ঝড়-বজ্রপাতে ১০ জনের মৃত্যু

রাঙামাটি, নীলফামারী, বরিশাল, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ঢাকার নবাবগঞ্জে শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ঝড়-বজ্রপাতে কৃষক, শিক্ষার্থীসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বজ্রপাতে সাতজন ও ঝড়ের সময় নৌকা ডুবে মারা গেছে দুজন। ঘরচাপায় মারা গেছেন এক গৃহবধূ।


এ ছাড়া রাঙামাটি ও নীলফামারীতে কালবৈশাখী এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় টর্নেডো হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চাঁদপুরে ঝড়ের সময় ডুবে গেছে পাথরবোঝাই একটি বলগেট। ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ বলগেটের সুকানি।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রাঙামাটি: রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় শুক্রবার ঝড়ের সময় নৌকা ডুবে কুদ্দুছ মাঝি (৫২) ও আবদুল মান্নান (৫১) নামের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। লংগদু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, শুক্রবার ভাইবোনছড়া এলাকায় নৌকা নিয়ে ঘাস সংগ্রহ করতে যান পাঁচ ব্যক্তি। বিকেলে ফিরে আসার সময় আকস্মিক কালবৈশাখীতে তাঁদের নৌকা উল্টে যায়। এ সময় তিনজন কোনোমতে সাঁতার কেটে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও কুদ্দুছ ও মান্নান পানিতে তলিয়ে যান। মাছ ধরার জাল ফেলে রাতে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অন্যজনের লাশ গতকাল দুপুরে ভেসে ওঠে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ): উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পৃথক স্থানে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বজ্রপাতে মারা গেছেন নোয়ানগর গ্রামের ঝরনা বেগম (৩৫) ও লামাগাঁও গ্রামের ইজাজুল ইসলাম (১৫)। আহত হয়েছে নোয়ানগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের সন্তান আয়াতুল (২) ও সূর্যমণি (৯)। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সরকার জানান, বজ্রপাতের সময় ঝরনা বেগম ছিলেন রান্নাঘরে। আর কিশোর ইজাজুল মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়েছিল। অন্যদিকে ঘরের বারান্দায় ছোট বোনকে কোলে নিয়ে বসেছিল তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সূর্যমণি।
নীলফামারী: শুক্রবার সন্ধ্যায় বজ্রপাতে জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার রণচণ্ডী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের ধরকা মাহমুদের স্ত্রী আমেনা বেগম (৫৫) মারা যান। ওই সময় নীলফামারী সদর, কিশোরগঞ্জ, ডোমার ও জলঢাকা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কালবৈশাখীতে ভুট্টা, মরিচ ও তামাকখেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিধ্বস্ত হয় দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উড়ে যায়। উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছপালা।
পঞ্চগড়: জেলার বিভিন্ন স্থানে গত শুক্রবারের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে। পাকা গম, ভুট্টা, আম, লিচু, টমেটো, মরিচ, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই দিন ঝড়ের সময় ঘরচাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায় বোদা উপজেলার মাঝগ্রামের বাসিন্দা সোলায়মানের চার মাসের মেয়ে সাদিয়া এবং আহত হন তাঁর স্ত্রী গোলাপ (২৮)। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় গোলাপের।
কুষ্টিয়া: গতকাল বেলা ১১টার দিকে জেলার মিরপুর উপজেলার ধলসা গ্রামের নিজ খেতে কাজ করছিলেন কৃষক উমর আলী (৪৫)। ওই সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। একই উপজেলার কচুবাড়িয়া, বিজনগর, মোশারফপুর ও শিংপুর গ্রামে গতকাল পৃথক বজ্রপাতে আহত হয়েছেন শফিকুল ইসলাম (২৫), আশানারা খাতুন (২০), সাপাত আলী (৩০), আনিসুর রহমান (৪২) ও হীরা খাতুন (৫৫)। সকাল আটটার দিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলার গোয়াল গ্রামে বজ্রপাতে আহত হন মজিবর রহমান (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী টুলি বেগম (৪৮)।
চুয়াডাঙ্গা: আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী গ্রামে বজ্রপাতে মারা গেছেন কৃষক কোরবান আলী মণ্ডল (৫৫)। স্বজনেরা জানান, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টির সময় পাশের মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই কোরবানের মৃত্যু হয়।
বরিশাল: আগৈলঝাড়া উপজেলার ডোনারকান্দি গ্রামে গতকাল দুপুরে বজ্রপাতে দগ্ধ হয়ে বাবুল ঢালী (৩৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক নিরঞ্জন বৈষ্ণব জানান, বেলা দুইটার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন বাবুল। পথে বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
নবাবগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের বিলপল্লী গ্রামে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বজ্রপাতে আহত হন আবদুর রহমান (৫০) নামের এক বাসিন্দা। নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী): উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে গতকাল দুপুরে আকসিঞ্চক টর্নেডোর আঘাতে শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় গাছ ও ঘরের চাল পড়ে আহত হয়েছে শিশুসহ ১৩ জন।
চাঁদপুর: ঝড়ের সময় গতকাল বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মোলহেড এলাকায় পাথরবোঝাই বলগেট ‘এমভি মনির’ নদীর তীরের কাছাকাছি ভেড়ানো হয়। ওই সময় হঠাৎ করে বলগেটটি মেঘনা নদীতে তলিয়ে যায়। এর পর থেকে নিখোঁজ বলগেটের সুকানি মাহবুব বাহাদুর (৫৪)। কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. জহুরুল হক বলেন, বলগেট ও নিখোঁজ মাহবুবকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.