বিসিএসের প্রশ্নপত্র -পিএসসি ভুলের বৃত্তবন্দি কেন?

'ভুল সবই ভুল, এ জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা'_বিখ্যাত এই হৃদয়গ্রাহী আধুনিক গানের পঙ্ক্তির সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় আছে। গানটির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতার অমিল খুঁজে পাওয়া ভার। সর্বত্রই যেন ভুলের ছড়াছড়ি। সরকারের নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যদি অপারগ হন, কিংবা ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতার


পরিচয় দেন, তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্রে শতছিদ্র দেখা দিতে বাধ্য। এমনটি কোনোভাবেই একটি কল্যাণকামী, স্বচ্ছ, গতিশীল, কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্ণয়ে সহায়ক নয়। ২৭ মে শুক্রবার আবারও ভুলে ভরা প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল যেন একটা নিয়মিত ও সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। খোদ পিএসসিই প্রশ্নপত্রে ভুলের কথা স্বীকার করেছে। শুধু প্রশ্নপত্রেই ভুল নয়, একাধিকজনের একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিড়ম্বনাচিত্রও পরীক্ষার্থীদের জন্য ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের অনেক বড় সম্মানিত চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বারবার ভুল করছে পিএসসি। কেন পিএসসির মতো একটি প্রতিষ্ঠান ভুলে ভরা প্রশ্নপত্র প্রণয়নের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না_এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করা জরুরি। পিএসসির যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে সংগতভাবেই প্রতীয়মান হয়, স্রেফ রাজনৈতিক বিবেচনায় যাঁদের পিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য নিয়োগ করা হচ্ছে (অতীতে এমন হয়েছে এ অভিযোগ পুষ্ট), তাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা প্রকট। অতীত থেকে তাঁরা কোনো শিক্ষা নেননি, সতর্ক ও সাবধান হননি এবং ভুলের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার কোনো প্রচেষ্টা তাঁদের নেই। পিএসসির মতো প্রতিষ্ঠানে এমনটি কিভাবে বারবার ঘটছে? জবাবদিহিতা দায়বদ্ধতার পাট চুকিয়ে যাঁরা সেখানে বসে আছেন, নিশ্চয়ই তাঁরা সব কিছুর ঊধর্ে্ব নন। বিসিএস পরীক্ষা জনপ্রশাসনের উপযুক্ত কর্মকর্তা বাছাইয়ের সর্বোচ্চ ও একমাত্র মাধ্যম। তাই এ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রত্যাশিত। পরীক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি নির্ণয়ের জন্য সার্বিকভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে তা যাচাই এবং কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই যাঁরা ভালো ফল করবেন, তাঁদের বাছাই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার স্বচ্ছ বিরাট কর্মযজ্ঞ এ পরীক্ষার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। এ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে নিশ্চয়ই ২৭ মে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল ও অসংগতি পুনর্বার দেখতে হতো না। পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ভুল হতো না। নিশ্চয়ই এসব ভুলের জন্য পরীক্ষার্থীরা
দায়ী নন।
এত ভুলের ছড়াছড়িতে যদি সব কিছু তলিয়ে যায়, তাহলে দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরুদ্বিগ্ন থাকার আর কোনোই উপায় থাকে না। যেখানে ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যায়, সেখানে এমন ভুল প্রশ্নপত্রের বিষয়টি কোনোভাবেই উপেক্ষণীয় থাকতে পারে না। এমতাবস্থায় পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। এই প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলই-বা কিভাবে নির্ধারিত হবে_এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়ও কর্তৃপক্ষেরই। আমরা মনে করি, বিসিএসের প্রশ্নপত্রে এসব ভুলের জন্য দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতা ও দণ্ডের ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.