কবুতরের হাটবাজার by শিহাব জিশান

খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। চোখ আকাশের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে তালি দিতেই ডিগবাজি খেয়ে নেমে এল কয়েকটি কবতুর। একটু গোত্তা খেয়ে আবার উড়ে গেল আকাশে। কবুতর নিয়ে এমন খেলায় সারা দিন পার করে দেন অনেকে। কবুতর পোষাটা তাঁদের কাছে নেশার মতোই।


নানা জাতের কবুতর সংগ্রহ করেই তাঁরা ক্ষান্ত হন না। রূপে-গুণে সেসব কবুতর অন্য সবার সংগ্রহ ছাপিয়ে যাবে, এই ইচ্ছে লালন করেন মনের ভেতর।
কবুতরপ্রেমীদের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে নগরে বেশ কয়েকটি কবুতরের হাট গড়ে উঠেছে। নগরের কাজীর হাট, দেওয়ান হাট, বিবির হাট, বহদ্দার হাট, রিয়াজউদ্দীন বাজার, ঈশান মিস্ত্রির হাট, মিলহাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বসে কবুতরের হাট। এখানেই শৌখিন কবুতরপ্রেমীরা ভিড় জমান।
সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথার পাশে কাজীর হাটে বসে কবুতরের হাট। বিভিন্ন জাতের কবুতরের খাঁচা ঘিরে চলে ক্রেতা-বিক্রেতার দরদাম। তবে এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যবধান মাঝেমধ্যেই ঘুচে যায়। কেউ আজ কিনতে এসেছেন তো অন্য দিন বিক্রি করছেন। আবার গত সপ্তাহে যিনি বিক্রি করছেন, কিছু দিন পর তিনিই এসেছেন কিনতে। পেশাদার কবুতর বিক্রেতা এ হাটে তেমন নেই বললেই চলে। যাঁর সংগ্রহে এক জাতের কবুতর বেশি আছে তিনি সে জাতের কবুতর বিক্রি করে অন্য জাতের কবুতর সংগ্রহ করতে এই হাটে আসেন। গোলা, লাক্ষা, সিরাজি, চুইনা, প্রিন্স ও নোটনসহ নানা জাতের কবুতর সংগ্রহ করতে এখানে আসেন ক্রেতারা।
নগরের দেওয়ান হাটের কবুতরের বাজারটি বসে সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। হাটটি বসে দেওয়ান হাট মন্দিরের সামনে। এখানকার সব বিক্রেতাই কম-বেশি সবার পরিচিত। ‘কবুতর বিক্রি আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। কার কী কবুতর আছে, কে কোন নতুন কবুতর এনেছে এটাই মূলত আমরা দেখি।’ বলছিলেন হাটে আসা মোহাম্মদ খলিল। তাঁর মতে এখানকার সব কবুতর বিক্রেতাই শৌখিন।
বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে গ্রিস প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম দেওয়ান হাটের কবুতরের হাটে গিয়েছিলেন কবুতর কিনতে। তিনি জানান, ম্যাগপাই, কিং, স্টিচারসহ ৬০ থেকে ৭০ জাতের কবুতর আছে তাঁর সংগ্রহে। নিজ বাড়ির ছাদে গড়েছেন কবুতরের অভয়ারণ্য। শখের পেছনে খরচ করেছেন লাখ টাকা। কবুতরের হাটে ঢোকার মুখেই দেখা গেল খাঁচার ওপর বসে আছে ভাগাপীর। ছোট্ট ঠোঁটের এই জাতের কবুতরের মাথায় একটা ছোট্ট ঝুঁটিও আছে। পাশেই ময়ূরের মতো পেখম মেলে নাচ দেখাচ্ছে লাক্ষা। এই লাক্ষা কবুতরের পেছনের পালকগুলো ময়ূরের মতোই মেলে দেওয়া। শৌখিন কবুতরের এই জাতটির উদ্ভব ভারতে। গাট্টাগোট্টা একজোড়া লাক্ষা কবুতর বিক্রি হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। এক বিক্রেতার খাঁচায় দেখা গেল লাল টকটকে পাওয়ালা ইস্টিচার কবুতর। এক জোড়া ইস্টিচার কবুতর বিক্রি হয় প্রায় আট হাজার টাকায়। কিছু দূর যেতেই চোখে পড়ল লম্বা লেজওয়ালা গোল্ডেন সুইট কবুতর। গায়ের রং ছাই আর বাদামি। এই জাতের কবুতরের দাম জোড়াপ্রতি প্রায় চার হাজার টাকা। এই হাটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জ্যাকোবিন। নানা কসরত দেখাতে ওস্তাদ এই পাখি। গলা থেকে ঘাড় পর্যন্ত পালকগুলো উল্টিয়ে রাখে এরা। এক জোড়া জ্যাকোবিন কবুতরের দাম প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তবে এ জাতের কবুতরগুলো তেমন উড়তে পারে না। ওড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো জাতের কবুতর হলো গিরিবাজ। এরা অনেকক্ষণ থাকতে পারে আকাশে। নগরের বিভিন্ন কবুতরের হাটে গিরিবাজ কবুতর বিক্রি হয় জোড়াপ্রতি এক হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। কাজীরহাট ও দেওয়ানহাট ছাড়াও সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার নগরের বিবিরহাটে, প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার নগরের ঈশান মিস্ত্রি হাটেও বসে কবুতরের হাট। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট ও স্টিল মিল বাজারেও কবুতর বিক্রি হয়।

No comments

Powered by Blogger.