স্মৃতিচারণ-জেনারেল মুস্তাফিজের ভারত সফর by মোঃ আইনুল ইসলাম খান
ভারত সফরকালে জেনারেল মুস্তাফিজ প্রধান অতিথি হিসেবে দেরাদুনে ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীর একটি ব্যাচের ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, বীরবিক্রম, এনডিসি,
পিএসসি ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বেদ প্রকাশ মালিক এবং দেরাদুনে ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীর কমান্ড্যান্টের আমন্ত্রণে ১৯৯৮ সালের ৭ থেকে ১৩ ডিসেম্বর ভারত সফর করেন। সাবেক সেনাপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী বেগম রাশিদা মুস্তাফিজ এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল।
নয়াদিলি্ল যাওয়ার পথে কলকাতা পেঁৗছলে বাংলাদেশ সেনাপ্রধানকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের তৎকালীন জিওসি ইন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল কালকাট স্বাগত জানান। জেনারেল মুস্তাফিজ কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টার্ন কমান্ড সদর দফতর পরিদর্শন করেন। একই দিন সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিলি্ল পেঁৗছান। জেনারেল মুস্তাফিজ নয়াদিলি্লর ইন্ডিয়া গেটে সে দেশের বীর যোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত 'অমর জওয়ান জ্যোতি'তে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
ভারত সফরকালে জেনারেল মুস্তাফিজ প্রধান অতিথি হিসেবে দেরাদুনে ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীর একটি ব্যাচের ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, এই প্রথম বাংলাদেশের একজন সেনাবাহিনী প্রধান বিদেশের কোনো মিলিটারি একাডেমীর শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হওয়ার সম্মান অর্জন করেন, যা শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্যই নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মানের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান নয়াদিলি্লতে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমএস বসুন্ধরার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। তিনি তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বেদ প্রকাশ মালিক, নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান এডমিরাল বিষ্ণু ভাগওয়াতসহ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশিল্গষ্ট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। আলোচনাকালে ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'কোনো বিষয়ে যাতে কোনোরূপ সংশয় বা আশঙ্কা স্থায়ী হতে না পারে' সে লক্ষ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অধিকতর চ্যানেল চালুর প্রস্তাব দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মুস্তাফিজের সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজসভারও আয়োজন করেন। সেখানে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐক্যের কথা উলেল্গখ করেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্ষ-বীর্যের কথাও স্মরণ করেন।
জেনারেল মুস্তাফিজ সিমলায় সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ কমান্ড পরিদর্শন করেন। তিনি জয়পুরে যান এবং সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। তিনি আজমিরে হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতির (রহ.) দরগাহ শরিফে গিয়েও মোনাজাত করেন।
জেনারেল মুস্তাফিজের এই সফর এবং তার ও ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত দু'দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
যখন আমাদের সেনাপ্রধান ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন, তখন গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। তখন আমি ছিলাম ক্যাপ্টেন পদবির নতুন অফিসার। বিশাল আয়তনের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে এমন সম্মান দেখানো সত্যিই একটি বিরল উদাহরণ। এর পেছনে সম্ভাব্য অনেক কারণের কিছু কারণ হতে পারে নিম্নরূপ : ক. বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মুস্তাফিজ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। খ. প্রতিবেশী দু'দেশের সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সম্পর্কোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। গ. বড় ও শক্তিশালী হয়েও ভারত বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে, যা থেকে তারা (বড়) আমাদের শেখাতে চেয়েছে। 'লোকে যাকে বড় বলে বড় সে-ই হয়।'
বিগত ১১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখের ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত 'টুয়ার্ডস এ নিউ পাথ' এবং ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত 'নতুন দিনের প্রত্যাশায়' শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ আমাকে খুব আশান্বিত করেছে। সংক্ষেপে বলি : প্রবন্ধ দুটিতে বলা হয়েছে, ইউরোপে প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরও সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আজ একটি বিশাল সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি। তাদের ভিসা প্রথাও সহজ এবং ব্যয়বহুল নয়। আমরাও আশা করি, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটবে। আমরা একে অপরের ভালো বিষয়গুলো জেনে পরবর্তী প্রজন্মকে জানাব, আরও জ্ঞানী ও মানবিক হবো_ সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
