উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে by ফসীহ্ বণিক
পশ্চিমবঙ্গের তারা টিভি চ্যানেলের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানটিতে উপস্থাপিকার সঙ্গে সচরাচর একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিককে অংশ নিতে দেখা যায়। সোমবারও তিনি ছিলেন। ভদ্রলোক মাঝে মধ্যে এমন কিছু বিষয়ের পর্যালোচনা করেন, যা কেবল নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পক্ষেই সম্ভব। ফলে মাঝে মধ্যে তার আলোচনা বিরক্তিকর ঠেকে।
সোমবারের পর্যালোচনায় তিনি অনেক প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে গিয়ে ভারতে চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রামদেব, আন্না হাজারেসহ নাগরিক আন্দোলনের ব্যাপকতার বিষয়টি তুলে ধরে তা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সমাজের অনুকূল নয় বলে রায় দিয়ে বসলেন। তার কথার সারমর্ম হলো, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদ, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন এবং ফোর্থ স্টেট হিসেবে মিডিয়া থাকতে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নাগরিক সমাজের নামে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। তার মতে, রামদেব ও আন্না হাজারের আন্দোলন রাস্তায় এজিটেশনের মাধ্যমে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে অবদান রাখবে মাত্র। কেউ কেউ অবশ্য রামদেবের সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু আন্না হাজারের তো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সংস্রব নেই। এখানে তাকেও রাজনীতির সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করাটা ভারতের করপোরেট হাউস এবং শাসক দল ও জোটের জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা ছাড়া আর কি!
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সাংবাদিক হয়তো বিস্মৃত হয়েছেন যে, তিনি যে ফোর্থ স্টেটের প্রতিনিধি সেখানে সিভিল সোসাইটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি রাজনৈতিক দল পর্যন্ত তারই অংশ। আর সুশাসনের যেখানেই ঘাটতি রয়েছে, সেখানেই নাগরিক সমাজকে সামনে এগিয়ে আসতে হয়। ভারতের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি দূর করার জন্য সংসদ যেহেতু দীর্ঘদিন থেকেই লোকপাল বিল উত্থাপন করতে পারেনি, তখনই নাগরিক আন্দোলন সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করতে এগিয়ে গেছে। তাছাড়া কে বলেছে যে, গণতন্ত্রে শক্তিশালী নাগরিক আন্দোলনের প্রয়োজন নেই! তাহলে এক সময় গ্রিন আন্দোলন গোটা ইউরোপকে নাড়া দিয়েছিল কী করে! উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বেই এমন অনেক নাগরিক আন্দোলনের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে, যেগুলোর পরিণতিতে নির্দিষ্ট দেশের সংসদে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আইন পাস হয়েছে। সুতরাং ভারতে আন্না হাজারে বা অরুন্ধতী রায়দের বিভিন্ন সময়ের নাগরিক আন্দোলন সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। বরং শাসক-প্রশাসকদের সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে বাধ্য করেছে।
এই একই ধরনের ব্যামো আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে। যারা বিভিন্ন সময়ে নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের নানাভাবে নাজেহাল করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আসলে যারা ক্ষমতায় থাকেন এবং যারা অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে অনেক সময়েই নাগরিক আন্দোলনকে বাড়তি উপদ্রব বলে মনে হয়। কিন্তু এই নাগরিক আন্দোলন যদি না থাকত তাহলে নদীখেকোদের আগ্রাসন থেকে নদী রক্ষার জন্য জনসচেতনতা আদৌ গড়ে উঠত কি? আসলে সামাজিক বা নাগরিক আন্দোলনগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্বার্থ গ্রুপগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপকে ক্ষমতাসীনরা যখন নিজেদের ভুলত্রুটি শোধরানোর হাতিয়ার করেন এবং অধিকতর সুশাসন প্রদানে সচেষ্ট হন, তখনই ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। অন্যথায় হাঙ্গামা-হুজ্জত সৃষ্টি হতেই পারে। এ জন্য নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে দায়ী করা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর শামিল।
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ সাংবাদিক হয়তো বিস্মৃত হয়েছেন যে, তিনি যে ফোর্থ স্টেটের প্রতিনিধি সেখানে সিভিল সোসাইটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি রাজনৈতিক দল পর্যন্ত তারই অংশ। আর সুশাসনের যেখানেই ঘাটতি রয়েছে, সেখানেই নাগরিক সমাজকে সামনে এগিয়ে আসতে হয়। ভারতের পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি দূর করার জন্য সংসদ যেহেতু দীর্ঘদিন থেকেই লোকপাল বিল উত্থাপন করতে পারেনি, তখনই নাগরিক আন্দোলন সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করতে এগিয়ে গেছে। তাছাড়া কে বলেছে যে, গণতন্ত্রে শক্তিশালী নাগরিক আন্দোলনের প্রয়োজন নেই! তাহলে এক সময় গ্রিন আন্দোলন গোটা ইউরোপকে নাড়া দিয়েছিল কী করে! উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বেই এমন অনেক নাগরিক আন্দোলনের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে, যেগুলোর পরিণতিতে নির্দিষ্ট দেশের সংসদে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আইন পাস হয়েছে। সুতরাং ভারতে আন্না হাজারে বা অরুন্ধতী রায়দের বিভিন্ন সময়ের নাগরিক আন্দোলন সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। বরং শাসক-প্রশাসকদের সুশাসন ও নাগরিক অধিকারের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে বাধ্য করেছে।
এই একই ধরনের ব্যামো আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে। যারা বিভিন্ন সময়ে নাগরিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের নানাভাবে নাজেহাল করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আসলে যারা ক্ষমতায় থাকেন এবং যারা অনৈতিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে অনেক সময়েই নাগরিক আন্দোলনকে বাড়তি উপদ্রব বলে মনে হয়। কিন্তু এই নাগরিক আন্দোলন যদি না থাকত তাহলে নদীখেকোদের আগ্রাসন থেকে নদী রক্ষার জন্য জনসচেতনতা আদৌ গড়ে উঠত কি? আসলে সামাজিক বা নাগরিক আন্দোলনগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্বার্থ গ্রুপগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপকে ক্ষমতাসীনরা যখন নিজেদের ভুলত্রুটি শোধরানোর হাতিয়ার করেন এবং অধিকতর সুশাসন প্রদানে সচেষ্ট হন, তখনই ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। অন্যথায় হাঙ্গামা-হুজ্জত সৃষ্টি হতেই পারে। এ জন্য নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে দায়ী করা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর শামিল।
No comments