রঙ্গব্যঙ্গ-একটি কাল্পনিক ভবিষ্যদ্বাণী by মোস্তফা কামাল

বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতি। নানা অঘটনেরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও ছদ্মবেশে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।


সংবিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রধান দুই দলের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি) সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
জন্মতারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশের ধনু রাশি। ধনু রাশির ভাগ্য গণনায় দেখা যাচ্ছে, এ বছর তো বটেই, আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাগলা হাওয়া বহমান থাকবে। কখনো কখনো তা বড় কোনো অঘটনের কারণ হতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার হতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নেতিবাচক খেলা আরো বেড়ে যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশকে নিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণীটি পুরোপুরি কাল্পনিক। বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার বিস্তর ব্যবধান। তার পরও মানুষ কল্পনা করে। এটা ইতিবাচকও হতে পারে। আবার নেতিবাচকও হতে পারে। আমরা হতাশাবাদী নই, আশাবাদী। কিন্তু আমাদের আশাবাদ প্রায়ই রূপকথার গল্পে পরিণত হয়। আমাদের এই কাল্পনিক ভবিষ্যদ্বাণীও হয়তো রূপকথার সেই গল্প। এবার আমরা আবার কল্পনার জগতে ফিরে যাই।
প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের আগামী কয়েক বছর কেমন যাবে? আগামী জাতীয় নির্বাচন কি হবে? নাকি আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন আসছে? গণতন্ত্র কি স্থায়ী হতে পারবে, নাকি আবারও হোঁচট খাবে? এসব প্রশ্নের জবাব কী হতে পারে তা আমরা কল্পনা করে বের করেছি। ভবিষ্যদ্বাণীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নানামুখী তৎপরতা চলছে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি।
দেশের ভেতরে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে, যাতে মানুষ বিকল্প খোঁজে। একটা পর্যায়ে মানুষ তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবকে স্বাগত জানাবে। ওয়ান-ইলেভেনের মতো আরো একটি রাজনৈতিক সুনামি হবে। ঠিক একই কায়দায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চলছে। জোট-মহাজোটের রাজনীতিতে ভাঙন স্পষ্ট। রাজনৈতিক কারণেই জোটগুলোকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এতে জোট ও মহাজোট বহুধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারে। দুই নেত্রীর পাশাপাশি এরশাদের নেতৃত্বে আরেকটি জোট শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি তারা অব্যাহত রাখবে। রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাবে। একই সঙ্গে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেবে। সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক নালিশ করবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ উঠবে। অভিযোগ তোলা হবে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-পীড়নের। কিন্তু এসবকে তোয়াক্কা করবে না সরকার ও সরকারি দল। তারা তাদের খেয়ালখুশি মতো চলবে।
দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে ব্যর্থ হবে সরকার। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। সব মিলিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে। গণমাধ্যম ও সরকারের সম্পর্কের বেশ অবনতি ঘটবে। সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করবে। এতে কোনো কোনো প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এসব ইস্যু কাজে লাগাতে চাইবে বিএনপি। তা ছাড়া দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটবে। তাঁরা পরস্পরকে শত্রু মনে করতে পারেন। তারেক ও কোকোকে আবেগের ইস্যু হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বিএনপি। তারা নিজেদের ঘর গোছানোর পাশাপাশি দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে হটানোর চেষ্টা করবে।
সরকারও আন্দোলন দমাতে আরো কঠোর অবস্থান নেবে। এতে রক্তপাত, খুনোখুনি বেড়ে যাবে। গণমাধ্যম এসব ইস্যুতে সরব থাকবে। সরকার কিছু গণমাধ্যমকে হাতে রাখার চেষ্টা করবে। এর ফলে নতুন কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্ম ও কিছু প্রতিষ্ঠানের অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে।
সরকারের কাজে নাগরিক সমাজের অসন্তুষ্টি আরো বেড়ে যাবে। কখনো কখনো সরকার পক্ষের বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিকরা বিরক্ত হয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করবে। এই সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা জল ঘোলা করে মাছ শিকারের চেষ্টা করবে।
বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই দেশে রাজনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে। এ সময় বিদেশি শক্তিগুলো ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠবে। ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাপ্রবাহ সৃষ্টিতে যেসব দেশ সক্রিয় ছিল তারাই আবার বেশি সক্রিয় হবে। উত্তরপাড়ার সঙ্গে পূর্বপাড়ার যোগাযোগ বেড়ে যাবে এবং তাদের মধ্যে বৈঠকের পর বৈঠক হবে।
বর্তমান সরকারকে সহায়তার জন্য ভারত সক্রিয় থাকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প কাউকে (ড. ফখরুদ্দীন কিংবা মইন উ আহমেদ) বসানোর চেষ্টা করবে। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। তবে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের চাপে ভারত কোণঠাসা হয়ে যেতে পারে। শেষ মুহূর্তে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা মেনে নিতে পারে। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়তে পারে।
তবে বিএনপিও যে এতে লাভবান হবে সেটা স্পষ্ট করে বলা যায় না। যদিও বিএনপি মনে মনে ভাববে, তারাই ক্ষমতায় আসছে। তারেককে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে লন্ডন থেকে দেশে আনা হবে। রাজনীতির মাঠে জয়ও আসবেন। কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে যাবে অনেক অঘটন!
দেশে গভীর রাজনৈতিক সংকটের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় শক্তি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় বসতে পারে। পরে এই শক্তিটি বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য মইন এই পন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগ আবার সেই এরশাদের জমানার মতো প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
প্রিয় পাঠক, এবার আমরা কল্পনার জগৎ ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসি। আমরা এতক্ষণ যা কল্পনা করলাম সে রকম যেন বাংলাদেশের ভাগ্যে না ঘটে। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত গণতান্ত্রিক, সমিৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আসুন, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের জন্য দোয়া করি। আমিন! ছুম্মা আমিন!

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.