যানজটের শহরেও ছিনতাই by নজরুল ইসলাম
মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কে শুক্রবার ভোরে ছিনতাইকারীর গুলিতে নিহত হন হযরত আলী নামের এক ব্যক্তি। আগের দিন ধানমন্ডিতে অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
রাজধানী শহরে এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
রাজধানী শহরে এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।
কিছু ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় যায় অথবা গণমাধ্যমকে জানায়। অনেক ঘটনা প্রকাশ পায় না। হয়রানির ভয়ে অনেকে থানার পুলিশ পর্যন্ত যেতে চায় না। ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-র্যাব ক্রসফায়ারের মতো চরম পন্থা অবলম্বন করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখন দিনদুপুরে তীব্র যানজটের মধ্যেও হচ্ছে ছিনতাই।
কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাসিক অপরাধ সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও ছিনতাই বন্ধে তল্লাশি চৌকি এবং টহল পুলিশের কার্যক্রম আরও জোরদার করা এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প ও ফাঁড়িগুলোকে সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ছিনতাই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আবদুল জলিল মণ্ডল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইও নিয়মিত অপরাধ (রুটিন ক্রাইম)। ছিনতাই ঘটলেও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ছিনতাই বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে অপরাধীদের সমাগম বাড়ছে। এরাই সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে।
কাগুজে হিসাবে পুলিশ কর্মকর্তারা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে’ দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রাজধানীজুড়ে ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের এক সপ্তাহেই রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী, পুলিশ, হাসপাতাল, এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২০০ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে এই শহরে। এসব ঘটনায় আহত হয়ে ১২০ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাসে ৪১ থানায় ছিনতাই ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ২১টি। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর সব থানায় মামলা হয়েছে মাত্র ১৭টি। গত বছরের মার্চে (২০১১) ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৬টি।
তবে থানায় ছিনতাইয়ের যে পরিসংখ্যান লেখা হয়, তা প্রকৃত ঘটনার চেয়ে অনেক কম। বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের মামলা থানায় নেওয়া হয় দস্যুতা হিসেবে। হয়রানি এড়াতে অনেকেই আবার পুলিশের পরামর্শে ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ‘হারিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দেখাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) অধিকাংশ মামলা লিপিবদ্ধ না করেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বারান্দা থেকে বিদায় দেন। আবার অনেকেই হয়রানির ভয়ে থানায় যান না।
এমন ঘটনা ঘটেছে গত ৩০ মার্চ শাহ আলী থানার গড়ান চটবাড়ী এলাকায়। নববধূ আছিয়া আক্তার স্বামীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে মিরপুর ১ নম্বরে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে তামান্না পার্কের সামনে কালো রঙের ট্যাক্সিক্যাবে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত ওই দম্পতির গতি রোধ করে। একপর্যায়ে তারা অস্ত্রের মুখে আড়াই হাজার টাকা ও ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আছিয়া জানান, পুলিশি হয়রানি ও ঝামেলার ভয়ে তিনি থানায় যাননি।
গতকাল সকালে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী কলাবাগান ইয়াকুব সেন্টারের সামনে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে মারধর করে। ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি কলাবাগান থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জিডি হিসেবে গ্রহণ করে।
গত রোববার সন্ধ্যায় কাঁঠালবাগানে ছিনতাইকারীরা ছুরি ঠেকিয়ে বেসরকারি সংস্থার কর্মী জাহেদা বেগমের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। তিনি কলাবাগান থানায় মামলা করতে গেলে তদন্ত করে মামলা নেওয়ার কথা বলে তাঁকে বিদায় করে দেওয়া হয়।
ছিনতাইয়ের মামলা হয় দ্রুত বিচার আইনে। এ আইনের মামলায় আসামির জামিন পাওয়াটা কঠিন। তা ছাড়া অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে। ছিনতাইকে বড় অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়। কিন্তু পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই ছিনতাইয়ের ঘটনাকে দস্যুতার মামলা হিসেবে নিচ্ছে। এর পেছনে কী রহস্য কাজ করছে, জানতে চাইলে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
র্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই কোটি মানুষের এই নগরে সব সময়ই ছিনতাই হয়। যানজটের মধ্যেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয় এবং ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারও হচ্ছে। তল্লাশি চৌকি ও টহল কমে যাওয়ায় ছিনতাই বেড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে র্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত আছে।
