সংকটেও যেখানে সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা!

গ্যাস সংকটের কারণে যখন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শত শত কলকারখানা বন্ধের উপক্রম, তখন সরকারি আদেশ উপেক্ষা করে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে জেলার বেশির ভাগ সিএনজি ফিলিং স্টেশন। অব্যাহত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পোৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে সম্প্রতি বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার


নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ওই সময়ে যানবাহনে গ্যাস না দেওয়ার জন্য সিএনজি স্টেশনগুলোকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারও করে দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিয়ে মালিকরা সিএনজি ফিলিং স্টেশন খোলা রাখছেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের গাজীপুরা ও তারগাছ এলাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে ছয়টি। সম্প্রতি বিকেল ৪টার পর ওইসব স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ছয়টির মধ্যে চারটিই খোলা। বিক্রি হচ্ছে গ্যাস। যেসব স্টেশন খোলা পাওয়া গেছে সেগুলো হলো- তারগাছের বেইজ সিএনজি, জ্যারোমা সিএনজি, সোসল সিএনজি ও আলম সিএনজি। ওইসব স্টেশনে যানবাহনের দীর্ঘ সারিও দেখা গেছে।
অন্যদিকে তিতাস গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই গাজীপুর শহরের হোসেন অ্যান্ড সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন গাজীপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ওই সিএনজি স্টেশনটি অবস্থিত। গাজীপুর তিতাস গ্যাস, থানা, পুলিশ সুপার বা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যেতে হলে ওই স্টেশনের সামনে দিয়েই যেতে হয়। তার পরও সবার চোখের সামনে ওই স্টেশনে অবাধে চলছে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস বিক্রি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তেলিপাড়ায় অবস্থিত সাগর অ্যান্ড সৈকত সিএনজি স্টেশনসহ আশুলিয়া সড়কের কামারপাড়া, আশুলিয়া, জামগড়, জিরাবো, বাইপাইল এবং টঙ্গী, গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, শ্রীপুর ও ভালুকা এলাকার শতাধিক সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখছেন মালিকরা।
গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর গাজীপুর শহরের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রবেশপথের উল্টো দিকে অবস্থিত হোসেন অ্যান্ড সন্স সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সারিতে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন।
প্রাইভেট কারচালক সোহাগ ও বলাকা সার্ভিসের একটি বাসের চালক আকতার হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, এ স্টেশন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। তবে বন্ধের সময় গ্যাস নিলে কিছু টাকা বেশি দিতে হয়। ক্রেতা সেজে জানতে চাইলে স্টেশনের মালিক মো. হোসেন জানান, ওসি থেকে শুরু করে এসপি-ডিসিসহ সব কর্মকর্তাই তাঁর কাছ থেকে গ্যাস নেন। এ ছাড়া গ্যাস অফিসের ম্যানেজারকেও দৈনিক কিছু দিতে হয়। এ কারণে সমস্যা হয় না। রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুরে কোথাও তিতাস গ্যাস কিংবা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাউকে সিএনজি স্টেশনগুলোতে দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন জয়দেবপুর আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সুজায়েত আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, 'ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। এখনই জানলাম। আজ তো আর সময় নেই। কাল থেকে সরকারি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

No comments

Powered by Blogger.