৮০ লাখ টাকার দোকান এক লাখ টাকায়! by হামিদ উল্লাহ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় ২২০ বর্গফুট আয়তনের দুটি দোকান বিক্রি করা হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকায়। এতে প্রতি বর্গফুট জায়গার দাম পড়েছে মাত্র ২২৭ টাকা। অথচ, গত জানুয়ারি মাসে ওই দোকানের পাশেই চারটি দোকান বিক্রি হয়েছে প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৫০ টাকায়।


সে হিসাবে দোকান দুটির দাম পড়ে ৭৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। দোকান দুটি পেয়েছেন মেয়রের একান্ত সহকারী মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও মেয়র কার্যালয়ের পিয়ন (এমএলএসএস) আবদুল মান্নান।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি কামরুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী শামীমা হাসানের নামে এবং আবদুল মান্নান নিজ নামে মেয়রের কাছে দোকান দুটির বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন। সিটি করপোরেশনের ভূমি কর্মকর্তা আহমদুল হক গত ১২ মার্চ দোকান বরাদ্দের অনুমোদন দেন।
ভূমি শাখা থেকে আবেদনকারীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে মেয়রের অনুমোদন রয়েছে। তবে মেয়র কবে অনুমোদন দিয়েছেন, চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আহমদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দোকান বরাদ্দে মেয়র মহোদয়ের অনুমোদন রয়েছে। ওপর থেকে ফাইল এলে আমাদের তো স্বাক্ষর না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর দশজনের মতো যদি দোকান বরাদ্দ হয়, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তার চেয়ে কম দামে দেওয়া হলে অবশ্যই অন্যায় হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে আমি ঢাকায় রয়েছি। দুই দিন পরে আসব। তখন ফাইল দেখে বলতে পারব, ন্যায়-অন্যায় কী হয়েছে।’
দোকানের বরাদ্দ নেওয়া শামীমা হাসানের স্বামী ও মেয়রের একান্ত সহকারী মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের সিঁড়িঘরের পাশের দোকান হওয়ায় এগুলোতে ভালো বেচাবিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বড়জোর পানের দোকান দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘শপিং কমপ্লেক্সের মতো জায়গায় একটি দোকান পেলে তো আমার জন্য খুবই ভালো।’
কামরুল ইসলামের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর তিনি নিজেই ফোন করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো দোকান বরাদ্দ নিইনি।’ তাহলে দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাঁর আবাসস্থল দেওয়ানবাজার মাছুয়া ঝর্না লেনের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা কার?—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কতো লোকই তো থাকতে পারে।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল শনিবার মেয়র কার্যালয়ের পিয়ন আবদুল মান্নানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। প্রথমে তিনি ফোন ধরেননি। পরে তা বন্ধ করে দেন। জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসেও নগরের মাদারবাড়িতে সিটি করপোরেশনের নির্মিত একটি ফ্ল্যাট বাজারদরের চেয়ে কম দামে বরাদ্দ নেন মেয়রের একান্ত সহকারী কামরুল ইসলাম। সে সময় সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কম দামে ফ্ল্যাট নেন। এ ব্যাপারে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মেয়র ওই বরাদ্দ প্রথমে স্থগিত এবং পরে বাতিল করেন।
এ বিষয়ে মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাঁর অজান্তে কামরুল হাসান ও আবদুল মান্নান দোকানের বরাদ্দ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে থাকতে পারেন। মেয়র বলেন, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন এবং দোষী হলে অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.