দারিদ্র্যের কাছে পরাজিত মা by প্রশান্ত কর্মকার
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কাছে হার মানলেন এক মা। মা মালেকা বেগম মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতক আমেনাকে দিয়ে দেন। নিঃসন্তান প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী নার্গিস মেয়েটিকে দত্তক নেন। ২৮ দিনের শিশুসন্তানকে নার্গিসের কাছে দিয়ে দেন মা মালেকা।
কিন্তু এই মায়ের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে একটি দালালচক্র জড়িয়ে দেয় মামলায়। দালালচক্রের ফাঁদে পড়ে মালেকা বেগম নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে রাজধানীর তুরাগ থানায় অভিযোগ করেন। গত বুধবার শিশু আমেনার দত্তক মা নার্গিস ও মা মালেকা মহানগর হাকিম হাসিবুল হকের আদালতে হাজির হন।
আদালতের জিজ্ঞাসায় মা মালেকা বলেন, ‘স্যার, সাত-আট মাস আগে আমার স্বামী ওবায়দুর রহমান তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে কোনো ভরণপোষণ দেয় না। ১০ মাস ১০ দিন এই বাচ্চাকে পেটে ধরেছি। কোন মা চায় তার সন্তানকে বেচে দিতে? নার্গিস আপার কোনো সন্তানাদি নাই। আমার বাচ্চাকে মানুষ করবে বলে চায়। স্যার, আমি পেটের দায়ে আমার শিশুসন্তানকে দিয়ে দিছি। আমি তো মা। আমার সন্তান ভালোভাবে মানুষ হোক, এইটা চাই।’
বিচারক বলেন, ‘তাহলে থানায় অভিযোগ করলেন কেন?’ এ সময় মালেকা বেগম বলেন, ‘এই বইনের কোনো দোষ নাই, স্যার।’
আদালত আবার বলেন, ‘আপনি মা। এখন বলুন, এই শিশুসন্তান কার কাছে থাকবে। তা আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ উত্তরে মালেকা বলেন, ‘স্যার, আপনারা জ্ঞানীগুণী মানুষ, আপনেরা যা ভালো বোঝেন তা-ই করেন।’
বিচারক বলেন, ‘এই সন্তানের তো মায়ের দুধের প্রয়োজন আছে, তা জানেন কি?’
‘হ স্যার, জানি। তয় এক কাজ করেন, তার পাশে থাইকা আমরা দুইজনে মানুষ করি। আমি কোনো দিন ওই সন্তানকে চাইব না। ও বোনের মাইয়া। দালালের ফাঁদে পইড়া আমি এই অভিযোগ করছিলাম। বেশি টেহা পাব বইলা। এমুন ভুল আর ওইব না স্যার।’
বিচারক নার্গিস বেগমকে বলেন, ‘যেহেতু সন্তানের বয়স ২৮ দিন, মায়ের দুধের প্রয়োজন রয়েছে।’ আদালতের আদেশে বলা হয়, মালেকা বেগম শিশুসন্তানকে লালনপালন করার জন্য নার্গিস বেগমের কাছে দেন। এ বিষয়ে একটি হলফনামাও সম্পাদন করে দেন মালেকা। কিন্তু মাতৃত্ববোধের তাড়নায় মেয়েকে ফিরে পেতে চান এবং থানায় অভিযোগ করেন। তবে বিচারকের কাছে মেয়ে লালনপালন করার জন্য নার্গিসকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। আদালতকে বলেন, ‘আমার বুকে দুধ আছে। তাহলে বাচ্চাটা একটু বড় হবার পর আফাকে দেই, স্যার।’ দরিদ্র মালেকা কোথায় রাখবেন—এমন প্রশ্নের উদ্ভব হলে মালেকা বলেন, ‘স্যার, নার্গিস আপার বাসার পাশে বাসা নিমু। দুইজনেই মানুষ করুম।’ আদালত মায়ের জিম্মায় শিশুকন্যা আমেনাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মালেকা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ‘সন্তান দিয়ে দিছি। নিজে খাতি পাই না। স্বামীও চইলা গেছে। সন্তান মানুষ করমু কেমনে। আর বইনের সন্তান নাই। তাই এই বইনেরে দিয়া দিছি।’