মেজর (অব.) মোঃ আইনুল ইসলাম খান : সাবেক সেনা কর্মকর্তা
নয়াদিলি্ল যাওয়ার পথে কলকাতা পেঁৗছলে বাংলাদেশ সেনাপ্রধানকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের তৎকালীন জিওসি ইন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল কালকাট স্বাগত জানান। জেনারেল মুস্তাফিজ কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টার্ন কমান্ড সদর দফতর পরিদর্শন করেন। একই দিন সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিলি্ল পেঁৗছান। জেনারেল মুস্তাফিজ নয়াদিলি্লর ইন্ডিয়া গেটে সে দেশের বীর যোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত 'অমর জওয়ান জ্যোতি'তে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।
ভারত সফরকালে জেনারেল মুস্তাফিজ প্রধান অতিথি হিসেবে দেরাদুনে ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীর একটি ব্যাচের ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, এই প্রথম বাংলাদেশের একজন সেনাবাহিনী প্রধান বিদেশের কোনো মিলিটারি একাডেমীর শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হওয়ার সম্মান অর্জন করেন, যা শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্যই নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মানের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান নয়াদিলি্লতে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমএস বসুন্ধরার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। তিনি তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বেদ প্রকাশ মালিক, নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান এডমিরাল বিষ্ণু ভাগওয়াতসহ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশিল্গষ্ট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। আলোচনাকালে ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'কোনো বিষয়ে যাতে কোনোরূপ সংশয় বা আশঙ্কা স্থায়ী হতে না পারে' সে লক্ষ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অধিকতর চ্যানেল চালুর প্রস্তাব দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মুস্তাফিজের সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজসভারও আয়োজন করেন। সেখানে তিনি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐক্যের কথা উলেল্গখ করেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্ষ-বীর্যের কথাও স্মরণ করেন।
জেনারেল মুস্তাফিজ সিমলায় সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ কমান্ড পরিদর্শন করেন। তিনি জয়পুরে যান এবং সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। তিনি আজমিরে হজরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতির (রহ.) দরগাহ শরিফে গিয়েও মোনাজাত করেন।
জেনারেল মুস্তাফিজের এই সফর এবং তার ও ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত দু'দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
যখন আমাদের সেনাপ্রধান ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন, তখন গর্বে আমার বুক ভরে ওঠে। তখন আমি ছিলাম ক্যাপ্টেন পদবির নতুন অফিসার। বিশাল আয়তনের প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে এমন সম্মান দেখানো সত্যিই একটি বিরল উদাহরণ। এর পেছনে সম্ভাব্য অনেক কারণের কিছু কারণ হতে পারে নিম্নরূপ : ক. বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মুস্তাফিজ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। খ. প্রতিবেশী দু'দেশের সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সম্পর্কোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। গ. বড় ও শক্তিশালী হয়েও ভারত বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে, যা থেকে তারা (বড়) আমাদের শেখাতে চেয়েছে। 'লোকে যাকে বড় বলে বড় সে-ই হয়।'
বিগত ১১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখের ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত 'টুয়ার্ডস এ নিউ পাথ' এবং ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত 'নতুন দিনের প্রত্যাশায়' শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ আমাকে খুব আশান্বিত করেছে। সংক্ষেপে বলি : প্রবন্ধ দুটিতে বলা হয়েছে, ইউরোপে প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরও সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আজ একটি বিশাল সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি। তাদের ভিসা প্রথাও সহজ এবং ব্যয়বহুল নয়। আমরাও আশা করি, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্কের আরও উন্নয়ন ঘটবে। আমরা একে অপরের ভালো বিষয়গুলো জেনে পরবর্তী প্রজন্মকে জানাব, আরও জ্ঞানী ও মানবিক হবো_ সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
মেজর (অব.) মোঃ আইনুল ইসলাম খান : সাবেক সেনা কর্মকর্তা
No comments