নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল-ইসিকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে
গণতান্ত্রিক সমাজে মতপ্রকাশ ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা থাকে। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অভিমত তুলে ধরা এবং রাজনৈতিক দল গঠনেও বাধা থাকার কথা নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকায় সেখানেও মতামত প্রকাশ করা চলে।
কিন্তু তাই বলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল বছরের পর বছর ধরে কোনো কার্যক্রম ছাড়াই 'অস্তিত্ব' বজায় রাখতে পারবে? শুক্রবার সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় 'কাজীর গরু কেতাবে...' শিরোনামের সংবাদে বেশকিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের নাম ছাপা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি দল আবার নির্বাচন কমিশনেও তালিকাভুক্ত। তারা সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় প্রতীক বরাদ্দও পেয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য অপরিহার্য কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছিল। সময়মতো দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান, বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ ও নির্বাচন কমিশনে দাখিল, কেন্দ্র-জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্দিষ্টসংখ্যক কমিটি ও কার্যালয় থাকা, সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের নূ্যনতমসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তি প্রভৃতি শর্তকে গণতান্ত্রিক মহল স্বাগত জানায়। এসব শর্ত যাতে পালিত হয় সে জন্য নির্বাচন কমিশন কঠোর মনোভাব গ্রহণ করবে বলেই আমরা আশা করব। নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত না হলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের সুযোগ থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। এমনকি তাদের অনিবন্ধিত দল হিসেবে পরিচয় প্রদানের সুযোগ থাকা সঙ্গত কি-না সেটাও বিবেচনা করা দরকার। প্রায়ই দেখা যায়, এসব দল গণমাধ্যমে অবাধ মতপ্রকাশের পরিবেশের সুযোগ গ্রহণ করে এবং নানা ইস্যুতে এমনকি বিভ্রান্তিও ছড়ায়। অনেক সময় এক বা একাধিক স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনেও তারা তৎপর হয়ে ওঠে। অগণতান্ত্রিক শাসন চাপিয়ে দিতে ইচ্ছুক শক্তির জন্যও এসব 'ব্যক্তিনির্ভর' ও 'প্যাডসর্বস্ব' দলকে হাতিয়ার হয়ে উঠতে দেখা গেছে। আবার বড় দলগুলোর 'জোট-মহাজোটের রাজনীতিতেও' এসব দল ভূমিকা রাখে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কোনো প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, এমনকি কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্তিশালী প্রার্থীও খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপরও রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা কেন স্বীকৃতি নিয়ে চলতে পারবে? এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দিক থেকেও সদর্থক ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। নাম-প্যাডসর্বস্ব দলের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের প্রকৃতপক্ষে কোনো লাভ হয় না। বরং গণতন্ত্রের ধারাই তাতে বিঘি্নত হয়। এটা কেউ বলবে না, ছোট ছোট দল বা গোষ্ঠী বড় দলে বিলীন হয়ে যাক। কিন্তু গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল গঠনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে এবং তার বাইরে যাওয়ার অবকাশ নেই। কোনো ব্যক্তি কিংবা কিছুসংখ্যক লোক যদি মনে করে যে, নানা ইস্যুতে তাদের অবস্থান তুলে ধরা জরুরি, তাহলে রাজনৈতিক দল গঠন না করেও সেটা তুলে ধরার সুযোগ গণতান্ত্রিক সমাজে রয়েছে। তারা প্রেশার গ্রুপ গঠন করে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করলে তা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্যও ইতিবাচক হতে পারে। আমাদের নাম ও প্যাডসর্বস্ব দলগুলো এ বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে তাদের করণীয় নির্ধারণ করবে_ এটাই প্রত্যাশিত। নির্বাচন কমিশনকেও এসব দলের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কার্যত অস্তিত্বহীন দলের সঙ্গে তারা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে বৈঠক করুক, এটা কাম্য নয়।
No comments