নার্গিস বলেন, ‘মালেকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সন্তানকে নিইনি। মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণের জন্য তাঁর কাছে এই সন্তান ভিক্ষা চেয়েছি।’
p_shanta74@yahoo.com
আদালতের জিজ্ঞাসায় মা মালেকা বলেন, ‘স্যার, সাত-আট মাস আগে আমার স্বামী ওবায়দুর রহমান তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমাকে কোনো ভরণপোষণ দেয় না। ১০ মাস ১০ দিন এই বাচ্চাকে পেটে ধরেছি। কোন মা চায় তার সন্তানকে বেচে দিতে? নার্গিস আপার কোনো সন্তানাদি নাই। আমার বাচ্চাকে মানুষ করবে বলে চায়। স্যার, আমি পেটের দায়ে আমার শিশুসন্তানকে দিয়ে দিছি। আমি তো মা। আমার সন্তান ভালোভাবে মানুষ হোক, এইটা চাই।’
বিচারক বলেন, ‘তাহলে থানায় অভিযোগ করলেন কেন?’ এ সময় মালেকা বেগম বলেন, ‘এই বইনের কোনো দোষ নাই, স্যার।’
আদালত আবার বলেন, ‘আপনি মা। এখন বলুন, এই শিশুসন্তান কার কাছে থাকবে। তা আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ উত্তরে মালেকা বলেন, ‘স্যার, আপনারা জ্ঞানীগুণী মানুষ, আপনেরা যা ভালো বোঝেন তা-ই করেন।’
বিচারক বলেন, ‘এই সন্তানের তো মায়ের দুধের প্রয়োজন আছে, তা জানেন কি?’
‘হ স্যার, জানি। তয় এক কাজ করেন, তার পাশে থাইকা আমরা দুইজনে মানুষ করি। আমি কোনো দিন ওই সন্তানকে চাইব না। ও বোনের মাইয়া। দালালের ফাঁদে পইড়া আমি এই অভিযোগ করছিলাম। বেশি টেহা পাব বইলা। এমুন ভুল আর ওইব না স্যার।’
বিচারক নার্গিস বেগমকে বলেন, ‘যেহেতু সন্তানের বয়স ২৮ দিন, মায়ের দুধের প্রয়োজন রয়েছে।’ আদালতের আদেশে বলা হয়, মালেকা বেগম শিশুসন্তানকে লালনপালন করার জন্য নার্গিস বেগমের কাছে দেন। এ বিষয়ে একটি হলফনামাও সম্পাদন করে দেন মালেকা। কিন্তু মাতৃত্ববোধের তাড়নায় মেয়েকে ফিরে পেতে চান এবং থানায় অভিযোগ করেন। তবে বিচারকের কাছে মেয়ে লালনপালন করার জন্য নার্গিসকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। আদালতকে বলেন, ‘আমার বুকে দুধ আছে। তাহলে বাচ্চাটা একটু বড় হবার পর আফাকে দেই, স্যার।’ দরিদ্র মালেকা কোথায় রাখবেন—এমন প্রশ্নের উদ্ভব হলে মালেকা বলেন, ‘স্যার, নার্গিস আপার বাসার পাশে বাসা নিমু। দুইজনেই মানুষ করুম।’ আদালত মায়ের জিম্মায় শিশুকন্যা আমেনাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মালেকা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ‘সন্তান দিয়ে দিছি। নিজে খাতি পাই না। স্বামীও চইলা গেছে। সন্তান মানুষ করমু কেমনে। আর বইনের সন্তান নাই। তাই এই বইনেরে দিয়া দিছি।’
নার্গিস বলেন, ‘মালেকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সন্তানকে নিইনি। মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণের জন্য তাঁর কাছে এই সন্তান ভিক্ষা চেয়েছি।’
p_shanta74@yahoo.com
No comments