে তিনি জোরালো ভাষায় বলেছেন, গুটিকয়েক মানুষের কর্মকাণ্ডের দায়ভার গোটা মুসলিম সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ঘটনায় মুসলমান প্যারামেডিক সুলেমান হামদানির আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধসে পড়া টুইন টাওয়ারে অন্যের জীবন বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন সুলেমান। অথচ শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই তাকে হামলাকারীর একজন হিসেবে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমানরা অপেক্ষাকৃত ধার্মিক। সামাজিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা নিজেদের ধর্মে অটুট থাকার চেষ্টা করছে। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোতে মুসলমানদের ছেলেমেয়েরা দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করছে। বাইরে থেকে তাবলিগের কাজে যারা যুক্তরাষ্ট্রে যান তারাও নির্বিঘ্নে ইসলামের বাণী ছড়াচ্ছেন। এককথায় যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের সজীব ধারা বয়ে চলছে তার নিজস্ব গতিতে।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.