পবিত্র কোরআনের আলো-রাসুলের দায়িত্ব সত্যের বাণী কেবল মানুষের কাছে পেঁৗছে দেওয়া

৭৮. আইনা মা-তাকূনূ ইউদ্রিক্কুমুল মাওতু ওয়ালাও কুনতুম ফী বুরূজিম্ মুশাইয়্যাদাহ; ওয়া ইন তুসিবহুম হাছানাতুন ইয়াক্বূলূ হা-যিহী মিন ই'নদিল্লাহি; ওয়া ইন তুসিবহুম ছায়্যিআতুন ইয়াক্বূলূ হা-যিহি মিন ই'নদিক; ক্বুল কুল্লুম্ মিন্ ই'নদিল্লাহি; ফামা-লি হা-উলা-য়িল ক্বাওমি লা-ইয়াকা-দূনা ইয়াফক্বাহূনা হাদীছা।


৭৯. মা আসা-বাকা মিন্ হাছানাতিন ফামিনাল্লাহি ওয়ামা আসা-বাকা মিন ছায়্যিআতিন ফামিন্ নাফছিকা ওয়া আরছালনা-কা লিন না-ছি রাসুলা; ওয়াকাফা বিল্লাহি শাহীদা।
৮০. মান ইউতি্বয়ি'র্ রাসুলা ফাক্বাদ আত্বা-আ'ল্লাহা ওয়া মান তাওয়াল্লা ফামা আরছালনা-কা আ'লাইহিম হাফীয্বা। [সুরা : আন নিসা, আয়াত : ৭৮-৮০]
অনুবাদ
৭৮. তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, তোমরা যদি মজবুত দুর্গেও থাকো, সেখানেও মৃত্যু এসে হাজির হবে। যখন তাদের ভালো কিছু হয় তখন তারা বলে, এটা তো আল্লাহর তরফ থেকেই এসেছে, অপরদিকে তারা যখন কোনো ক্ষতির মধ্যে পড়ে তখন বলে এসব তো এসেছে আপনার কারণে। (হে নবী) আপনি বলে দিন, ভালো-মন্দ সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। এ জাতির হয়েছেটা কি, এরা কথাও বুঝতে চায় না!
৭৯. (হে নবী!) যে কল্যাণ আপনি লাভ করেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, আর যে ক্ষতি আপনার ওপর নিপতিত হয়েছে তা এসেছে আপনাদের নিজেদের কাছ থেকে। আমি আপনাকে মানুষের জন্য রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছি; আর সাক্ষী হিসেবে তো আল্লাহই যথেষ্ট।
৮০. যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের ওপর আমি আপনাকে প্রহরী বানিয়ে পাঠাইনি।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলো আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানে মুনাফিকদের এবং দুর্বল চরিত্রের দোদুল্যমান লোকদের প্রসঙ্গ বলা হয়েছে। মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং ইসলাম রক্ষার জন্য যখন যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে তখনো তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গড়িমসি করত মৃত্যুর ভয়ে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, মৃত্যু যখন আসার তখন আসবেই। যুদ্ধক্ষেত্রেও আসবে, ঘরেও আসবে। এমনকি মজবুত দুর্গের মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও মৃত্যু সেখানে যথাসময়েই আসবে। কিন্তু তারা এটা বুঝতে চায় না। এসব মুনাফিক ও দুর্বলচিত্তের লোকদের একটা প্রবণতা ছিল, এরা যখন দেখত ভালো একটা কিছু ঘটে গেছে, যেমন যুদ্ধে জয় এসে গেছে বা প্রচুর গণিমতের মাল হস্তগত হয়ে গেছে তখন তারা বলত এসব আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়েছে। আবার যখন দেখত, যুদ্ধে পরাজয় এসে গেছে বা জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে তখন তারা বলত এটা রাসুলের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই হয়েছে। তারা রাসুলের সমালোচনা করত এবং কোনো কিছুর কৃতিত্ব রাসুলকে দিতে চাইত না।
রাসুল যা কিছু করেন তা আল্লাহর ইচ্ছায়ই করেন। সুতরাং তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার নয়। কিন্তু দোদুল্যমান এসব লোকের ইমান অতি দুর্বল। তারা সুবিধা দেখলেই ইসলামের দিকে আসত এবং অসুবিধা দেখলেই ইসলাম থেকে বেরিয়ে যেত। রাসুলের সমালোচনা করাটাও ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ারই একটা আলামত। ৮০ নম্বর আয়াতে বিষয়টা বেশ পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ইমান আনে রাসুলের ওপর তাঁকে ইমান আনতেই হবে। রাসুলের ওপর বা রাসুলের নিষ্পাপতার ওপর ইমান না আনলে কোনো ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না। পরিশেষে এ আয়াতে বলা হয়েছে, রাসুলকে আমি পথভ্রষ্ট মানুষের ওপর প্রহরী করে পাঠাইনি। অর্থাৎ মানুষকে হেদায়েত করার গুরুদায়িত্ব আমি রাসুলকে দেইনি। রাসুল শুধু মানুষের কাছে সত্যের বার্তা পেঁৗছে দেবেন। যারা সেই বার্তা শুনে মুখ ফিরিয়ে রাখল তাদের সুপথে আনার দায়িত্ব রাসুলের নয়। খারাপ লোকদের জন্য রাসুল দায়বদ্ধ নয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.