টিকার আদি কথা
উনিশ শতকের আগে জলবসন্ত একটি প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল এবং এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত প্রায় ৩৩ শতাংশ রোগীই মৃত্যুবরণ করত। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ রোগের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি সম্ভব হয়েছে জলবসন্তের টিকা আবিষ্কারের কারণে।
আর এ জলবসন্তের টিকা আবিষ্কারের মাধ্যমেই টিকার ধারণা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জলবসন্তের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন এডওয়ার্ড জেনার নামের একজন ইংরেজ চিকিৎসক। জেনার ১৭৪৯ সালের ১৮ মে ইংল্যান্ডের বার্কলে নামক এক ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সেন্ট জর্জ হাসপাতালে পড়ালেখা করার সময় জেনারের তত্ত্বাবধান করতেন জন হান্টার নামের একজন সার্জন। জেনার হান্টারের ‘চিন্তা করো না, চেষ্টা করো’ এ ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বেশি।
জেনার ডাক্তারি পড়া শেষে তাঁর নিজের শহর বার্কলেতে ফিরে যান এবং সেখানেই তাঁর ডাক্তারি পেশা শুরু করেন। তাঁর রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন কৃষক বা রাখাল। ১৭৮৮ সালের দিকে জলবসন্ত যখন মহামারি রূপ নেয়, তখন জেনার খেয়াল করলেন যেসব মানুষ কোনো না কোনো সময় তুলনামূলকভাবে কম বিপজ্জনক রোগ গো-বসন্ত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা কখনো জলবসন্ত দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে না। তাই তিনি ধারণা করেন, গো-বসন্ত জলবসন্তকে প্রতিরোধ করে। কিন্তু ধারণা করলে তো হবে না, পরীক্ষা করে দেখতে হবে অনুমান ঠিক কি না। প্রায় আট বছর পর ১৭৯৬ সালের ১৪ মে জেনার সেই অনুমান বাস্তবে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পান। সারাহ নেলমস নামের এক গো-বসন্তে আক্রান্ত রোগী আসেন হাতে অনেক ফোসকাসহ। তিনি প্রথমে গো-বসন্ত ও জলবসন্ত আক্রান্ত রোগীর ফোসকা কিছু তরল জাতীয় পদার্থ সংগ্রহ করেন। তারপর জেনার পিপ নামের একজন কৃষকের কাছে যান এবং পরীক্ষাটি করার জন্য তাঁর ছেলে জেমসকে দেওয়ার জন্য বলেন। আশ্চর্যজনকভাবে সেই কৃষক তাঁর আট বছরের ছেলেকে দেওয়ার জন্য রাজি হন। জেনার ছেলের বাঁ বাহুতে দুটি ছিদ্র করেন এবং সেই ছিদ্র দিয়ে কিছু গো-বসন্তের ওই তরল শরীরে ঢুকিয়ে দেন। কিছুদিনের মধ্যে ছেলেটি গো-বসন্তের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ছয় সপ্তাহ পর জেমস সুস্থ হয়ে ওঠে। জেনার আবার ওই ছেলের দেহে ছিদ্র করেন এবং এবার তিনি জেমসের শরীরে জলবসন্তের জীবাণু ঢুকিয়ে দেন।
এবার কিন্তু জেমস জলবসন্তের জীবাণুতে আক্রান্ত হলো না। এ ফলাফল দেখে জেনার মহা খুশি, কারণ এ পরীক্ষা ব্যর্থ হলে জেমস মারা যেত আর তিনি একজন হত্যাকারী হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকতেন। জেনার তাঁর এই আবিষ্কারের নাম দেন ভ্যাক্সিনেশন (vaccination)। ভ্যাক্সিনেশন শব্দটি আসে লাতিন শব্দ ভ্যাক্সিনিয়া (vaccinia) থেকে, যার বাংলা অর্থ গো-বসন্ত। ধীরে ধীরে এই আবিষ্কার সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলবসন্তের পরিমাণ কমতে থাকে। আজ যে আমরা অনেক ধরনের ভ্যাক্সিন নিয়ে থাকি, তা জেনারের এই মহান আবিষ্কারের ধারাবাহিক ফলাফল। ধন্যবাদ জেনার!
বিশ্বজিৎ পোদ্দার গবেষণা সহকারী, সুনচুনইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়া
জেনার ডাক্তারি পড়া শেষে তাঁর নিজের শহর বার্কলেতে ফিরে যান এবং সেখানেই তাঁর ডাক্তারি পেশা শুরু করেন। তাঁর রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন কৃষক বা রাখাল। ১৭৮৮ সালের দিকে জলবসন্ত যখন মহামারি রূপ নেয়, তখন জেনার খেয়াল করলেন যেসব মানুষ কোনো না কোনো সময় তুলনামূলকভাবে কম বিপজ্জনক রোগ গো-বসন্ত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তারা কখনো জলবসন্ত দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে না। তাই তিনি ধারণা করেন, গো-বসন্ত জলবসন্তকে প্রতিরোধ করে। কিন্তু ধারণা করলে তো হবে না, পরীক্ষা করে দেখতে হবে অনুমান ঠিক কি না। প্রায় আট বছর পর ১৭৯৬ সালের ১৪ মে জেনার সেই অনুমান বাস্তবে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পান। সারাহ নেলমস নামের এক গো-বসন্তে আক্রান্ত রোগী আসেন হাতে অনেক ফোসকাসহ। তিনি প্রথমে গো-বসন্ত ও জলবসন্ত আক্রান্ত রোগীর ফোসকা কিছু তরল জাতীয় পদার্থ সংগ্রহ করেন। তারপর জেনার পিপ নামের একজন কৃষকের কাছে যান এবং পরীক্ষাটি করার জন্য তাঁর ছেলে জেমসকে দেওয়ার জন্য বলেন। আশ্চর্যজনকভাবে সেই কৃষক তাঁর আট বছরের ছেলেকে দেওয়ার জন্য রাজি হন। জেনার ছেলের বাঁ বাহুতে দুটি ছিদ্র করেন এবং সেই ছিদ্র দিয়ে কিছু গো-বসন্তের ওই তরল শরীরে ঢুকিয়ে দেন। কিছুদিনের মধ্যে ছেলেটি গো-বসন্তের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ছয় সপ্তাহ পর জেমস সুস্থ হয়ে ওঠে। জেনার আবার ওই ছেলের দেহে ছিদ্র করেন এবং এবার তিনি জেমসের শরীরে জলবসন্তের জীবাণু ঢুকিয়ে দেন।
এবার কিন্তু জেমস জলবসন্তের জীবাণুতে আক্রান্ত হলো না। এ ফলাফল দেখে জেনার মহা খুশি, কারণ এ পরীক্ষা ব্যর্থ হলে জেমস মারা যেত আর তিনি একজন হত্যাকারী হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকতেন। জেনার তাঁর এই আবিষ্কারের নাম দেন ভ্যাক্সিনেশন (vaccination)। ভ্যাক্সিনেশন শব্দটি আসে লাতিন শব্দ ভ্যাক্সিনিয়া (vaccinia) থেকে, যার বাংলা অর্থ গো-বসন্ত। ধীরে ধীরে এই আবিষ্কার সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলবসন্তের পরিমাণ কমতে থাকে। আজ যে আমরা অনেক ধরনের ভ্যাক্সিন নিয়ে থাকি, তা জেনারের এই মহান আবিষ্কারের ধারাবাহিক ফলাফল। ধন্যবাদ জেনার!
বিশ্বজিৎ পোদ্দার গবেষণা সহকারী, সুনচুনইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়া
No comments