এনজিও আইন-সবার মত নিয়েই চূড়ান্ত হোক

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কার্যক্রম স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও নিয়মতান্ত্রিক করে তোলার দাবি নতুন নয়। কিন্তু এ লক্ষ্যে 'বৈদেশিক সহায়তা (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ' শীর্ষক আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে, আমরা সেটাকে সতর্কতার সঙ্গে দেখতে চাই।


স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার স্বতঃপ্রণোদিত কাজের মধ্য দিয়ে এ দেশে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও কার্যক্রম ব্যাপকমাত্রায় শুরু হয়েছিল। গত চার দশকে তা তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। নতুন আইন যেন উন্নয়নের এই বিপুল কর্মতৎপরতা নিরুৎসাহিত না করে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলব আমরা। এটা ঠিক যে, কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের কোনো কোনো অংশে জঙ্গিবাদীরা হিংসা ও সহিংসতার যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছিল, তাতে বৈদেশিক অর্থের জোগান দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও ছিল কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। এমন অপতৎপরতা কেউই সমর্থন করবে না। কোনো কোনো সংস্থার কাজে স্বচ্ছতার অভাব প্রকট বলেও অভিযোগ রয়েছে। নতুন আইনে বৈদেশিক অর্থের উৎস ও ব্যবহার স্বচ্ছ করার যে বিধান রাখা হয়েছে, তা নিশ্চয়ই জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা দমনে সহায়তা করবে। কিন্তু একই বিধানের ফ্যাকড়ায় যেন স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত না হয়। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের স্বজনের কাছে সময়মতো পেঁৗছা, প্রবাস থেকে দাতব্য কার্যক্রমে সহায়তা, শিক্ষাবৃত্তি প্রভৃতি নির্বিঘ্ন রাখার কথাও সরকারকে ভাবতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে এনজিও কার্যক্রম সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়বে। সরকার এসব আমলে নিক। সমকালে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, এই আইনের খসড়া এনজিওগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু আরও সময় নিয়ে এবং সব পক্ষের সঙ্গে দৃশ্যমান আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করা ভালো। অস্বীকার করা যাবে না যে, খসড়া আইনটি কমবেশ এক মাস এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছিল সর্বস্তরের মতামত পাওয়ার জন্য। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় যথেষ্ট ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে এক সভায় বলা হয়েছে যে, খসড়াটি শিগগিরই আবার ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতি অর্থপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে কি? আমরা জানি, দেশের বৃহত্তর কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক খানিকটা অম্লমধুর। নতুন আইন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে কি? প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা যদিও বলেছেন যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে 'ক্লিন ড্রাফট' সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে; মতামত প্রদানের সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও চাইলে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে পারে। এ ব্যাপারে এনজিওগুলোরও 'প্রো-একটিভ' ভূমিকা পালন করা উচিত বলে আমরা মনে করি। সরকারের ডাকের অপেক্ষায় না থেকে তারা নিজেরাও সুপারিশ প্রণয়ন ও হস্তান্তর করতে পারে। মনে রাখা জরুরি, উন্নয়নের প্রশ্নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভাজনের অবকাশ নেই। এই দেশ আমাদের সবার। দেশের উন্নয়নের প্রশ্নে সবাইকেই আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে সেই বার্তাই দিচ্ছে। অন্যদেরও সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে এখন।
 

No comments

Powered by Blogger.