বিএনপি : রাজবাড়ী-২ আসন-কোন্দলের হাত ধরে পথচলা

রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে জেঁকে বসেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এখানে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাছিরুল হক সাবু এবং বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদের বাড়ি পাংশা উপজেলায় হওয়ায় এ বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনে রাজবাড়ীর দুটি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির


প্রার্থীরা। রাজবাড়ী-১ আসনে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম ও রাজবাড়ী-২ আসনে নাছিরুল হক সাবু সংসদ সদস্য হন। পরে সংসদ সদস্য সাবু জেলা কমিটির সভাপতি এবং খৈয়াম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা শুরু করেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দলের শীর্ষস্থানে অবস্থান করায় উভয় নেতাই কতিপয় ব্যক্তি ও গ্রুপের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। যে কারণে না পাওয়ার বেদনায় দলের অভ্যন্তরে প্রকাশ্য জন্ম নেয় বিদ্রোহী গ্রুপ। ওয়ান-ইলেভেন চলাকালে সাবু ও খৈয়াম গ্রুপ মাঠপর্যায়ে কিছুটা নীরব ভূমিকা পালন করে। এ অবস্থায় অ্যাডভোকেট এম এ খালেক, বিএনপির তরুণ নেতা অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া, হারুন-অর রশিদ ও আবদুস সালামের নেতৃত্বে তাঁদের অনুগতরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করাসহ মাঠপর্যায়ে সরব থাকেন। চরম প্রতিকূলতার মধ্যে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে খৈয়াম ও সাবু অংশগ্রহণ করেন এবং নির্বাচনে তাঁরা পরাজিত হন। সংগত কারণেই এ পরাজয়ের দায়ভার বিদ্রোহী গ্রুপকে দেওয়া হয়।
পরে কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয় এবং বিএনপি নেতা নইম আনসারীকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তবে নইম আনসারী খৈয়ামপন্থী হওয়ায় আহ্বায়ক কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই উল্টা পথে হাঁটা শুরু করেন। এ সময় নইম আসনারী গ্রুপ এবং খালেক গ্রুপ পৃথক সভা করে। তারা পৃথক দুটি জেলা কমিটি অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠায়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ জুন দুই গ্রুপের সমন্বয়ে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে।
অনুমোদিত এ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম এবং সাধারণ সম্পাদক হন তরুণ ব্যবসায়ী মো. হারুন-অর রশীদ হারুন। আর সদস্য পদ দেওয়া হয় জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবুকে।
কমিটি ঘোষণার দুই দিন পর ২৩ জুন সভাপতি খৈয়াম ও সাধারণ সম্পাদক হারুন ঢাকা থেকে প্রথমবারের মতো রাজবাড়ী আসেন। এ সময় জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে বিশাল শোডাউন করা হয়।
তবে গত ২৫ জুন ঘোষিত রাজবাড়ী জেলা বিএনপির নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবুর পাংশা পৌরসভার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলা বিএনপির নেতারা।
সাম্প্রতিক সময়ে জেলা কমিটির উদ্যোগে রাজবাড়ী-২ আসনের পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো ভেঙে নতুন কমিটি করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় দলীয় লবিং চালিয়ে নাছিরুল হক সাবু ওই কমিটিগুলো না ভাঙার জন্য কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে দিয়ে চিঠি ইস্যু করান।
মাঠপর্যায়ের সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলেন, পাংশার রাজনীতি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য সাবু, অন্যটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ। তবে জনসমর্থনের দিক দিয়ে সাবুর পাল্লা এখনো ভারী। কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ প্রদান করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বর্তমানে জেলা পর্যায়ে তা পালিত হচ্ছে না। তবে মাঝেমধ্যে পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় পালিত হয় দলীয় কর্মসূচি। ওই সব এলাকার নেতাদের দাবি, উভয় গ্রুপের সমন্বয় না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনের ফলাফল ফের ঘরে তোলা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
পাংশা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শওকত সরদার বলেন, স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে পুরনো নেতাদের চেয়ে এখন নতুন নেতাদের কদর বেশি। ফলে আগামী দিনে রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপির কর্মতৎপরতা আরো বেগবান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবু অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার করে বলেন, 'মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে রয়েছেন। আর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই সব প্রতিকূলতা দূর করা সম্ভব হবে।'
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ বলেন, 'রাজবাড়ী-২ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ নেই। আগামী দিনে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে এবং মাঠপর্যায়ে বিএনপির রাজনীতি সুসংহত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।'

No comments

Powered by Blogger.