বাণিজ্য মেলায় ভিড়ের সঙ্গে বিক্রিও বাড়ছে

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিক্রিও। মেলার সপ্তম দিন গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক লোক মেলায় আসে। গতকাল সকালে লোকসংখ্যা কিছুটা কম ছিল। তবে দুপুর হতে না হতেই ভিড় বাড়তে থাকে। স্রোতের মতো দল বেঁধে মানুষ মেলায় আসতে থাকে। একপর্যায়ে মেলাপ্রাঙ্গণে গাড়ি রাখার নির্ধারিত স্থান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তখন মাইকে শেরেবাংলা নগরের র‌্যাব কার্যালয়সংলগ্ন দ্বিতীয়


পার্কিংয়ে গাড়ি রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। একাধিক ব্যবসায়ী জানালেন, ছোটখাটো ত্রুটি ছাড়া এবারের মেলা অনেকটাই সুশৃঙ্খল। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার। ফলে শুরু থেকেই আগ্রহ নিয়ে মেলায় আসছে মানুষ। বিক্রিও বাড়ছে।
দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের পণ্যপ্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আসর এই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে মাসব্যাপী এই মেলায় বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ অংশ নিয়েছে।
মেলায় পাটের শতরঞ্জি, চট আর রঙিন কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দৃষ্টিনন্দন এক প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড। আবার পাটখড়ি দিয়ে বেড়া দেওয়া বাগান আর আলোকসজ্জায় তাদের ‘শতরঞ্জি’ প্যাভিলিয়নটি সহজেই চোখে পড়ার মতো।
এতে স্বাভাবিকভাবে দর্শনার্থীরা কৌতূহল নিয়ে একবার হলেও ঢুঁ মারছেন। কারুপণ্যের বিভিন্ন ধরনের শতরঞ্জি ক্রেতার সংখ্যাও কিন্তু মোটেই কম নয়।
নাজনীন ইসলাম নামের এক ক্রেতা বললেন, ‘স্টলের মতো সম্পূর্ণ দেশি উপকরণে তৈরি কারুপণ্যে শতরঞ্জি অনেক সুন্দর ও মানসম্পন্ন। প্রতিবছরই এখান থেকে শতরঞ্জি কিনি।’
কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, ‘এবার মেলায় আমাদের থিম হচ্ছে “পাট”। পাটকে আরও জনপ্রিয় করতেই ব্যতিক্রমী এই প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে কারুপণ্য কর্তৃপক্ষ।’ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানালেন, আট ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছে কারুপণ্য। শতরঞ্জি ছাড়াও পাটের ব্যাগ, ল্যাম্প শেডসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এখানে। প্রকারভেদে প্রতি বর্গফুট শতরঞ্জির দাম পড়বে ২০ থেকে শুরু করে ২২০ টাকা পর্যন্ত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিলের এক প্যাভিলিয়নে আছে বেশ কয়েকটি স্টল। চামড়ার জুতা, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, বেল্ট, পার্টস ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে এসব স্টলে। উন্নতমানের রুচিশীল এসব পণ্য বেশ ভালোই আকৃষ্ট করছে মেলায় আসা ক্রেতাদের। বিক্রিও ভালোই হচ্ছে বলে জানান একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী।
মেলায় মিরপুর সিরামিকস নিজেদের পণ্যসামগ্রী দিয়েই অন্য রকম স্টল তৈরি করছে। অনেকটা অভিজাত বাড়ির আদলে গড়া এই স্টলে বাড়ি তৈরির বিভিন্ন ধরনের টাইলস ও ইট পাওয়া যাচ্ছে। স্বল্প খরচে মনের মতো বাড়ি তৈরির উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ফাহাদ জানান, তাঁরা এমন ধরনের কিছু ইট তৈরি করেন, যা ব্যবহার করলে পলেস্তারা দেওয়া লাগে না। অনেক ক্ষেত্রে আবার রং করার ঝামেলাও নেই।
সপরিবারে গতকাল মেলায় এসেছিলেন ব্যাংকার মাজেদ আলম। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে ঘুরেফিরে কেনাকাটা করেছি। ছেলেকে পার্কে নিয়ে ঘুরে এসেছি।’ মেলার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও খাবারের দোকানে গলাকাটা দাম রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গতকালও পাকিস্তানের কয়েকটি প্যাভিলিয়নে সাজসজ্জার কাজ চলতে দেখা গেছে। অন্যদিকে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে কয়েকটি স্টল ছিল ফাঁকা। এমনকি মেলা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকলেও অনেক খাবারের দোকানে মূল্যতালিকা দেখা যায়নি।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলায় নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আজ (গতকাল) চার হকারকে অনুমতি ছাড়া মেলায় ব্যবসা করার দায়ে আটক করা হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.