গিমে জাদুঘরে পাঠানো পুরাকীর্তি খোয়া-কাউকেই দায়ী করেনি সংসদীয় তদন্ত কমিটি by হারুন আল রশীদ
ফ্রান্সের গিমে জাদুঘরে পাঠানোর সময় জাতীয় জাদুঘরের পুরাকীর্তি খোয়া যাওয়ার ঘটনায় কাউকেই দায়ী করতে পারেনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় তদন্ত কমিটি। কমিটির মতে, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সম্পাদিত দুর্বল চুক্তির কারণেই কাউকে দায়ী করা যাচ্ছে না। এ জন্য বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। উপকমিটি গঠনের ১৯ মাস পর সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন স্থায়ী কমিটিতে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে স্থায়ী
কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফ্রান্সের গিমে জাদুঘরে ‘মাস্টার পিসেস অব গ্যানজেস ডেল্টা’ শীর্ষক প্রদর্শনীর জন্য বাংলাদেশের পাঁচটি জাদুঘর থেকে ১৪৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য ২০০৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ফরাসি দূতাবাসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০০৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর পুরাকীর্তির প্রথম চালানটি পাঠানোর সময় ষষ্ঠ ও সপ্তম দশকের দুটি বিষ্ণুমূর্তি খোয়া যায়। এ কারণে দ্বিতীয় চালানটি পাঠানো হয়নি।
এ ঘটনা তদন্তের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য তারানা হালিমকে আহ্বায়ক এবং নীলুফার চৌধুরী ও মমতাজ বেগমকে সদস্য করে ২০১০ সালের ৩১ মে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য উপকমিটিকে এক মাসের সময় দেওয়া হয়।
উপকমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে চারটি পর্যবেক্ষণ ছাড়া সুস্পষ্ট কোনো সুপারিশ করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে, বিষয়টি বিচারাধীন, তাই কমিটির কিছু করণীয় নেই। পুরার্কীতি বহনকারী প্রতিষ্ঠান হোমবাউন্ডের সঙ্গে সরকারের কোনো চুক্তি ছিল না। তাই তাদের দায়ী করা যায় কি না, তা নিয়ে মূল কমিটিতে আলোচনা করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রত্নসম্পদ খোয়া গেলেও ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ খোয়া যাওয়ার আগে তা গ্রহণ করেছে, সে ক্ষেত্রে তাদের দায়ী করা যাবে কি না, সে বিষয়ে মতামত নিতে হবে।
প্রতিবেদনে পুরাকীর্তি খোয়া যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। উপকমিটির বৈঠকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জানিয়েছেন, এয়ার ফ্রান্সের কার্গোতে মালামাল তোলার আগেই বিষ্ণুমূর্তি দুটি হারিয়ে যাওয়ায় ফ্রান্সের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যৌক্তিক হবে না। ক্ষতিপূরণ দাবি করলে গিমে জাদুঘর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারে। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী তাদের সব পুরাকীর্তি পাঠানো হয়নি। জাতীয় জাদুঘরের আইন উপদেষ্টা এ বি এম রুহুল আমিন ভূঁইয়ার মতে, খোয়া যাওয়ার ঘটনায় হোমবাউন্ড ও এয়ার ফ্রান্স দায়ী নয়।
দ্বিমত প্রকাশ করে বৈঠকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, বিমানবন্দরে তল্লাশি হওয়ার পর ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ মালামাল বুঝে নিয়েছে, তাই আইনত দায়দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়।
এ বিষয়ে তারানা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা চুক্তিটি খুবই দুর্বল। এতে কার কতটুকু দায়, তা স্পষ্ট নয়। সে জন্য সুস্পষ্টভাবে কাউকে দায়ী করা যাচ্ছে না, যা থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেতে পারে। এ কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসতর্কতা ও উদাসীনতা ছিল।
উপকমিটির এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপত্তি তুলেছেন একই কমিটির সদস্য ও বিএনপির সাংসদ নীলুফার চৌধুরী। তিনি বলেছেন, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে তারানা হালিম এককভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। পুরাকীর্তি বহনকারী প্রতিষ্ঠান এবং যে উড়োজাহাজে পুরাকীর্তিগুলো ফ্রান্সে পাঠানো হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।
এ সম্পর্কে তারানা হালিম প্রথম আলোকে বলেন, উপকমিটির তিনটি বৈঠক হয়েছে। মমতাজ বেগম ও নীলুফার চৌধুরী একটি করে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সম্মতি নিয়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত নোটিশও তাঁরা যথাসময়ে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা বৈঠকে আসেননি। এ কারণে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে ১৯ মাস লেগে গেল। বৈঠকে বিমান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি পুরাকীর্তি পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান হোমবাউন্ডের কর্মকর্তাদেরও হাজির করা হয়।
No comments