দুর্লভ বৃক্ষগুলো সুলভ হোক by নাজনীন তৌহিদ
আমগাছের নিচে বসে হাতপাখা দোলানো, বৈশাখী ঝড়ে খোকা-খুকুর আম কুড়ানো, জ্যৈষ্ঠের গরমে আম-কাঁঠাল খাওয়ার ধুম! এসব কিছুর সঙ্গে মিশে আছি আমরা, মিশে আছে আমাদের ছেলেবেলা। অথচ একবার ভেবে দেখুন তো, এ গাছ, এ সবুজ প্রকৃতি যদি একদিন না থাকে! শূন্য মাঠ, শূন্য ক্ষেত,
তপ্ত বালুকাময় মরুপ্রান্তর! মাথার ওপর সূর্যের গনগনে উত্তাপ! না_ আমরা এমন দিনের কথা ভাবতে পারি না, ভাবতে চাইও না। আমরা সবুজ-সতেজ পৃথিবী চাই। আমরা নিঃশ্বাস ছেড়ে বাঁচতে চাই! আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের অস্তিত্ব এখন কোথায়।
বছর দুই আগে একটি মেয়ের পরীক্ষার খাতায় লেখা 'পরিবেশ দূষণ' রচনা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, ছোটরাও এত বড় করে ভাবে? যখনই আমি পরিবেশের কথা ভাবি, আমার ভাবনার মাঝে সে মেয়েটির ছায়া হা-হা করে বলে ওঠে, ঠেকাও তোমরা পরিবেশ দূষণ, আমরা বাঁচতে চাই, ফিরিয়ে দাও সবুজ অরণ্য আমায়! কোনো এক কারণে মেয়েটি পৃথিবীর ওপর অভিমান করে চলে গেছে। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় এ পৃথিবীকে আমরা ওর বাসযোগ্য করতে পারিনি বলেই ও অভিমান করে চলে গেল!
আমরা আমাদের সন্তানদের এ সবুজ ধরণীর সুশীতল ছায়াতলে রেখে যেতে চাই। ওদের জন্য এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতেই হবে। সবুজ প্রকৃতি গড়তে পারি আমরাই। কেবল প্রয়োজন আমাদের লোভাতুর হাতকে সংযত করা। উজাড় করা বনভূমি আবার গড়ে তোলা। তবে আসুন বেশি বেশি গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই। শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষমেলা-২০১১। তাই আর দুটি কথা না বললেই নয়। প্রতি বছর বৃক্ষমেলা বসে। আমিও ঘুরে ঘুরে দেখি, তবে যে জিনিস বেশি নজরে এসেছে তা হলো_ এ সময় অনেক লোকের সমাগম ঘটে, তবে বেশিরভাগ শৌখিন ক্রেতা। মেলার দোকানগুলোও দেশি ফলদ গাছের চেয়ে বিদেশি (থাই, ইন্ডিয়ান, চায়না) গাছের বাহারি সৌন্দর্যে ছেয়ে যায়। হয়তো শহুরে মানুষের বেলকুনি, বারান্দা, ছাদের শোভাবর্ধন করে এসব গাছ। তবে সত্যিকারভাবে পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলন পুরনো হয় কি?
সঠিক স্থান নির্বাচন, মাটি নির্বাচন এমনকি গাছ নির্বাচনেও ভুল করি আমরা। দেখা যায়, একই জায়গায় প্রতি বছরই ঘন ঘন সারিতে একই ধরনের গাছ লাগাই। যেন লাগানো পর্যন্তই দায়িত্ব শেষ। তাই গাছ লাগানোতে আমাদের সঠিক জ্ঞান ধারণ করাটা বেশ জরুরি। সে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্ত, দুর্লভ গাছগুলোও টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আগে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শিমুল গাছ থাকত। শিমুল তুলা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটত, এখন প্রয়োজনের স্থানটি দখল করেছে গার্মেন্সের ঝুট দিয়ে তৈরি কৃত্রিম তুলা। তাই হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল তুলা। প্রয়োজনের কথা নাইবা তুললাম। এর সৌন্দর্য কি ভুলে থাকা যায়? তেমনিভাবে এর সহজাত মান্দার গাছ, হিজল-তমাল, বাবলা-খৈয়া বাবলা, জিয়ল, পিটালি, উড়ি আম, গাব, গোলাপ জাম এখনকার প্রজন্ম চেনে কি? গোলাপ নামেরও এক ধরনের ফল ছিল। ছেলেরা মার্বেলের বিকল্প হিসেবে খেলত বলে বড়দের হাতের কত কানমলা আর তিরস্কার শুনত অথচ এখন সে ফল দেখিই না! এ ফল দিয়ে তেল তৈরি হতো বলে এর বাজারদর ছিল, গাছেরও কদর ছিল। তেমনি রয়না নামের একটি ফলও বিক্রি হতো, বিক্রি হতো ভেন্না নামের ফলও। ভেন্না দিয়ে তেল বানানো হতো। এমনিভাবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই কিছু না কিছু পরিচিত গাছ আছে, যা আজ হারিয়ে গেছে। তাই এসব গাছ সংরক্ষণ করা এবং এখনও যা রয়েছে তার পরিচিতি বাড়িয়ে তোলা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। গাছ যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তেমনি ব্যবহারিক চাহিদাও পূরণ করে। তাই আসুন, বাড়িঘরের পাশে, খোলা প্রান্তরে, গ্রামের কাঁচা সড়কের দু'পাশে, শহুরে সড়কের আইল্যান্ড কিংবা ফাঁকা সব স্থান ভরিয়ে তুলি সবুজ বৃক্ষে। ব্যাপক প্রচার-প্রসারে ছড়িয়ে যাক গাছের সুশীতল ছায়া। গাছ হোক আমাদের সন্তানের মতো, গাছ হোক আমাদের টিকে থাকার অবলম্বন। গাছ বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচলে আমরাও বাঁচব।
nazneentowhid@gmail.com
বছর দুই আগে একটি মেয়ের পরীক্ষার খাতায় লেখা 'পরিবেশ দূষণ' রচনা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, ছোটরাও এত বড় করে ভাবে? যখনই আমি পরিবেশের কথা ভাবি, আমার ভাবনার মাঝে সে মেয়েটির ছায়া হা-হা করে বলে ওঠে, ঠেকাও তোমরা পরিবেশ দূষণ, আমরা বাঁচতে চাই, ফিরিয়ে দাও সবুজ অরণ্য আমায়! কোনো এক কারণে মেয়েটি পৃথিবীর ওপর অভিমান করে চলে গেছে। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় এ পৃথিবীকে আমরা ওর বাসযোগ্য করতে পারিনি বলেই ও অভিমান করে চলে গেল!
