চারদিক-বৈশাখ এসে গেছে by শারমিন নাহার
বৈশাখের এই ভোরের হাওয়া আসে মৃদুমন্দ। আনে আমার মনের কোণে সেই চরণের ছন্দ \’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বৈশাখের প্রথম প্রভাতে পূর্ব দিগন্তে উঁকি দিয়েছে সূর্য। প্রতিটি বাঙালির মনে লেগেছে উৎসবের রঙিন দোলা। নব জীবনের দ্যোতনা আর স্নিগ্ধতায় ছুঁয়ে যাচ্ছে ভোরের বাতাস। হ্যাঁ, আজ সেই বিশেষ দিন।
বৈশাখের প্রথম প্রভাতে পূর্ব দিগন্তে উঁকি দিয়েছে সূর্য। প্রতিটি বাঙালির মনে লেগেছে উৎসবের রঙিন দোলা। নব জীবনের দ্যোতনা আর স্নিগ্ধতায় ছুঁয়ে যাচ্ছে ভোরের বাতাস। হ্যাঁ, আজ সেই বিশেষ দিন।
বঙ্গাব্দ ১৪১৮-এর প্রথম দিন। বাঙালি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতিটি প্রাণের যূথবদ্ধ হওয়ার এই সেই দিন। আর তাই তো পয়লা বৈশাখে দিনের শুরুতেই ছায়ানটের গান, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে সর্বস্তরের জনগণ নেমে আসবে পিচঢালা রাজপথে, এগিয়ে চলবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। পুরোনো বছরের জরা-জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে যে শুরু করতেই হবে।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ—এটা তো কেবল মুখের কথাই নয়, বাস্তবেও তার প্রমাণ রয়েছে ঢের। তবে এর মাঝে বাঙালির বর্ষবরণ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বর্ণিল আর সর্বজনীন। এদিন আটপৌরে বেশ ছেড়ে নতুন বসন ধারণ করে বেরিয়ে আসে বাঙালি। আর নতুনের এই আহ্বান পরিবর্তনের ছোঁয়া দিয়ে যায় তার চলন, বলন আর প্রতি পদক্ষেপে। বাঙালি প্রাধান্য দেয় সর্বজনীনতাকে। সবার চাওয়া এমন একটি দিন, যে দিন প্রতিটি বাঙালি একসঙ্গে শামিল হতে পারে উৎসব উদ্যাপনের আনন্দে। শুধু বাঙালি কেন, বাংলায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণ থাকে এই উৎসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ুফারহানা আক্তার তাই বলছিলেন, পয়লা ফাল্গুন, পয়লা বৈশাখ কিংবা স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের আবেদন প্রতিটি বাঙালি বা বাংলাদেশির কাছেই সমান। সব বিচ্ছিন্নতার বাধা ডিঙিয়ে সেদিন সবাই হয়ে যায় এক মহামিলনের প্রতিমূর্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী তনিমা আহম্মেদ বললেন, কয়েক দিন আগে দর্জিবাড়ি গিয়ে পোশাক বানানোর ফরমায়েশ দিতেই দর্জি সাফ জানিয়ে দিলেন, পয়লা বৈশাখের আগে পোশাকের আর কোনো অর্ডার নেওয়া হবে না। বোঝাই যাচ্ছে, বাঙালির বৈশাখ উদ্যাপনের আবেদন কোথায় পৌঁছে গেছে।
বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ নিয়ে এত আয়োজন। কিন্তু বাংলা সন প্রণয়ন নিয়ে আছে ‘নানা মুনির নানা মত’-এর মতো মতভিন্নতা। অনেকেই বলেন, মোগলসম্রাট আকবর, আবার কেউ বলেন রাজা শশাঙ্ক বাংলা সন প্রণয়ন করেন।
এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, সন কিংবা সাল যথাক্রমে আরবি ও ফারসি শব্দ। যখন পুরো ভারতবর্ষে বৌদ্ধ আর হিন্দুদের রাজত্ব, সেই সময়েই আরবি, ফারসি নামকরণ হতে পারে না। অন্যদিকে শশাঙ্কই বাংলা সনের প্রণেতা, সে বিষয়ে তেমন কোনো প্রমাণও নেই। সম্রাট আকবরকে অনেকেই বলেন বাংলা সনের প্রণেতা। তবে এ মত নিয়ে আছে নানা বিভ্রান্তি। এমনকি সম্রাট আকবরের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে বাংলা সন প্রণয়নের কোনো কথাই লেখা নেই। আকবরের রাজসভার অন্যতম রত্ন ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর লেখনীতেও বাংলা সনের কোনো কথা উল্লেখ নেই। তবে সম্রাট আকবর এলাহি সনের প্রণেতা। শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা সন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বরং অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হলেন মুর্শিদ কুলী খান। বাংলার একজন অধিপতি হিসেবে তিনিই প্রথম বাংলা সন প্রণয়ন করেন। এ ছাড়া মুর্শিদ কুলী খান পুণ্যাহ, বেড়া ভাসানোর (ভেলা ভাসানো) মতো নানা অনুষ্ঠান উদ্যাপন করতেন। তাই এ মতই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যে সম্রাট আকবর এলাহি সন প্রণয়ন করেন আর মুর্শিদ কুলী খান এলাহি সনের সূত্র ধরে প্রণয়ন করেন বাংলা সন, যা কিনা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত।
