সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের শিক্ষা by আলী হাসান তৈয়ব

আমরা শুধু সন্তানের দৈহিক চাহিদারই তত্ত্বাবধান করি। তার আত্মিক চাহিদার প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করি না। অথচ এর গুরুত্ব প্রথমোক্তটির চেয়ে বেশি ছাড়া কম নয়। দৈহিক চাহিদাকে পরিতৃপ্তি দিতে পারে আত্মা। পক্ষান্তরে দৈহিক চাহিদার অপূর্ণতা সত্ত্বেও আত্মা পারে সুখী হতে। ইসলাম তাই সন্তানের উভয় চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।


মা-বাবাকে উভয় দিক তত্ত্বাবধান করতে নির্দেশ ও নির্দেশনা দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, 'হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।' _তাহরীম : ৬
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আলী (রা.) বলেন, 'অর্থাৎ তাদেরকে আদব শিক্ষা দাও এবং ইলম শেখাও।' (ইবনে কাসির, উলিল্গখিত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমাদের সন্তানদের সাত বছর হলে তাদের নামাজের নির্দেশ দাও, তাদের বয়স দশ বছর হলে এ জন্য তাদের শাসন করো এবং তাদের পরস্পরের বিছানা পৃথক করে দাও।' _আবু দাউদ
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, 'জেনে রাখ, সন্তান প্রতিপালন পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মা-বাবার কাছে সন্তান আমানতস্বরূপ। তাকে ভালোয় অভ্যস্ত করা হলে, সুশিক্ষায় প্রতিপালন করলে, সেভাবেই সে গড়ে উঠবে। ইহকালে ও পরকালে সে হবে সুখী। পক্ষান্তরে তাকে খারাপে অভ্যস্ত করা হলে, তাকে পশুর ন্যায় অবহেলা করা হলে, সে হবে হতভাগ্য ও ধ্বংসপ্রাপ্ত। তাকে রক্ষা করার উপায় হলো, মা-বাবা তাকে শিষ্টাচারসম্পন্ন, সভ্য ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী বানাবে এবং তাকে অসৎ সঙ্গ থেকে বিরত রাখবে। তার মাঝে বুদ্ধির উন্মেষ লক্ষ্য করা মাত্র উত্তমরূপে তাকে পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান শুরু করবে।' _ইহয়াউ উলুমিদ্দীন : ৩/৬২
বুদ্ধির এ উন্মেষের সূচনা লাজুকতার প্রাথমিক প্রকাশের মাধ্যমে। যখন সে লজ্জা পায়, সলাজ হয় এবং কোনো কিছু বর্জন করে, তা কেবল তার ওপর জ্ঞানের আলো পড়ার কারণেই করে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি তার জন্য একটি উপহার এবং সুসংবাদস্বরূপ। যা তার স্বভাবের সুস্থতা ও হৃদয়ের স্বচ্ছতাকে প্রমাণ করে। পরিণত বয়সে তার বোধের পূর্ণতারও ইঙ্গিত এটি। সুতরাং শিশুর লাজুকতাকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয়। বরং তাকে সুশিক্ষিত ও মার্জিতভাবে গড়ে তুলতে এ লাজুকতা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিপালনের প্রাথমিক অবস্থায় যদি শিশুর প্রতি অযত্ন ও অনাদর দেখানো হয়, তবে প্রায় ক্ষেত্রেই সে অসৎ স্বভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে। মিথ্যুক, হিংসুক, নিন্দুক হিসেবে এবং অনর্থক কথা, অট্টহাসি, কূটচাল ও অশ্লীল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে বড় হয়। শিশুকে এসব বদভ্যাস থেকে বাঁচানো সম্ভব আদব ও শিষ্টাচার শেখানোর মাধ্যমে। তাকে পাঠাতে হবে মক্তবে। সেখানে সে কোরআন-হাদিস শিখবে। পূর্বসূরি বুজুর্গ ও মনীষীদের শিক্ষণীয় ঘটনাবলি ও জীবনালেখ্য সম্পর্কে জানবে। এতে করে তার কচি মনে নেককার ও মনীষীদের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা জন্ম নেবে। শিশুর কোনো সুন্দর আচরণ বা প্রশংসনীয় কাজ চোখে পড়লে তার প্রশংসা করতে হবে। তাকে খুশি করার মতো কিছু পুরস্কার দিতে হবে। মানুষের সামনে করতে হবে তার প্রশংসা। এর ব্যতিক্রম করে যখন কিছু সে প্রথমবারের মতো করবে, তখন তা উপেক্ষা করতে হবে। গোপন রাখতে হবে; অন্যের সামনে প্রকাশ করা যাবে না। বিশেষত বাচ্চাটিই চাইবে সেটিকে গোপন রাখতে। অন্যের কাছ থেকে আড়াল করতে। যদি দ্বিতীয়বার এ কাজের পুনরাবৃত্তি করে, তবে তাকে গোপনেই শাসাতে হবে। বলে দিতে হবে, এমন কাজ তুমি দ্বিতীয়বার করা থেকে বিরত থাকবে। অন্যথায় মানুষের সামনে তোমাকে লজ্জা দেওয়া হবে। শাসন করতে গিয়ে কখনও অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে তার পক্ষে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার শোনা এবং মন্দ বিশেষণ হজম করা সহনীয় হয়ে উঠবে। তার অন্তরে কথার প্রভাব হ্রাস পাবে। তার ভেতরে কথার এ প্রভাব যে কোনো মূল্যে বজায় রাখতে হবে।
alihasantaib@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.