আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি-কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় যেতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই পত্রিকা এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে ছিনতাই ও সন্ত্রাসের মতো ঘটনা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদেরও কাউকে কাউকে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে।


এ পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ অসহায় বোধ করছে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে গিয়ে। অথচ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়ছে না এখনো। স্বাভাবিক পদক্ষেপ কিংবা রুটিন ডিউটি পালন করে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যাবে না, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। তার পরও সরকার বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথা চিন্তা করছে না কেন, তা বোঝা যায় না। সাধারণত এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে যেকোনো সরকারের আমলেই বিশেষ অভিযান বিভিন্ন নাম দিয়ে পরিচালিত হতে দেখা যায়। বর্তমানে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে এ ধরনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, তা বোঝা যায় গত শুক্রবার ভোরে ঢাকার মিরপুরে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে দুই মহিলাকে রক্ষা করতে গিয়ে হজরত আলী নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুবরণের ঘটনায়। মিরপুরে দুই মহিলা প্রাতর্ভ্রমণে বের হলে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তাঁদের রক্ষা করতে যান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হজরত আলী। ছিনতাইকারীরা তাঁকে গুলি করে হত্যার পর পালিয়ে যায়। একই দিন আরেকটি ঘটনা ঘটে সিলেটে। এক আইনজীবী তাঁর নিজের অফিসে কাজ করার সময় দুষ্কৃতকারীর গুলিবিদ্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা ও সারা দেশে এমন ঘটনা নিত্য ঘটে চলেছে, যার খুবই কম পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হয়।
এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা টিকিয়ে রাখা জরুরি। অথচ চট্টগ্রাম জেলার এক পীর সাহেবের দরবারের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদেরই একটি গ্রুপ। রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার এই ঘটনাও সাধারণ মানুষের চিন্তাকে ভিন্নতর খাতে প্রবাহিত করে দিচ্ছে। তাহলে কি মানুষ বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই আস্থাহীন হয়ে পড়বে?
সাধারণত কোনো সময় যদি সাধারণ মানুষ বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে, তাহলে সার্বিক নাগরিক নিরাপত্তা বিঘি্নত হতে বাধ্য। সে অবস্থায় মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে প্রলুব্ধ হয়। এর ফলে একপর্যায়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। এ পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের কঠোর হাতে দমন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন কারণে এসব ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কাণ্ড ঘটছে, তা নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে, সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের।

No comments

Powered by Blogger.