কোটি টাকার বাড়ির ১শ' ফাইল গায়েব by শরীফুল ইসলাম
সরকারের হাজার কোটি টাকার বাড়ির ফাইল প্রতিনিয়ত গায়েব হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি দখলের কৌশল হিসেবে এক শ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজশে এসব সম্পত্তির ফাইল গায়েব করে দিচ্ছে একটি চক্র। পরে তারা সম্পত্তির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এর দাবিদার সেজে হাইকোর্টে রিট করছে। আর এ রিটের বিপরীতে যখন সরকার সম্পত্তিগুলোর প্রয়োজনীয় ফাইল দাখিল করতে পারছে না, তখন রায় চলে যাচ্ছে ওই জালিয়াত চক্রের হাতে। আর এটিকে পুঁজি করে তারা দখলে
নিচ্ছে সরকারি হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে এ ফাইল গায়েবের চিত্র ফুটে উঠেছে। তদন্তে দেখা গেছে, সরকারি পরিত্যক্ত বাড়ি সংক্রান্ত মামলার ফাইলই বেশি গায়েব হয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ১০০ বাড়ির মামলা সংক্রান্ত ফাইলের খোঁজ মিলছে না। এর মধ্যে রয়েছে_ মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বি ব্লকের ৬/২৪নং বাড়ি, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের সি ব্লকের ২/২, মোহাম্মদপুরের বি ব্লকে হুমায়ুন রোডের ১/১৯, পল্লবীর ২৪/৪ , ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার ৪/এ, পল্লবীর ৩ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির ফাইল। সরকার এ বাড়িগুলো নিয়ে মামলায় এগোতে পারছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলা মোকাবেলার জন্য ফাইল আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অফিসে পাঠানোর পর আর তার হদিস মিলছে না। তবে সলিসিটর অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক ফাইল তারা চেয়েও পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে। তাদের
কাছে যেসব ফাইল আসছে তা আবার ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এর বেশিরভাগই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গায়েব হচ্ছে বলে জানান সলিসিটর অফিসের এক কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একধরনের জালিয়াত চক্র সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা বের করছে। পরে তারা ওই বাড়ি দখল করতে তাদের পক্ষে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করছে। পাশাপাশি এ বাড়ি সংক্রান্ত যেসব মূল কাগজ সরকারের কাছে রয়েছে তা গায়েব করতে তারা সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করছে। এভাবে সংশ্লিষ্ট শাখার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ফাইল গায়েব করে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব খন্দকার শওকত সমকালকে বলেন, যেসব বাড়ির ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলোর ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এটি না পেলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর ফাইল গায়েবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও বের করতে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে ফাইল গায়েবের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ (৬)-এর মাধ্যমে দেশের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাড়ি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। মূলত ওই সময় যেসব বাড়ির মালিকদের পাওয়া যায়নি এবং বাড়ির মালিক হিসেবে কেউ দাবি করেননি, সেসব বাড়িই পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে পরিত্যক্ত বাড়িগুলো বিভিন্ন মূল্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। আবার নামমাত্র মূল্যে কাউকে কাউকে দান করা হয়। পরে আশির দশকে একটি গোষ্ঠী নিজেদের সরকারি কিছু বাড়ির দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯৮৫ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইন প্রণয়ন করে। আইন অনুযায়ী পরিত্যক্ত সরকারি বাড়িগুলোর বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেট প্রকাশের পর আইন অনুযায়ী কোর্ট অব সেটেলমেন্ট স্থাপন করা হয়। বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর কেউ দাবিদার হলে তিনি গেজেট প্রকাশের ১০৮ দিনের মধ্যে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে মামলা করতে পারবেন। এ আদালত তাদের মামলা বিবেচনায় এনে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় দেবেন; কিন্তু ওই সময় কোর্ট অব সেটেলমেন্টে বাড়ির দাবিদার হিসেবে যেসব মামলা করা হয় তার বেশিরভাগই মিথ্যা বিবেচিত হয়। পরে সরকারিভাবে যাদের কাছে পরিত্যক্ত বাড়ি বিক্রি করা হয় তাদের ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়; কিন্তু এসব বাড়ির দাবিদাররা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বাড়ি দাবি করে সরকারের বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট করে। এর বেশিরভাগ মামলায় তারা হেরে যায় আবার কিছু মামলা এখনও চলমান; কিন্তু পরবর্তী সরকারের আমলে ক্ষমতা গ্রহণের পর এসব জালিয়াত চক্র বাড়ি স্থায়ীভাবে দখলে রাখার কৌশল নেয়। তারা বিভিন্ন কর্মকর্তার যোগসাজশে ফাইল গায়েবের অভিযানে নামে। এতে তারা অনেকটাই সফল হয়।
আর ফাইল গায়েবের কারণে বর্তমানে শ'খানেক পরিত্যক্ত বাড়ি এখন সরকারের হাতছাড়া হওয়ার জোগাড় হয়েছে। এমন একটি মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বি ব্লকের ৬/২৪নং বাড়িটি। স্বাধীনতার পর সরকার এটিকে পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করে। পরে এক মুক্তিযোদ্ধার কাছে বিক্রির জন্য ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়; কিন্তু পরে জাল দলিল তৈরি করে বাড়িটি দখলে নেয় জনৈক ব্যক্তি। তিনি বাড়িটি দীর্ঘদিন দখলে রেখেছেন; কিন্তু এ বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ফাইল না থাকায় সরকারও এটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফাইলটি কবে গায়েব হয়েছে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এমন আরেকটি বাড়ি মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের সি ব্লকের ২/২নং বাড়ি। এ বাড়িটিরও ফাইল পাচ্ছে না সরকার। ফলে বাড়ি দুটি সরকারের হাতছাড়া হয়েছে।
এ ছাড়া অনেক বাড়ি রয়েছে যার মামলা চলাকালেও ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। এমন একটি বাড়ি মোহাম্মদপুরের বি ব্লকে হুমায়ুন রোডের ১/১৯। স্বাধীনতার পর এ বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। পরে ১৯৭৩ সালে সরকার বাড়িটি শহীদ জহির রায়হানের স্ত্রী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুমিতা দেবীকে ডিমান্ড নোট দেয়। পরে বায়নাসূত্রে মালিক দাবিদার পারভেজ আলম নিম্ন আদালত থেকে রেজিস্ট্রি করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেন। সরকারপক্ষের অবহেলায় রায় তার পক্ষে যায়। সুমিতা দেবীর মৃত্যুর পর মোহাম্মদপুরের সুরুজ মিয়া বাড়িটি জোর করে দখল করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মন্ত্রণালয় গত বছর তার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে সিপিএলএ দায়ের করে; কিন্তু এখনও যখন আপিল বিভাগ থেকে বাড়িটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে তা দাখিল করতে পারছে না সরকার। এ ফাইলটিও গায়েব হয়ে গেছে। ফলে এ বাড়িটিও সরকারের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।
কাছে যেসব ফাইল আসছে তা আবার ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এর বেশিরভাগই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গায়েব হচ্ছে বলে জানান সলিসিটর অফিসের এক কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একধরনের জালিয়াত চক্র সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা বের করছে। পরে তারা ওই বাড়ি দখল করতে তাদের পক্ষে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করছে। পাশাপাশি এ বাড়ি সংক্রান্ত যেসব মূল কাগজ সরকারের কাছে রয়েছে তা গায়েব করতে তারা সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করছে। এভাবে সংশ্লিষ্ট শাখার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ফাইল গায়েব করে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব খন্দকার শওকত সমকালকে বলেন, যেসব বাড়ির ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলোর ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এটি না পেলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর ফাইল গায়েবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও বের