চরাচর-অস্তিত্ব সংকটে উদবিড়াল by আজিজুর রহমান
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ (ডাব্লিউটিবি) বন্য প্রাণী-সংক্রান্ত এক তথ্য জানিয়েছে, বাংলাদেশে ৯০৩ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতি উভচর, ১২৬ প্রজাতি সরীসৃপ, ৬৫০ প্রজাতির পাখি এবং ১১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ১০ প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে। এ ছাড়া ৪৩ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। আর বেশ কয়েক প্রজাতি সংকটাপন্ন। এগুলো হচ্ছে : লজ্জাবতী বানর, পারইল্লা বানর, কুলু বানর, উল্লুক, রামকুত্তা, গেছোবাঘ,
চিতাবাঘ, ভালুক, শুশুক, বনছাগল, সেম্বার, বনরুই, বনবিড়াল, মুখপোড়া হনুমান, মেছোবাঘ, কাঁকড়াভুখ বেজি, কালো ভালুক, বাগডাসা, মায়া হরিণ এবং উদবিড়াল বা ভোঁদড়। গ্রামাঞ্চলে ভোঁদড় নামের প্রাণীটি উদবিড়াল নামে বেশি পরিচিত। উদ অর্থ পানি। পানির সঙ্গে এদের বেশি সম্পর্ক বলে নাম হয়েছে উদবিড়াল। আমাদের দেশে তিন-চার প্রজাতির উদবিড়াল দেখা যায়। এরা পানিতে সাঁতার কাটে, ডুব দেয়, কিন্তু একটানা পানিতে বাস করে না। পানি ও ডাঙ্গা সবখানেই এরা অবাধে বিচরণ করে। লোকালয়ের খুব কাছাকাছি নখহীন এক প্রজাতির উদবিড়াল বাস করে। উদবিড়ালদের মধ্যে এরা আকারে ছোট। এদের দেহের দৈর্ঘ্য ১৬ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার আর ওজন তিন থেকে চার কেজি। গায়ের রং হালকা বাদামি। বুক ও গলা সাদাটে। লোমশ শরীর। লোমগুলো ঘন ও তেলতেলে এবং জলরোধক। লেজ অনেকটা দাঁড়ের মতো। পাগুলো প্রায় হাঁসের মতো চ্যাপ্টা। এদের গোঁফ এন্টেনার কাজ করে। উদবিড়ালের নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকতে পারে না। নাকে ভাল্ব থাকে। প্রকৃতি তাদের এমনভাবে সৃষ্টি করেছে, যাতে পানিতে স্বচ্ছন্দে ডুব-সাঁতার কাটতে পারে। উদবিড়ালের প্রধান খাবার হচ্ছে মাছ। মাছ শিকারে এরা খুবই দক্ষ। গ্রামাঞ্চলে ঝোপঝাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় এখন ওরা আশ্রয় নিয়েছে বড় বড় বিল ও হাওর-বাঁওড় এলাকায়। মৎস্য শিকারিরা এদের ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে রশি বেঁধে নামিয়ে দেয় জলাশয়ে। এরা বড় বড় মাছ ধরে এনে শিকারিদের হাতে তুলে দেয়। বিনিময়ে এদের দেওয়া হয় ছোট ছোট মাছ। সুন্দরবন এলাকায় মাছ শিকারের জন্য শিকারিরা ব্যাপকভাবে উদবিড়াল ব্যবহার করে থাকে। চামড়ার লোভেও একশ্রেণীর মানুষ এদের অবাধে হত্যা করছে। ফলে এদের সংখ্যা কমতে কমতে এখন সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, ব্যাপকহারে বন উজাড়, অবাধে বন্যপ্রাণী শিকার, পরিবেশ দূষণ ও ভারসাম্যহীনতা, আবাসস্থল ধ্বংস, জলাশয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ফলে খাদ্যাভাব ইত্যাদির কারণে উদবিড়ালসহ অন্য বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন। আড়াই ডজনের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সরকারি আইন, বিধি ও অধ্যাদেশ থাকা সত্ত্বেও যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের এই করুণ পরিণতি।
আজিজুর রহমান
আজিজুর রহমান
No comments