মনিপুর স্কুলে মানববন্ধন-অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভর্তি চলছেই

র্তিতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রতিবাদে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে যখন মানববন্ধন হচ্ছিল, ভেতরে তখন অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভর্তি চলছিল। গতকাল শনিবার সকালে সেখানে এ রকম দৃশ্য চোখে পড়ে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁদের অনুরোধ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কানে তুলছে না কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন তাঁরা। গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে গেলে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে


প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার এবং তাঁর লোকদের হামলায় দুই নারী সাংবাদিকসহ পাঁচজন আহত ও লাঞ্ছিত হন। গতকাল সকাল নয়টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে শুরু হয় মানববন্ধন, চলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মানববন্ধনে অংশ নেন। ‘স্কুলের টাকায় মোহনা (কামাল মজুমদারের মালিকানাধীন টেলিভিশন) চলবে না’, ‘মজুমদারের বিচার চাই’, ‘ফরহাদের (প্রধান শিক্ষক) অপসারণ চাই’, ‘বাড়তি টাকা ফেরত চাই’ প্রভৃতি লেখা ছিল প্ল্যাকার্ডে। মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীদের একাংশ মূল ফটকের সামনে কামাল মজুমদারের শাস্তি এবং প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় দাঙ্গা পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ।
মানববন্ধনে বিলি করা প্রচারপত্রে সাংসদ কামাল মজুমদার ও ফরহাদ হোসেনের বিভিন্ন দুর্নীতির কথা তুলে ধরে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো: অবিলম্বে কামাল মজুমদার ও প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনকে অপসারণ করা, শিক্ষার্থীদের ভর্তির অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া, বর্ধিত বেতন প্রত্যাহার করা এবং গত দুই বছরে স্কুলের আয়-ব্যয়ের তদন্ত করা। অভিভাবকেরা এ ব্যাপারে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
একজন অভিভাবক বলেন, তাঁর স্বামী নিম্ন আয়ের চাকরিজীবী। আর তিনি গৃহিণী। এ অবস্থায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় একমাত্র ছেলেকে স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করাতে পারছেন না। কারণ, তাঁদের পক্ষে অনুদানের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। নতুন ভর্তির ক্ষেত্রে বাংলা সংস্করণে ভর্তি ফির সঙ্গে অনুদান হিসেবে ২০ হাজার এবং ইংরেজি সংস্করণে ২৭ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
আরেকজন অভিভাবক বলেন, তাঁর তিন সন্তান মনিপুর স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়ে। তাঁর স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে তাঁদের এমনিতেই হিমশিম খেতে হয়, তার ওপর ভর্তিতে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সন্তানদের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বাড়তি টাকা আদায়ের পাশাপাশি ৪০০ টাকা দিয়ে স্কুলের মনোগ্রামযুক্ত খাতা কিনতে বাধ্য করা হয়। খাতাগুলোর দাম বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি।
এদিকে মানববন্ধন চলার সময়ও বাড়তি টাকা নিয়েই স্কুলের ভেতরে ভর্তির কাজ চলছিল। মানববন্ধন শেষে সব অভিভাবক লাইন ধরে ভর্তির কার্যক্রমে অংশ নিতে দাঁড়িয়ে যান। এ সময় অভিভাবকেরা বলেন, ভর্তির সময় শেষ হয়ে যাবে বলে সন্তানদের একপ্রকার বাধ্য হয়েই বাড়তি টাকা দিয়ে ভর্তি করাতে হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে লিখিতভাবে কেউ কোনো অভিযোগ বা দাবি জানায়নি। কী ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব?’
তদন্ত প্রতিবেদন আজ জমা: মনিপুর স্কুলে উদ্ভূত ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি আজ প্রতিবেদন দেবে। কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশসহ প্রতিবেদন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ায় তথ্য অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে। এ জন্য প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির কিছু লোককে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রচারপত্রে যা আছে: মানববন্ধনে বিলি করা প্রচারপত্রে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের একটি কোচিং সেন্টার ছিল। সেখানে অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য এলাকাবাসী তাঁকে শাস্তি দেন ও জরিমানা করেন। তা ছাড়া তাঁকে স্থানীয় সাংসদ অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক অতীতে কোচিং থাকার কথা স্বীকার করলেও অন্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ভাই, মারলে হাত ধরা যায়, বললে তো আর মুখ ধরা যায় না।’

No comments

Powered by Blogger.