শাকিরার ফুটবল-প্রেম

পপ সংগীতশিল্পী— জগৎজুড়ে এটাই পরিচয় শাকিরার। ফিফাডটকমের এই সাক্ষাৎকারে শিল্পীসত্তা ছাপিয়েও তিনি ফুটবলের বড় ভক্ত শাকিরা, ফুটবলের সঙ্গে আপনি কীভাবে জড়ালেন? শাকিরা: ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে আমাকে গান গাইতে বলা হলো। আমার সৌভাগ্য, ২০১০ সালেও আমাকে ডাকা হলো।


আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় সময় আমি ওখানেই কাটিয়েছি। দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিশ্বকাপটা ব্যক্তিগত ও পেশাগত—এ দুই ক্ষেত্রেই আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। শত শত কোটি মানুষের জীবনে এই খেলাটার গুরুত্ব ও প্রভাব এই বিশ্বকাপগুলোর মধ্য দিয়েই আমি বুঝেছি। স্বপ্নপূরণের জন্য খেলাটার পেছনে তরুণ ও শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে দেখেছি। দেখেছি, পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য ফুটবল অনুরাগী। আর এভাবেই আমি ধীরে ধীরে ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম।
এ সময়ে কোন বিষয়টি আপনার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে?
শাকিরা: বিশ্বকাপের মতো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অধিক মাত্রায় সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়। হাজার হাজার মানুষ এর সঙ্গে জড়িয়ে; তারা কাছাকাছি হয় এবং একই পতাকাতলে সমবেত হয়। সামাজিক এই বিস্ময়গুলো সত্যিই আমাকে টানে। এ ছাড়া ফিফা তাদের ‘ওয়ান গোল’ প্রচারণার মাধ্যমে যে পরিমাণ সমাজসেবামূলক কাজ করছে, তাতে আমি বিস্মিত। আর আমি এর অংশ হয়েই কাজ করছি। সব মিলিয়ে এগুলো আমার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধই করেছে। এর মাধ্যমে আমার সবচেয়ে বড় আগ্রহের বিষয়, শিক্ষার প্রসার নিয়ে কাজ করতে পারছি। এখন ফুটবলও আমার বাসায় আলোচনার প্রধান বিষয় (হেসে)। আমি এটা বুঝতে পারছি, ফুটবল আমার পিছু নিয়েছে আর আমিও এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।
কলম্বিয়ায় তো ফুটবল অনেক জনপ্রিয়। আপনার পরিবারও এর ভক্ত?
শাকিরা: আমার ভাইয়েরা ভক্ত, কিন্তু আমার বাবা কখনোই ফুটবল নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন না। এখন যেহেতু তাঁর মেয়ে একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে ঘুরছে-ফিরছে, তাই তিনি কিছুটা আগ্রহী হয়েছেন। আমার মনে হয়, তিনি এখন অফসাইডটাও বুঝতে শিখেছেন! আসলে আমার বাবা হচ্ছেন একজন বইপোকা মানুষ; বেশি আগ্রহ বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে। কিন্তু ফুটবলের আকর্ষণ এড়ানোটা অসম্ভব। এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা আগে হয়তো আগ্রহী ছিলেন না, কিন্তু এখন ফুটবলে মজেছেন।
আপনার নিজের অভিজ্ঞতাটা তো এ রকমই...
শাকিরা: আপনি ফুটবল বুঝতে শিখলে এটাও বুঝবেন, শুধু শারীরিক ব্যাপার আর বলের পেছনে ছোটাছুটির মধ্যেই ফুটবল খেলাটা সীমাবদ্ধ নয়। এটা একটা কৌশলগত খেলা, যেখানে অনেক বুদ্ধির দরকার। এটা অনেকটাই মনোবৃত্তিক একটা খেলা।
আপনি কি পুরো খেলা দেখার মতো সময় পান?
শাকিরা: হ্যাঁ, অবশ্যই।
পিকের খেলা না থাকলেও কি দেখেন?