করতে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে ফাইল গায়েবের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ (৬)-এর মাধ্যমে দেশের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাড়ি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। মূলত ওই সময় যেসব বাড়ির মালিকদের পাওয়া যায়নি এবং বাড়ির মালিক হিসেবে কেউ দাবি করেননি, সেসব বাড়িই পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে পরিত্যক্ত বাড়িগুলো বিভিন্ন মূল্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। আবার নামমাত্র মূল্যে কাউকে কাউকে দান করা হয়। পরে আশির দশকে একটি গোষ্ঠী নিজেদের সরকারি কিছু বাড়ির দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯৮৫ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইন প্রণয়ন করে। আইন অনুযায়ী পরিত্যক্ত সরকারি বাড়িগুলোর বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেট প্রকাশের পর আইন অনুযায়ী কোর্ট অব সেটেলমেন্ট স্থাপন করা হয়। বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর কেউ দাবিদার হলে তিনি গেজেট প্রকাশের ১০৮ দিনের মধ্যে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে মামলা করতে পারবেন। এ আদালত তাদের মামলা বিবেচনায় এনে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় দেবেন; কিন্তু ওই সময় কোর্ট অব সেটেলমেন্টে বাড়ির দাবিদার হিসেবে যেসব মামলা করা হয় তার বেশিরভাগই মিথ্যা বিবেচিত হয়। পরে সরকারিভাবে যাদের কাছে পরিত্যক্ত বাড়ি বিক্রি করা হয় তাদের ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়; কিন্তু এসব বাড়ির দাবিদাররা সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বাড়ি দাবি করে সরকারের বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট করে। এর বেশিরভাগ মামলায় তারা হেরে যায় আবার কিছু মামলা এখনও চলমান; কিন্তু পরবর্তী সরকারের আমলে ক্ষমতা গ্রহণের পর এসব জালিয়াত চক্র বাড়ি স্থায়ীভাবে দখলে রাখার কৌশল নেয়। তারা বিভিন্ন কর্মকর্তার যোগসাজশে ফাইল গায়েবের অভিযানে নামে। এতে তারা অনেকটাই সফল হয়।
আর ফাইল গায়েবের কারণে বর্তমানে শ'খানেক পরিত্যক্ত বাড়ি এখন সরকারের হাতছাড়া হওয়ার জোগাড় হয়েছে। এমন একটি মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের বি ব্লকের ৬/২৪নং বাড়িটি। স্বাধীনতার পর সরকার এটিকে পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা করে। পরে এক মুক্তিযোদ্ধার কাছে বিক্রির জন্য ডিমান্ড নোট দেওয়া হয়; কিন্তু পরে জাল দলিল তৈরি করে বাড়িটি দখলে নেয় জনৈক ব্যক্তি। তিনি বাড়িটি দীর্ঘদিন দখলে রেখেছেন; কিন্তু এ বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ফাইল না থাকায় সরকারও এটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফাইলটি কবে গায়েব হয়েছে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এমন আরেকটি বাড়ি মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের সি ব্লকের ২/২নং বাড়ি। এ বাড়িটিরও ফাইল পাচ্ছে না সরকার। ফলে বাড়ি দুটি সরকারের হাতছাড়া হয়েছে।
এ ছাড়া অনেক বাড়ি রয়েছে যার মামলা চলাকালেও ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। এমন একটি বাড়ি মোহাম্মদপুরের বি ব্লকে হুমায়ুন রোডের ১/১৯। স্বাধীনতার পর এ বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। পরে ১৯৭৩ সালে সরকার বাড়িটি শহীদ জহির রায়হানের স্ত্রী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুমিতা দেবীকে ডিমান্ড নোট দেয়। পরে বায়নাসূত্রে মালিক দাবিদার পারভেজ আলম নিম্ন আদালত থেকে রেজিস্ট্রি করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেন। সরকারপক্ষের অবহেলায় রায় তার পক্ষে যায়। সুমিতা দেবীর মৃত্যুর পর মোহাম্মদপুরের সুরুজ মিয়া বাড়িটি জোর করে দখল করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মন্ত্রণালয় গত বছর তার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে সিপিএলএ দায়ের করে; কিন্তু এখনও যখন আপিল বিভাগ থেকে বাড়িটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে তা দাখিল করতে পারছে না সরকার। এ ফাইলটিও গায়েব হয়ে গেছে। ফলে এ বাড়িটিও সরকারের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।
No comments