আমরা আমাদের সন্তানদের এ সবুজ ধরণীর সুশীতল ছায়াতলে রেখে যেতে চাই। ওদের জন্য এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতেই হবে। সবুজ প্রকৃতি গড়তে পারি আমরাই। কেবল প্রয়োজন আমাদের লোভাতুর হাতকে সংযত করা। উজাড় করা বনভূমি আবার গড়ে তোলা। তবে আসুন বেশি বেশি গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই। শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষমেলা-২০১১। তাই আর দুটি কথা না বললেই নয়। প্রতি বছর বৃক্ষমেলা বসে। আমিও ঘুরে ঘুরে দেখি, তবে যে জিনিস বেশি নজরে এসেছে তা হলো_ এ সময় অনেক লোকের সমাগম ঘটে, তবে বেশিরভাগ শৌখিন ক্রেতা। মেলার দোকানগুলোও দেশি ফলদ গাছের চেয়ে বিদেশি (থাই, ইন্ডিয়ান, চায়না) গাছের বাহারি সৌন্দর্যে ছেয়ে যায়। হয়তো শহুরে মানুষের বেলকুনি, বারান্দা, ছাদের শোভাবর্ধন করে এসব গাছ। তবে সত্যিকারভাবে পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলন পুরনো হয় কি?
সঠিক স্থান নির্বাচন, মাটি নির্বাচন এমনকি গাছ নির্বাচনেও ভুল করি আমরা। দেখা যায়, একই জায়গায় প্রতি বছরই ঘন ঘন সারিতে একই ধরনের গাছ লাগাই। যেন লাগানো পর্যন্তই দায়িত্ব শেষ। তাই গাছ লাগানোতে আমাদের সঠিক জ্ঞান ধারণ করাটা বেশ জরুরি। সে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া বিলুপ্ত, দুর্লভ গাছগুলোও টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আগে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শিমুল গাছ থাকত। শিমুল তুলা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটত, এখন প্রয়োজনের স্থানটি দখল করেছে গার্মেন্সের ঝুট দিয়ে তৈরি কৃত্রিম তুলা। তাই হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল তুলা। প্রয়োজনের কথা নাইবা তুললাম। এর সৌন্দর্য কি ভুলে থাকা যায়? তেমনিভাবে এর সহজাত মান্দার গাছ, হিজল-তমাল, বাবলা-খৈয়া বাবলা, জিয়ল, পিটালি, উড়ি আম, গাব, গোলাপ জাম এখনকার প্রজন্ম চেনে কি? গোলাপ নামেরও এক ধরনের ফল ছিল। ছেলেরা মার্বেলের বিকল্প হিসেবে খেলত বলে বড়দের হাতের কত কানমলা আর তিরস্কার শুনত অথচ এখন সে ফল দেখিই না! এ ফল দিয়ে তেল তৈরি হতো বলে এর বাজারদর ছিল, গাছেরও কদর ছিল। তেমনি রয়না নামের একটি ফলও বিক্রি হতো, বিক্রি হতো ভেন্না নামের ফলও। ভেন্না দিয়ে তেল বানানো হতো। এমনিভাবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই কিছু না কিছু পরিচিত গাছ আছে, যা আজ হারিয়ে গেছে। তাই এসব গাছ সংরক্ষণ করা এবং এখনও যা রয়েছে তার পরিচিতি বাড়িয়ে তোলা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। গাছ যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তেমনি ব্যবহারিক চাহিদাও পূরণ করে। তাই আসুন, বাড়িঘরের পাশে, খোলা প্রান্তরে, গ্রামের কাঁচা সড়কের দু'পাশে, শহুরে সড়কের আইল্যান্ড কিংবা ফাঁকা সব স্থান ভরিয়ে তুলি সবুজ বৃক্ষে। ব্যাপক প্রচার-প্রসারে ছড়িয়ে যাক গাছের সুশীতল ছায়া। গাছ হোক আমাদের সন্তানের মতো, গাছ হোক আমাদের টিকে থাকার অবলম্বন। গাছ বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচলে আমরাও বাঁচব।
nazneentowhid@gmail.com
No comments