পার্বত্য চট্টগ্রাম-সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে by আলতাফ পারভেজ
পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং উদীয়মান আন্তর্জাতিক 'উদ্যোগ'গুলো সম্পর্কে সতর্ক পর্যালোচনা জরুরি। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে ইউপিডিএফের উত্থান এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত মতামতগুলো এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম মনোযোগ দাবি করে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারকে একই সঙ্গে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে
গড় হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাসে এখন ১০-১৫ জন তরুণ খুন হচ্ছে। তারা অধিকাংশই পাহাড়ি। মাঝে মধ্যে পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গাও হচ্ছে। খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবান পর্যন্ত পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্ক ভালো নেই কোথাও। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সম্পর্ক এখন তিক্ত। যে কারণে হরহামেশা পুড়ছে বাড়িঘর। হরতাল-অবরোধে বন্ধ থাকছে রাস্তা, নৌপথ_ সব।
পুরো অঞ্চলে সাধারণ পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা কৃষিভিত্তিক। কিন্তু উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না তারা। ফসলের বিপণন ব্যবস্থা আধুনিকায়নের কোনো উদ্যোগও নেই। উৎপাদকরা পাহাড়ি হলেও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করে বাঙালিরা। উৎপাদকদের সঙ্গে বিপণনকারীদের সমন্বয় নেই। নেই আস্থা-বিশ্বাসও। ফলে পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতি স্বচ্ছন্দ ও স্বাভাবিক নয়, যার ছাপ পড়ে প্রতিনিয়ত সমাজ জীবনে, প্রশাসনে এবং রাজনীতিতেও।
এ ক্ষেত্রে নতুন উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ি-পাহাড়ি সম্পর্কের ভয়ঙ্কর অবনতি। অস্ত্র হাতে পরস্পরকে খুঁজছে তারা। দল, উপদলও বিস্তর। এ অবস্থায় বহু বছর ধরে সেখানে নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। কারণ নিরাপত্তা নেই। বিনিয়োগের নিরাপত্তা না থাকায় নতুন উদ্যোক্তা ও পুঁজি কিছুই যাচ্ছে না সেখানে। কর্মসংস্থানের অভাবে তরুণদের মধ্যে কেবল হতাশা বাড়ছে।
দেশের বিশাল এক অংশে এরূপ সর্বগ্রাসী বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীনতা ও অনাচারে সমতলবাসী সবাই নিরুদ্বেগ, উদাসীন। ভাবখানা হলো শান্তিচুক্তির পর সবকিছু তো শান্ত থাকার কথা। কিন্তু শান্তিচুক্তির পর সংঘাতের সমীকরণ বরং বহুমুখী রূপ নিয়েছে। 'ইন্সারজেন্সি'র আমলে গোলাগুলি হতো দু'পক্ষে; এখন সেনাবাহিনী শান্ত, কিন্তু অশান্তি বেড়েছে বহুগুণ। ফলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও সেখানে কমেনি বা কমানো যায়নি। আবার রক্তপাতও বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে খুনোখুনির চরিত্র এমন, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর খুব বেশি কিছু করারও থাকছে না। কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মূলত দোষারোপ করছে তাদেরই।
শান্তিচুক্তির একটি বড় উপাদান ছিল ভূমি বিরোধ লাঘবে একটি কমিশনকে কাজে নামানো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ সত্ত্বেও স্থানীয় এলিটরা ওই কমিশনকে কাজ করতে দেয়নি। এ ক্ষেত্রে এনজিওদের ভূমিকা বিশেষভাবে সরকারের বিপক্ষে গেছে।
২০০১ সালে সরকার 'পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন' গঠন করে। এটা ছিল শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে প্রকৃতই এক দৃঢ় পদক্ষেপ। কিন্তু খ্যাতনামা বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী কমিশনের অন্য সদস্যদের শীতলতার কারণে শত চেষ্টা করেও কোনো অবদান রাখতে পারেননি। সন্তু লারমা ও দেবাশীষ রায় কমিশনের সদস্য হতে আপত্তি না করলেও কমিশনকে কাজ করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন না। তাদের বক্তব্য ছিল, যে আইনে এ কমিশন গঠিত হয়েছে তা শান্তিচুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সে ক্ষেত্রে কেন তারা সদস্য হতে সম্মত হলেন কিংবা পদত্যাগ করছেন না তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। অথচ এ কমিশন কেবল ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি নয়_ বৈধ মালিককেও ভূমিতে বহাল করার আইনগত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিল।
বাস্তবে যা দেখা যাচ্ছে, এককালের গেরিলা নেতা ও তার সহযোগীরা পার্বত্য পরিস্থিতি এবং একই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট। জাতীয় রাজনৈতিক পরিসরে তাদের পাশে রয়েছেন কেবল গুটিকয়েক বামপন্থি নেতা। শান্তিচুক্তির পরও এর পক্ষের নেতারা এখন হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। উঠে বা রুখে দাঁড়ানোও সম্ভব হচ্ছে না, মাঠ পর্যায়ে পুরনো জনভিত্তি আর নেই। প্রায়ই ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের যে দাবি সরকারের কাছে জানানো হচ্ছে, তা কি ফ্যাসিবাদেরই ইঙ্গিতবহ নয়?
