পাটের সম্ভাবনা-দেশেও ব্যবহার বাড়াতে হবে
বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাট কৃষকের জন্য অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃত। তবে কাঁচা পাট ও পাটজাত নানা ধরনের পণ্যের প্রধান বাজার কিন্তু দেশের বাইরে। এ বাজার চাঙ্গা থাকলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে_ তারা পাটের ভালো দাম পায়। ফলন বাড়াতে উৎসাহী হয়।
আর বাজার মন্দা থাকলে দাম কখনও কখনও এতটাই পড়ে যায় যে কৃষককে পাটে আগুন দিয়ে পর্যন্ত ক্ষোভ-রোষ-হতাশার প্রকাশ ঘটাতে হয়। আন্তর্জাতিক পাট স্টাডি গ্রুপ জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে পরিবেশবান্ধব পাটের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে একদিকে আরও মানসম্পন্ন পাট উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে; অন্যদিকে চাই মিলগুলোতে বৈচিত্র্যময় পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো। উভয় ক্ষেত্রেই দামের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ বাজারে প্রতিযোগী অনেক। বাংলাদেশেরই একজন বিজ্ঞানীর চেষ্টায় পাটের জিন-রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় পাটের ফলন ও গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্য অর্জনের পথ সুগম হয়েছে। এখন প্রয়োজন গবেষণার সাফল্য কৃষকের মাঠে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। এ জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো যেমন অপরিহার্য, তেমনি চাই সহায়ক নীতি ও কর্মকৌশল। গবেষণা কাজেও মনোযোগী হতে হবে। এর পাশাপাশি চাই জুট মিলে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদনে বহুমুখিনতা আনা। আন্তর্জাতিক পাট স্টাডি গ্রুপের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে ২১ মে এ সংস্থার মহাসচিব ভূপেন্দ্র সিং ঢাকায় বলেছেন, বিশ্বে কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বাজার সম্প্রসারণের এখনই সময়। তার এ বক্তব্যে পরিতৃপ্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকার সময় নেই। কারণ বাজার আপনাআপনি সৃষ্টি হয় না। ধরেও রাখা যায় না। এ জন্য সচেতন চেষ্টা চালাতে হয়। এখন সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই রয়েছে জুট মিল। বাজার সম্প্রসারণে যৌথ উদ্যোগ তাই প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে দেশেও পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বাড়াতে যত্নবান হতে হবে। সিনথেটিকের কারণেই আমরা পাটের বাজারে বড় ধাক্কা খেয়েছি। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকেই বিশ্বের বহু দেশ ফের নজর দিয়েছে পরিবেশবান্ধব পাটের দিকে। কিন্তু আমরা নিজেরা কি সেটা যথাযথভাবে করতে পেরেছি? 'আপনি আচরি ধর্ম'_ এ প্রবাদের কথা আমরা জানি। কিন্তু বাংলাদেশ নিজে কি সেটা করছে?
No comments