মনস্কামনা পূরণ হয়েছিল? by আসিফ আহমদ

খনিতে স্বর্ণ, হীরা বা এ ধরনের সম্পদ থাকলে তা উত্তোলন করে মানুষ ব্যবহার করে। কোথাও খনিজসম্পদের সন্ধান মিললে প্রথমে অবশ্যই দেখা হয় তা উত্তোলনযোগ্য কি-না। বিশেষ করে দেখা হয় কস্ট-বেনিফিট। অর্থাৎ কতটা অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে কী পরিমাণ সম্পদ মিলবে।


ভারতের কেরালা রাজ্যের শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে যে সোনা-রূপা-মণি-মুক্তার সন্ধান মিলেছে, পরিমাণ ও মূল্যের দিক থেকে তাকে রীতিমতো খনির সঙ্গেই তুলনা করা চলে। কেউ বলছেন, এর অর্থমূল্য ৫০ হাজার কোটি রুপি, কেউবা বলছেন এক লাখ কোটি রুপি। এ ভাণ্ডারে একটি নেকলেস মিলেছে ৬ মিটার বা ১২ হাতেরও বেশি লম্বা। মানুষের জন্য তা গড়ানো হয়নি বরং নিবেদন করা হয়েছে দেবতাকে। মন্দিরের ভূগর্ভস্থ কুটিরে এসব সম্পদ গচ্ছিত রয়েছে। একটি সিন্দুক এখনও খোলা হয়নি, যার কপাট অন্তত ১৪০ বছর ধরে বন্ধ। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে রাজা ত্রাভানকোরের আমলে। ভক্তরা অকাতরে সেখানে জমা করছে মূল্যবান সামগ্রী। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে ত্রাভানকোর রাজপরিবারের বংশধরদের মনোনীত একটি ট্রাস্ট এ মন্দিরের সম্পদ হেফাজত করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন, যাদের কাজ হচ্ছে সেখানে কী সম্পদ রয়েছে তার হিসাব প্রণয়ন ও প্রকাশ। একজন আইনজীবী মন্দিরের সম্পদ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না বলে ট্রাস্টিদের সম্পর্কে অভিযোগ জানানোর পর আদালত এ আদেশ দেন। এ মন্দিরের সম্পদ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের পর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এটা হবে ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালী মন্দির। অন্ধ্র প্রদেশের থিরুপতির বালাজি মন্দিরের সম্পদের পরিমাণ হিসাব করা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি রুপি। মহারাষ্ট্রের সাঁইবাবা মন্দিরেও রয়েছে প্রচুর সম্পদ। কেরালার মন্দিরটিতে সম্পদ যা-ই থাকুক না কেন, তার প্রতি ভক্ত ও পর্যটকদের আকর্ষণ বেড়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। আর যদি তারা ধনের হিসাবে এক নম্বরে উঠে আসে তাহলে আরও কত কত সম্পদ যে জমা পড়বে, তার হিসাব কষা সত্যিই কঠিন হবে।
কয়েক দিন আগে নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুতে একটি রাজপ্রাসাদে ৩০০ কেজির বেশি স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলঙ্কার পাওয়া গেছে। এগুলোর বয়সও পাঁচশ' বছরের বেশি। প্রাসাদটির নাম হনুমান ধোকা প্রাসাদ। মাল্লা শাসকরা এটি নির্মাণ করেন। তাদের পরাস্ত করেছিলেন ১৯৬৮ সালে নেপালের প্রতিষ্ঠাতা পৃথ্বীনারায়ণ শাহ। এখন নেপালে রাজতন্ত্র নেই। জনগণের আন্দোলনের ফলে তার অবসান ঘটেছে। তবে রাজপ্রাসাদের প্রতি রয়েছে আকর্ষণ। বিশ্বের অন্য যেসব দেশে রাজতন্ত্র ছিল সেখানেও সোনা-মুক্তা-হীরক ছিল অঢেল। দর্শনীর বিনিময়ে এসব এখন জনসাধারণকে দেখতে দেওয়া হয়।
কেরালার পদ্মনাভস্বামী কিংবা অন্য মন্দিরের সম্পদের সঙ্গে অবশ্য রাজপরিবারের সম্পদকে এক করে দেখা চলে না। রাজা-বাদশারা জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজেদের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন। কিন্তু ভক্তরা দেবতার উদ্দেশে অনেক কিছুই নিবেদন করে থাকে। এর বিনিময়ে তাদের সম্পদের প্রার্থনা থাকে। শত্রুর বিনাশ চাওয়া থাকে। পুত্র সন্তান চাওয়া থাকে। কেউ কন্যা চেয়েছে_ এমন অবশ্য শোনা যায় না। তবে ধর্মে আস্থা যাদের, তারা সবসময় বিনিময়ে কিছু পেতে চায়_ এমনটি নাও হতে পারে। পরকালে মুক্তির বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য অনেক কিছু দেবতার জন্য নিবেদন করতে দ্বিধা থাকে না। কেরালার মন্দিরে যারা সম্পদ দান করেছিলেন, তাদের নামধাম জানার উপায় হয়তো থাকবে না। কারা কী কী কারণে এসব উৎসর্গ করেছিল, সেটা অজানা থেকে যাবে। তাদের মনস্কামনা কি পূরণ হয়েছিল, সেটাও কিন্তু জানার উপায় নেই। পরকালে কার কী ঘটেছে, সেটা কেউ কি মানুষকে জানাতে পেরেছেন?
 

No comments

Powered by Blogger.