সাম্প্রতিককালে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় 'জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে'র দাবিও তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে। বিশেষ করে জতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের আদিবাসী বিষয়ক ফোরামে। সেখানে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার পার্বত্য পরিস্থিতির সঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশি সৈনিকদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে সম্পর্কিত করতে চাইছেন।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির চলতি খুনোখুনির সঙ্গে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের দাবি যোগ-বিয়োগ করলে একটি অশনিসংকেত আঁচ করা যায়_ যার সঙ্গে মেলে পূর্ব তিমুর ও কসোভোর অতীত পরিস্থিতির। আমরা কি আসন্ন এ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত? এরূপ অবস্থা কেবল সেনা-আমলাতন্ত্রনির্ভর রক্ষণশীল মনোভাব দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণ ও উদীয়মান রাজনৈতিক সংগঠকদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ। অন্যদিকে সাংবিধানিক কোনো উদারনৈতিক অনুচ্ছেদই কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণদের শান্ত করতে পারবে না_ যদি না সেখানে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
অনেকের অভিমত, ১৯৯৭-এর চুক্তির বাস্তবায়নই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বস্তি প্রতিষ্ঠার পথ। ১৪ বছর বড় দীর্ঘ সময়। যে কোনো চুক্তি বাস্তবায়নের সামাজিক শর্ত হলো তার পক্ষে দৃঢ় জনসমর্থন। কিন্তু এখন কেবল যে স্থানীয় বাঙালি বাসিন্দারা চুক্তির বিপক্ষে তাই নয়_ পাহাড়িদের বিরাট এক অংশও শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ভোটে তাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য ও জনসমর্থন পাহাড়ি সমাজেও শান্তিচুক্তিবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয়। সুতরাং আজকের নেতৃত্বকে অতীত চুক্তির পরিধি পেরিয়ে সমস্যা সমাধানের নতুন কাঠামোর চিন্তা করতে হবে। সে জন্য সর্বাগ্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং উদীয়মান আন্তর্জাতিক 'উদ্যোগ'গুলো সম্পর্কে সতর্ক পর্যালোচনা জরুরি। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে ইউপিডিএফের উত্থান এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত মতামতগুলো এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম মনোযোগ দাবি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারকে একই সঙ্গে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে 'কোনো আদিবাসী নেই' কেবল এ কথা বলেই আসন্ন বিপদ সামাল দেওয়া যাবে না।
আলতাফ পারভেজ : গবেষক ও লেখক
altafparvez@yahoo.com
গড় হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাসে এখন ১০-১৫ জন তরুণ খুন হচ্ছে। তারা অধিকাংশই পাহাড়ি। মাঝে মধ্যে পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গাও হচ্ছে। খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবান পর্যন্ত পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্ক ভালো নেই কোথাও। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সম্পর্ক এখন তিক্ত। যে কারণে হরহামেশা পুড়ছে বাড়িঘর। হরতাল-অবরোধে বন্ধ থাকছে রাস্তা, নৌপথ_ সব।
পুরো অঞ্চলে সাধারণ পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা কৃষিভিত্তিক। কিন্তু উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না তারা। ফসলের বিপণন ব্যবস্থা আধুনিকায়নের কোনো উদ্যোগও নেই। উৎপাদকরা পাহাড়ি হলেও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করে বাঙালিরা। উৎপাদকদের সঙ্গে বিপণনকারীদের সমন্বয় নেই। নেই আস্থা-বিশ্বাসও। ফলে পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতি স্বচ্ছন্দ ও স্বাভাবিক নয়, যার ছাপ পড়ে প্রতিনিয়ত সমাজ জীবনে, প্রশাসনে এবং রাজনীতিতেও।
এ ক্ষেত্রে নতুন উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ি-পাহাড়ি সম্পর্কের ভয়ঙ্কর অবনতি। অস্ত্র হাতে পরস্পরকে খুঁজছে তারা। দল, উপদলও বিস্তর। এ অবস্থায় বহু বছর ধরে সেখানে নতুন কোনো বিনিয়োগ নেই। কারণ নিরাপত্তা নেই। বিনিয়োগের নিরাপত্তা না থাকায় নতুন উদ্যোক্তা ও পুঁজি কিছুই যাচ্ছে না সেখানে। কর্মসংস্থানের অভাবে তরুণদের মধ্যে কেবল হতাশা বাড়ছে।
দেশের বিশাল এক অংশে এরূপ সর্বগ্রাসী বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীনতা ও অনাচারে সমতলবাসী সবাই নিরুদ্বেগ, উদাসীন। ভাবখানা হলো শান্তিচুক্তির পর সবকিছু তো শান্ত থাকার কথা। কিন্তু শান্তিচুক্তির পর সংঘাতের সমীকরণ বরং বহুমুখী রূপ নিয়েছে। 'ইন্সারজেন্সি'র আমলে গোলাগুলি হতো দু'পক্ষে; এখন সেনাবাহিনী শান্ত, কিন্তু অশান্তি বেড়েছে বহুগুণ। ফলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও সেখানে কমেনি বা কমানো যায়নি। আবার রক্তপাতও বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে খুনোখুনির চরিত্র এমন, পুলিশ বা সেনাবাহিনীর খুব বেশি কিছু করারও থাকছে না। কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মূলত দোষারোপ করছে তাদেরই।
