আবার সেই আশঙ্কা-সংলাপ-সমঝোতাই সমাধানের পথ

আবার সেই অশুভ শক্তির আশঙ্কা! পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য বাক্য উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন, তা একেবারেই অমূলক নয়। তাঁর এই আশঙ্কা সত্যি হলে সেটা হবে দেশের জন্য এক মহাবিপর্যয়। গণতন্ত্র আবার নির্বাসনে যাবে। সংবিধান স্থগিত রেখে চেপে বসবে অপশক্তি।


নেমে আসবে অবদমন। তাতে বাধাগ্রস্ত হবে গণতন্ত্রের বিকাশ। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
বুধবার পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি উল্লেখ করেছেন, 'বিএনপি এখনো বুঝতে পারছে না, মাইনাস টু এখনো শেষ হয়নি। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে যে ষড়যন্ত্র শেষ হয়েছে, তা নয়। যারা এটা করতে চেয়েছিল, তারা এখনো সক্রিয়।' এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা তুলে এনেছেন। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। মানতে হবে, রাজনৈতিক কারণেই এ দেশে দুই বছর মেয়াদি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরণ ঘটেনি বলেই আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে আমাদের।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতা থেকে আশা করা গিয়েছিল, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় বা ব্যক্তিগত ক্ষুদ্রস্বার্থ নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হবে। দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের কল্যাণে পরিচালিত হবে রাজনীতি। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ভাঙচুর, হরতাল, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। বিঘি্নত হচ্ছে উৎপাদন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। বিদেশে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। দেশের কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলো একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে পারছে না। 'দেখতে নারি, চলন বাঁকা' নীতি নিয়ে চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড। নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করে অন্যের কাছে নালিশ জানানোর মধ্যেই যেন অনেকের কৃতিত্ব। এই সুযোগে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমাদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বিদেশিদের। এতে দেশের মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পারস্পরিক দোষারোপ কোনো কল্যাণ বয়ে আনছে না।
এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা এখন উচ্চারিত হচ্ছে সবার মুখে। বিদেশি উপদেশদাতারা তো বটেই, নাগরিক সমাজও নিজেদের মধ্যে একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়েছে। যেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা এই যে পরস্পরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ, সেখানে একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা কঠিন। তবু এর বিকল্পও নেই। নিজেদের অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে এই সমাধানসূত্রে আসা যাবে না। এর জন্য ছাড় দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বুঝতে হবে দেশের স্বার্থ। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার রাজনীতি পরিহার করতে না পারলে সামনে যে সমূহ অমঙ্গল, সেটা সবাই অনুধাবন করতে পেরেছেন। নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এখন একটি সমাধানসূত্রের পক্ষে। এই সমাধানসূত্র খুঁজে বের করার একমাত্র পথ সংলাপ। সংকট থেকে মুক্তি পেতে সংলাপের কোনো বিকল্প এখন আর নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের ভেতর দিয়ে সংকট উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
সংলাপ তখনই সফল হবে, যখন দলগুলো শর্ত বাদ দিয়ে সংলাপে আগ্রহী হবে। নিজেদের মধ্যকার কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে না পারলে অপশক্তি সেই সুযোগটি নিতে পারে, আবারও অন্ধকার নেমে আসতে পারে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে- এ সত্যটি উপলব্ধি করার মতো মনন নিশ্চয় আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের আছে।

No comments

Powered by Blogger.