কাবিখা ও টিআর দুর্নীতি-গ্রামীণ উন্নয়নের পুরনো রোগ
গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) এবং গ্রামীণ মসজিদ-মন্দির ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য টেস্ট রিলিফের বরাদ্দ দেওয়া গম ও নগদ অর্থ নিয়ে দুর্নীতি এখন একপ্রকার গা সওয়া। কিন্তু এতে তৃণমূল পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের স্বপ্ন বরাবর অধরাই থেকে যায়।
তাই শহরের উন্নয়নের সঙ্গে গ্রামকে তাল মেলাতে হলে তাকে অনুন্নয়নের বা প্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ঘাটতিজনিত সমস্যার স্থায়ীভাবে সমাধান করতেই হবে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে টিআর ও কাবিখা, গম ও নগদ অর্থ বরাদ্দপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যায় পর্যন্ত স্থায়ীভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি ও অনিয়মের রাহুচক্রকে ভাঙতে হবে। এই দুঃসাধ্য হিতকর কাজটি কে বা কারা সম্পাদন করবে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। গত মঙ্গলবার সমকালের লোকালয় পাতায় বগুড়ায় কাবিখা ও টিআরের গম ও নগদ অর্থ নিয়ে কী ধরনের দুর্নীতি হয়েছে ও হচ্ছে তার একটি খণ্ডচিত্র প্রকাশ পেয়েছে। রিপোর্টে দেখা যায়, জেলার বরাদ্দকৃত ২২ কোটি টাকার অর্ধেকই লোপাট হয়ে গেছে। অনেক প্রকল্পের কাজ নামমাত্র শুরু করেই পুরো অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত গমের ভাগ্যে একই দশাপ্রাপ্তি হয়েছে। বগুড়ার টিআর ও কাবিখা নিয়ে দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, দেশের প্রায় জেলার অবস্থা একই রকম। এখনও এ দেশে গ্রামীণ উন্নয়নের অর্থ ও গম নিয়ে সেই সাবেকি আমলের মতো জোচ্চুরি চলে হরদম। আর এক শ্রেণীর নির্বাচিত প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এই অনৈতিক ও গ্রামের উন্নয়নবিরোধী কর্মকাণ্ড উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের জানার মধ্যে ঘটে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু সুশাসন ও গ্রামীণ উন্নয়নের স্বার্থেই এই ধারাবাহিক দুর্নীতির মূলে আঘাত হানতেই হবে। এ জন্য সরকার একটি প্যানেল গঠন করতে পারে। এই প্যানেলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বরাদ্দকৃত গম ও নগদ অর্থের বিবরণ এবং যেসব প্রকল্পের জন্য এসব বরাদ্দ করা হয়েছে তার আনুপূর্বিক বিবরণ প্রকল্প এলাকায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, নির্দিষ্ট উপজেলা ও জেলা পরিষদে টাঙিয়ে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রচারণামূলক কাজ হাতে নেওয়া যেতে পারে। এ কাজে সরকার ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। গ্রামীণ উন্নয়ন যে জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক, এই বোধটা সবার মধ্যে সঞ্চার করতে হবে।
No comments