শান্তিচুক্তির একটি বড় উপাদান ছিল ভূমি বিরোধ লাঘবে একটি কমিশনকে কাজে নামানো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ সত্ত্বেও স্থানীয় এলিটরা ওই কমিশনকে কাজ করতে দেয়নি। এ ক্ষেত্রে এনজিওদের ভূমিকা বিশেষভাবে সরকারের বিপক্ষে গেছে।
২০০১ সালে সরকার 'পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন' গঠন করে। এটা ছিল শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথে প্রকৃতই এক দৃঢ় পদক্ষেপ। কিন্তু খ্যাতনামা বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী কমিশনের অন্য সদস্যদের শীতলতার কারণে শত চেষ্টা করেও কোনো অবদান রাখতে পারেননি। সন্তু লারমা ও দেবাশীষ রায় কমিশনের সদস্য হতে আপত্তি না করলেও কমিশনকে কাজ করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন না। তাদের বক্তব্য ছিল, যে আইনে এ কমিশন গঠিত হয়েছে তা শান্তিচুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সে ক্ষেত্রে কেন তারা সদস্য হতে সম্মত হলেন কিংবা পদত্যাগ করছেন না তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। অথচ এ কমিশন কেবল ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি নয়_ বৈধ মালিককেও ভূমিতে বহাল করার আইনগত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিল।
বাস্তবে যা দেখা যাচ্ছে, এককালের গেরিলা নেতা ও তার সহযোগীরা পার্বত্য পরিস্থিতি এবং একই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট। জাতীয় রাজনৈতিক পরিসরে তাদের পাশে রয়েছেন কেবল গুটিকয়েক বামপন্থি নেতা। শান্তিচুক্তির পরও এর পক্ষের নেতারা এখন হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। উঠে বা রুখে দাঁড়ানোও সম্ভব হচ্ছে না, মাঠ পর্যায়ে পুরনো জনভিত্তি আর নেই। প্রায়ই ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের যে দাবি সরকারের কাছে জানানো হচ্ছে, তা কি ফ্যাসিবাদেরই ইঙ্গিতবহ নয়?
সাম্প্রতিককালে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় 'জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে'র দাবিও তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে। বিশেষ করে জতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের আদিবাসী বিষয়ক ফোরামে। সেখানে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার পার্বত্য পরিস্থিতির সঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশি সৈনিকদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে সম্পর্কিত করতে চাইছেন।
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির চলতি খুনোখুনির সঙ্গে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের দাবি যোগ-বিয়োগ করলে একটি অশনিসংকেত আঁচ করা যায়_ যার সঙ্গে মেলে পূর্ব তিমুর ও কসোভোর অতীত পরিস্থিতির। আমরা কি আসন্ন এ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত? এরূপ অবস্থা কেবল সেনা-আমলাতন্ত্রনির্ভর রক্ষণশীল মনোভাব দিয়ে মোকাবেলা করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণ ও উদীয়মান রাজনৈতিক সংগঠকদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ। অন্যদিকে সাংবিধানিক কোনো উদারনৈতিক অনুচ্ছেদই কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণদের শান্ত করতে পারবে না_ যদি না সেখানে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
অনেকের অভিমত, ১৯৯৭-এর চুক্তির বাস্তবায়নই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বস্তি প্রতিষ্ঠার পথ। ১৪ বছর বড় দীর্ঘ সময়। যে কোনো চুক্তি বাস্তবায়নের সামাজিক শর্ত হলো তার পক্ষে দৃঢ় জনসমর্থন। কিন্তু এখন কেবল যে স্থানীয় বাঙালি বাসিন্দারা চুক্তির বিপক্ষে তাই নয়_ পাহাড়িদের বিরাট এক অংশও শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ভোটে তাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য ও জনসমর্থন পাহাড়ি সমাজেও শান্তিচুক্তিবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয়। সুতরাং আজকের নেতৃত্বকে অতীত চুক্তির পরিধি পেরিয়ে সমস্যা সমাধানের নতুন কাঠামোর চিন্তা করতে হবে। সে জন্য সর্বাগ্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং উদীয়মান আন্তর্জাতিক 'উদ্যোগ'গুলো সম্পর্কে সতর্ক পর্যালোচনা জরুরি। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে ইউপিডিএফের উত্থান এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত মতামতগুলো এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম মনোযোগ দাবি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারকে একই সঙ্গে সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে 'কোনো আদিবাসী নেই' কেবল এ কথা বলেই আসন্ন বিপদ সামাল দেওয়া যাবে না।
আলতাফ পারভেজ : গবেষক ও লেখক
altafparvez@yahoo.com
No comments