শাকিরা: হ্যাঁ (হেসে)। যেহেতু আমার বেশ কৌতূহল, তাই অন্য ম্যাচগুলোও দেখি আমি, আর চেষ্টা করি আরও বেশি কিছু জানতে। অন্য দলগুলো কী করে, সেটাও দেখি। তবে তাঁর (পিকে) ম্যাচগুলো সব সময়ই দেখি।
কোনো ফুটবলারের সঙ্গে মেশাটা কি একটু কঠিন নয়? এত এত ট্রেনিং, খেলা আর ভ্রমণ...
শাকিরা: কোনো শিল্পীকে সঙ্গী হিসেবে পাওয়াটাও খুব একটা সহজ ব্যাপার নয় (হেসে)। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি বুঝি পেশা হিসেবে এটা কতটা কঠিন। এতে নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দিতে হয়, দায়বদ্ধ থাকতে হয়; দরকার নিয়মানুবর্তিতা ও দলীয় সমন্বয়েরও। আমি যা করি, তা থেকে এটা পুরোপুরি আলাদা। নিজেকে ছাড়া অন্য কারও কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হয় না। কিন্তু একজন ফুটবলার হচ্ছেন সৈনিকের মতো। মাঠ ও মাঠের বাইরে তাঁর অনেক দায়িত্ব। এটা বোঝার ও প্রয়োজনে জেরার্ডকে সাহায্য করার দয়িত্বটা পুরোপুরিই আমার।
কখনো ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছেন?
শাকিরা: আমি গান গাইতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, আর ভক্তরা সেটাই চায়। জেরার্ড বেশ কয়েকবার আমার সঙ্গে খেলার চেষ্টা করেছে। তবে আমি বলব না, আমি ভালো খেলতে পারি।
এরই মধ্যে দুটি ফিফা বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন। পরেরটা তো ব্রাজিলে। দক্ষিণ আমেরিকা বিশ্বকাপেও আপনার থাকার সম্ভাবনা। এতে কি আপনি রোমাঞ্চিত?
শাকিরা: অবশ্যই! ব্রাজিল দেশটা আমার খুব প্রিয়, যেখানে আমার অনেক ভক্ত রয়েছে, যাদের সঙ্গে আমার অনেক দিনের যোগাযোগ। এ ছাড়া ইভেতে সাঙ্গালোর মতো শিল্পীও রয়েছেন, আর পেলের মতো মহাতারকা তো আছেনই। ওই বিশ্বকাপে যেতে চাই আমি। ঠিক জানি না কী ভূমিকায়। তবে এটা নিশ্চিত, আমি ওখানে থাকবই। আমি জানি, কেউ ওটা মিস করতে চাইবে না, অন্তত আমি তো নই-ই।
ফুটবল-সম্পর্কিত আপনার সামাজিক প্রকল্পগুলো নিয়ে কিছু বলবেন?
শাকিরা: আমি নিশ্চিত, খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষণা শিশুদের শিক্ষিত করে তোলার বেশ ভালো একটি মাধ্যম। আসলে এফসি বার্সেলোনা ও আমার নিজের পিয়েস ডেসক্যালজোস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্কুলগুলোকে আরও বেশি করে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করছি। এসব স্কুলের কিছু আমরা নিজেরাই বানিয়েছি। আর এগুলো তৈরি হয়েছে এমন জায়গায়, যেখানে শিশুরা খুব দারিদ্র্য ও অবর্ণনীয় অবস্থায় বাস করে। এ ছাড়া ফিফার ‘ওয়ান গোল’ কর্মসূচির সঙ্গেও যুক্ত আছি আমি। এ কর্মসূচির জন্য ওয়াকা ওয়াকা অ্যালবাম বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করেছি। সমাজসেবামূলক ফুটবল অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা আমি উপভোগ করি। কারণ, খেলাধুলার মাধ্যমেই শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকাশ সম্ভব বলে মনে করি আমি। এ ছাড়া তাদের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে ও অন্যের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে ফুটবল।
ভাষান্তর: সোলায়মান পলাশ

No comments

Powered by Blogger.