কয়েকটি ঘটনা: গত শুক্রবার মধ্য রাতে দারুসসালাম থানার মাজার রোডে সেনাসদস্য ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছিনতাইকারী নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চার গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার সময় ধরা পড়ে। একই দিন সকালে শনির আখড়ায় মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেনকে ছুরি মেরে ২১ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
গত ৮ মার্চ মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজিকে) আবু মুসা ফখরুল ইসলামকে বহন করা গাড়ি ছিনতাই হয়।
যেসব জায়গায় ছিনতাই হয়: মহানগর ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকার প্রায় আড়াই শ স্থানে নিয়মিত ছিনতাই হচ্ছে। তবে চিহ্নিত স্থানে সার্বক্ষণিক পুলিশ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছিনতাইকারীরা পুলিশের দায়িত্বে পালাবদলের (শিফট বদল) সময় বেশি ছিনতাই করে। ডিএমপি ছিনতাইয়ের ৪৪৪টি স্থান চিহ্নিত করে ছিনতাই প্রতিরোধ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। নির্দেশিকায় উল্লিখিত স্থানের মধ্যে আছে রমনার টঙ্গী ডাইভারশন রোড, মালিবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, মগবাজার মসজিদ গলি, মগবাজার ডাক্তার গলি, গ্রীনরোড, ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের ব্রিজ, ১৩ ও ১৪ নম্বর ও ৩২ নম্বর রোডের আশপাশ, কলাবাগান, শংকর বাসস্ট্যান্ড, হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে, শাহবাগ শিশুপার্কের সামনের রাস্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর থেকে তিন নেতার মাজার, কাটাবন ক্রসিং, ঢাকা কলেজের সামনে, শ্যামলী শিশু মেলা থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের মাঝামাঝি এলাকা, মানিক মিয়া এভিনিউ, তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজ, রোকেয়া সরণি, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশ, শেরেবাংলা নগর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনের সড়ক, আগারগাঁও ক্রসিং, আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামনের সড়ক, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে শেওড়াপাড়া ওভারব্রিজ, কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড ও এর আশপাশের বিন্দুবৃত্ত গলি, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের আশপাশ, সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে, দারুসসালাম সড়কের মিরপুর ১ নম্বর থেকে আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত, চিড়িয়াখানা রোড থেকে মিরপুর ১ নম্বর সড়ক পর্যন্ত, মিরপুর ২ নম্বর গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সামনের সড়ক, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মাজার রোড, নূরজাহান রোড, আসাদগেট, কলেজগেট থেকে জেনেভা ক্যাম্পের দিকের রাস্তা, পুরান কচুক্ষেত এলাকা প্রভৃতি।
৪০ চক্র সক্রিয়: মহানগর পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, রাজধানীতে অন্তত ৪০টি ছিনতাইকারী চক্রের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব চক্রের তিন শতাধিক সদস্য সক্রিয় আছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মলম পার্টি হিসেবে পরিচিত ১২টি ছিনতাইকারী চক্রও রাজধানীতে তৎপর আছে।
কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাসিক অপরাধ সভায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও ছিনতাই বন্ধে তল্লাশি চৌকি এবং টহল পুলিশের কার্যক্রম আরও জোরদার করা এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প ও ফাঁড়িগুলোকে সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ছিনতাই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আবদুল জলিল মণ্ডল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইও নিয়মিত অপরাধ (রুটিন ক্রাইম)। ছিনতাই ঘটলেও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ছিনতাই বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে অপরাধীদের সমাগম বাড়ছে। এরাই সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে।
কাগুজে হিসাবে পুলিশ কর্মকর্তারা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে’ দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রাজধানীজুড়ে ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের এক সপ্তাহেই রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী, পুলিশ, হাসপাতাল, এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২০০ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে এই শহরে। এসব ঘটনায় আহত হয়ে ১২০ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাসে ৪১ থানায় ছিনতাই ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে মাত্র ২১টি। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর সব থানায় মামলা হয়েছে মাত্র ১৭টি। গত বছরের মার্চে (২০১১) ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৬টি।
তবে থানায় ছিনতাইয়ের যে পরিসংখ্যান লেখা হয়, তা প্রকৃত ঘটনার চেয়ে অনেক কম। বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের মামলা থানায় নেওয়া হয় দস্যুতা হিসেবে। হয়রানি এড়াতে অনেকেই আবার পুলিশের পরামর্শে ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ‘হারিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দেখাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) অধিকাংশ মামলা লিপিবদ্ধ না করেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে বারান্দা থেকে বিদায় দেন। আবার অনেকেই হয়রানির ভয়ে থানায় যান না।