তবে বাংলা সন যেভাবেই প্রণয়ন করা হোক না কেন, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব বাঙালি একই রকম উদ্দীপনা নিয়ে বাংলা বছরের শুরুর দিনটি উদ্যাপন করবেই। রমনার বটমূলে বোমা হামলার মতো নারকীয় হত্যাযজ্ঞও বাঙালিকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারবে না। প্রাণের টানে বাঙালির এই পথচলা অনাদিকাল পর্যন্ত চলতেই থাকবে আর সব বাঙালি এক সুরে গাইবে—‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
শারমিন নাহার
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ—এটা তো কেবল মুখের কথাই নয়, বাস্তবেও তার প্রমাণ রয়েছে ঢের। তবে এর মাঝে বাঙালির বর্ষবরণ নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বর্ণিল আর সর্বজনীন। এদিন আটপৌরে বেশ ছেড়ে নতুন বসন ধারণ করে বেরিয়ে আসে বাঙালি। আর নতুনের এই আহ্বান পরিবর্তনের ছোঁয়া দিয়ে যায় তার চলন, বলন আর প্রতি পদক্ষেপে। বাঙালি প্রাধান্য দেয় সর্বজনীনতাকে। সবার চাওয়া এমন একটি দিন, যে দিন প্রতিটি বাঙালি একসঙ্গে শামিল হতে পারে উৎসব উদ্যাপনের আনন্দে। শুধু বাঙালি কেন, বাংলায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণ থাকে এই উৎসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ুফারহানা আক্তার তাই বলছিলেন, পয়লা ফাল্গুন, পয়লা বৈশাখ কিংবা স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের আবেদন প্রতিটি বাঙালি বা বাংলাদেশির কাছেই সমান। সব বিচ্ছিন্নতার বাধা ডিঙিয়ে সেদিন সবাই হয়ে যায় এক মহামিলনের প্রতিমূর্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী তনিমা আহম্মেদ বললেন, কয়েক দিন আগে দর্জিবাড়ি গিয়ে পোশাক বানানোর ফরমায়েশ দিতেই দর্জি সাফ জানিয়ে দিলেন, পয়লা বৈশাখের আগে পোশাকের আর কোনো অর্ডার নেওয়া হবে না। বোঝাই যাচ্ছে, বাঙালির বৈশাখ উদ্যাপনের আবেদন কোথায় পৌঁছে গেছে।
বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ নিয়ে এত আয়োজন। কিন্তু বাংলা সন প্রণয়ন নিয়ে আছে ‘নানা মুনির নানা মত’-এর মতো মতভিন্নতা। অনেকেই বলেন, মোগলসম্রাট আকবর, আবার কেউ বলেন রাজা শশাঙ্ক বাংলা সন প্রণয়ন করেন।
এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, সন কিংবা সাল যথাক্রমে আরবি ও ফারসি শব্দ। যখন পুরো ভারতবর্ষে বৌদ্ধ আর হিন্দুদের রাজত্ব, সেই সময়েই আরবি, ফারসি নামকরণ হতে পারে না। অন্যদিকে শশাঙ্কই বাংলা সনের প্রণেতা, সে বিষয়ে তেমন কোনো প্রমাণও নেই। সম্রাট আকবরকে অনেকেই বলেন বাংলা সনের প্রণেতা। তবে এ মত নিয়ে আছে নানা বিভ্রান্তি। এমনকি সম্রাট আকবরের আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে বাংলা সন প্রণয়নের কোনো কথাই লেখা নেই। আকবরের রাজসভার অন্যতম রত্ন ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর লেখনীতেও বাংলা সনের কোনো কথা উল্লেখ নেই। তবে সম্রাট আকবর এলাহি সনের প্রণেতা। শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা সন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বরং অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হলেন মুর্শিদ কুলী খান। বাংলার একজন অধিপতি হিসেবে তিনিই প্রথম বাংলা সন প্রণয়ন করেন। এ ছাড়া মুর্শিদ কুলী খান পুণ্যাহ, বেড়া ভাসানোর (ভেলা ভাসানো) মতো নানা অনুষ্ঠান উদ্যাপন করতেন। তাই এ মতই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যে সম্রাট আকবর এলাহি সন প্রণয়ন করেন আর মুর্শিদ কুলী খান এলাহি সনের সূত্র ধরে প্রণয়ন করেন বাংলা সন, যা কিনা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত।
তবে বাংলা সন যেভাবেই প্রণয়ন করা হোক না কেন, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব বাঙালি একই রকম উদ্দীপনা নিয়ে বাংলা বছরের শুরুর দিনটি উদ্যাপন করবেই। রমনার বটমূলে বোমা হামলার মতো নারকীয় হত্যাযজ্ঞও বাঙালিকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারবে না। প্রাণের টানে বাঙালির এই পথচলা অনাদিকাল পর্যন্ত চলতেই থাকবে আর সব বাঙালি এক সুরে গাইবে—‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
শারমিন নাহার
No comments