নারীর প্রতি অবিচার by মোঃ ফিরোজ সোহাগ

কি টিভি চ্যানেলের খবর, কি এফএম রেডিও, কি দৈনিক পত্রিকাগুলোর শিরোনাম_ নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন যেন বাংলাদেশের অন্য নামরূপে প্রকাশিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা থেকে শুরু করে গৃহকর্মী পর্যন্ত নির্যাতন-নিপীড়ন আজ যেন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে।


সামাজিক সচেতনতা ও নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে প্রতিটি জেলায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানববন্ধন, সভা বা সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে। ডাক বিভাগের খাম থেকে শুরু করে পরিত্যক্ত দেয়াল পর্যন্ত যৌতুক বা নারী নির্যাতনবিরোধী স্লোগানের অবস্থান থাকলেও প্রতিদিনই এর শিকার হচ্ছে কেউ না কেউ। যৌতুক নামক শব্দটি যেন নারী জীবনের স্বাভাবিক স্বপ্নগুলো ভাঙার জন্যই যথেষ্ট। পারিবারিক নির্যাতন, সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলা, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা_ সবই যেন বাংলাদেশের নারীদের ভাগ্যে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত খবরে বলা হয়, থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী আফগানিস্তান নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে কঙ্গো, পাকিস্তান, ভারত ও সোমালিয়ার অবস্থান। এই জরিপ মূলত নারীর প্রতি উচ্চমাত্রার সহিংসতা, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা, দরিদ্রতা, বাল্যবিয়ে, নারী পাচার, মেয়ে ভ্রূণ হত্যা ইত্যাদির ভিত্তিতে করা হয়। এই কারণগুলো আফগানিস্তানকে শীর্ষস্থান দিয়েছে একটি যুদ্ধাক্রান্ত রাষ্ট্র হিসেবে। কোনো যুদ্ধ ছাড়াই সেসব কারণের কোনোটাই কম নেই বাংলাদেশে; কিন্তু বাংলাদেশ এ জরিপের ওপরের দিকে না থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ নারীদের জন্য বিপজ্জনক রাষ্ট্র হিসেবে শীর্ষস্থান যে দখল করবে তেমন শঙ্কা রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু অপ্রাপ্তির পাশাপাশি সামাজিক অবিচার এবং গ্রাম পর্যায়ের অথর্ব বিচার এ আশঙ্কাকে আরও ত্বরান্বিত করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ছোঁয়া আর শিক্ষার হার বাড়লেও থেমে থাকছে না নারীর প্রতি অবিচারের পরিমাণও। সময়ের দৌড়ের পাশাপাশি আধুনিকতার প্রচলন বেড়ে চললেও অতীতের বর্বরতাও সমানভাবে প্রচলিত। কি শহর, কি গ্রাম, কি শিক্ষিত-অশিক্ষিত_ নারীর প্রতি তারা তাদের কুমনোভাব ও কুআচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। পর্যাপ্ত আধুনিক মনোভাব তাদের এ বিপথে ঠেলে দিচ্ছে, নাকি পৌরাণিক মনোভাব তাদের এখনও আচ্ছন্ন করে রেখেছে, সেটাই জানার বিষয়। মানসিকতার ঘাটতি, নাকি মানবিকতার অপ্রাপ্তি, বর্তমান সমাজে নারীর মর্যাদা বা নূ্যনতম অধিকার 'ভালো থাকা'কে শঙ্কিত করে তুলেছে_ এটিও একটি প্রশ্ন। সাহেদা ও অমি হত্যারহস্যসহ বিভিন্ন মৃত্যুরহস্য শুধু রহস্যই এবং পত্রিকার সংবাদ হয়েই যেন ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে আইন-শৃঙ্খলার জোরালো প্রয়োগ নারীর প্রতি সহিংসতা কমানোর জন্য যেমন যথেষ্ট তেমনি প্রয়োজন মানসিকতা ও মানবিকতার উন্নতি। শুধু সংসদে নারীর আসন ৩০ থেকে ৪৫-এ বাড়ালে ও নারীনীতি প্রণয়ন করলে কিংবা নারীদের অধিকার আদায়ের কথা বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই নারীরা তাদের অধিকার ও বিভিন্ন সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবে না। এ জন্য প্রয়োজন আইনের কঠোরতম প্রয়োগ, নারীর প্রতি উন্নত মনোভাব এবং সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের মানবিক সহানুভূতি।
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.