বিদ্যুতের অভাবে কমেছে ওয়াসার পানি সরবরাহ by হামিদ উল্লাহ

গ্রীষ্ম আসার আগেই চট্টগ্রামে বিদ্যুতের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে কমে গেছে ওয়াসার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ। গত ১৫ দিনে বিদ্যুতের কারণে পানির উৎপাদন কমেছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ। চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


ওয়াসা সূত্র জানায়, মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে পানি তুলে তা আগ্রাবাদ এলাকায় পৌঁছাতে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের প্রয়োজন হয়। মাঝখানে একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে পানি ওপরের দিকে তোলার গতি থেমে যায়। ফলে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। অথচ ওয়াসা উৎপাদিত পানির অর্ধেকই পাওয়া যায় মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে।
বিদ্যুৎঘাটতির কারণে নগরের বিভিন্ন স্থানে ওয়াসার ৭৫টি গভীর নলকূপেও পানির উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে। গভীর নলকূপগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ওয়াসার সঙ্গে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সমঝোতা আছে। কিন্তু এর পরও নলকূপগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। পানির উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এক বছর আগে ১৯টি জেনারেটর কিনেছিল ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। তবে প্রয়োজনের তুলনায় জেনারেটর অপ্রতুল বলে জানান ওয়াসার কর্মকর্তারা। পাশাপাশি প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় জেনারেটরগুলোতে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পানির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলা করতে জেনারেটরগুলো চালু রাখা হচ্ছে। রাতে লোডশেডিং কম, তাই এ সময় যাতে সবগুলো পাম্প চালু রাখা হয় সে ব্যাপারে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবির) প্রধান প্রকৌশলী মো. রইস উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। তবে এ মাসের শেষদিকে অবস্থার অবশ্যই উন্নতি হবে। তখন বিদ্যুৎ কিংবা পানির সংকট অনেকটা কমে যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
একদিকে উৎপাদন কম আর অন্যদিকে পানির চাহিদা বেড়েছে। ফলে পানির অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন সড়কে স্থাপিত পানির কলগুলোতে নিয়মিত পানি আসে না। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী নিম্ন আয়ের লোকজন ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পান না। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয় তাঁদের।
নগরের অক্সিজেন এলাকার বস্তিতে বসবাসকারী পোশাকশ্রমিক খাদিজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়ির মালিক ওয়াসার পানি ধরে রাখার জন্য একটি কুয়া তৈরি করেছেন। এখানে অল্প পানি আসায় আগে পালা করে সপ্তাহে একবার গোসল করতাম। কিন্তু এখন ১০ দিনেও গোসল করা হয় না। যে সামান্য পানি এখানে আসে, তা দিয়ে রান্নার কাজও হয় না।’
একইভাবে নগরের যেসব বাড়িতে গভীর নলকূপ নেই সেখানেও পানির সংকট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটিও হচ্ছে। পশ্চিম বাকলিয়ার মৌসুমি এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্ষা ও শীতকালটা কোনোমতে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু গরমের মৌসুমে মনে হচ্ছে নরকের মধ্যে আছি। বাড়িওয়ালাকে পানির সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকবার বলেছি। কিন্তু তাঁর গভীর নলকূপ নেই। মাঝেমধ্যে পাশের বাড়ির জলাধার থেকে কিছু পানি ধার করে কাজ চালাই।’

No comments

Powered by Blogger.