এমন ঘটনা ঘটেছে গত ৩০ মার্চ শাহ আলী থানার গড়ান চটবাড়ী এলাকায়। নববধূ আছিয়া আক্তার স্বামীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে মিরপুর ১ নম্বরে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে তামান্না পার্কের সামনে কালো রঙের ট্যাক্সিক্যাবে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত ওই দম্পতির গতি রোধ করে। একপর্যায়ে তারা অস্ত্রের মুখে আড়াই হাজার টাকা ও ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আছিয়া জানান, পুলিশি হয়রানি ও ঝামেলার ভয়ে তিনি থানায় যাননি।
গতকাল সকালে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী কলাবাগান ইয়াকুব সেন্টারের সামনে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে মারধর করে। ছিনতাইকারীরা তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি কলাবাগান থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জিডি হিসেবে গ্রহণ করে।
গত রোববার সন্ধ্যায় কাঁঠালবাগানে ছিনতাইকারীরা ছুরি ঠেকিয়ে বেসরকারি সংস্থার কর্মী জাহেদা বেগমের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। তিনি কলাবাগান থানায় মামলা করতে গেলে তদন্ত করে মামলা নেওয়ার কথা বলে তাঁকে বিদায় করে দেওয়া হয়।
ছিনতাইয়ের মামলা হয় দ্রুত বিচার আইনে। এ আইনের মামলায় আসামির জামিন পাওয়াটা কঠিন। তা ছাড়া অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে। ছিনতাইকে বড় অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়। কিন্তু পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই ছিনতাইয়ের ঘটনাকে দস্যুতার মামলা হিসেবে নিচ্ছে। এর পেছনে কী রহস্য কাজ করছে, জানতে চাইলে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
র্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই কোটি মানুষের এই নগরে সব সময়ই ছিনতাই হয়। যানজটের মধ্যেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয় এবং ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারও হচ্ছে। তল্লাশি চৌকি ও টহল কমে যাওয়ায় ছিনতাই বেড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে র্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত আছে।
কয়েকটি ঘটনা: গত শুক্রবার মধ্য রাতে দারুসসালাম থানার মাজার রোডে সেনাসদস্য ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছিনতাইকারী নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চার গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়ার সময় ধরা পড়ে। একই দিন সকালে শনির আখড়ায় মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেনকে ছুরি মেরে ২১ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
গত ৮ মার্চ মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজিকে) আবু মুসা ফখরুল ইসলামকে বহন করা গাড়ি ছিনতাই হয়।
যেসব জায়গায় ছিনতাই হয়: মহানগর ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকার প্রায় আড়াই শ স্থানে নিয়মিত ছিনতাই হচ্ছে। তবে চিহ্নিত স্থানে সার্বক্ষণিক পুলিশ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ছিনতাইকারীরা পুলিশের দায়িত্বে পালাবদলের (শিফট বদল) সময় বেশি ছিনতাই করে। ডিএমপি ছিনতাইয়ের ৪৪৪টি স্থান চিহ্নিত করে ছিনতাই প্রতিরোধ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। নির্দেশিকায় উল্লিখিত স্থানের মধ্যে আছে রমনার টঙ্গী ডাইভারশন রোড, মালিবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, মগবাজার মসজিদ গলি, মগবাজার ডাক্তার গলি, গ্রীনরোড, ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডের ব্রিজ, ১৩ ও ১৪ নম্বর ও ৩২ নম্বর রোডের আশপাশ, কলাবাগান, শংকর বাসস্ট্যান্ড, হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সামনে, শাহবাগ শিশুপার্কের সামনের রাস্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর থেকে তিন নেতার মাজার, কাটাবন ক্রসিং, ঢাকা কলেজের সামনে, শ্যামলী শিশু মেলা থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের মাঝামাঝি এলাকা, মানিক মিয়া এভিনিউ, তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজ, রোকেয়া সরণি, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশ, শেরেবাংলা নগর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পেছনের সড়ক, আগারগাঁও ক্রসিং, আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সামনের সড়ক, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর থেকে শেওড়াপাড়া ওভারব্রিজ, কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড ও এর আশপাশের বিন্দুবৃত্ত গলি, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের আশপাশ, সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে, দারুসসালাম সড়কের মিরপুর ১ নম্বর থেকে আনসার ক্যাম্প পর্যন্ত, চিড়িয়াখানা রোড থেকে মিরপুর ১ নম্বর সড়ক পর্যন্ত, মিরপুর ২ নম্বর গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সামনের সড়ক, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মাজার রোড, নূরজাহান রোড, আসাদগেট, কলেজগেট থেকে জেনেভা ক্যাম্পের দিকের রাস্তা, পুরান কচুক্ষেত এলাকা প্রভৃতি।
৪০ চক্র সক্রিয়: মহানগর পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্র জানায়, রাজধানীতে অন্তত ৪০টি ছিনতাইকারী চক্রের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব চক্রের তিন শতাধিক সদস্য সক্রিয় আছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মলম পার্টি হিসেবে পরিচিত ১২টি ছিনতাইকারী চক্রও রাজধানীতে তৎপর আছে।
No comments