নিরব কেন প্রধানমন্ত্রী? by ফজলুল বারী
তিতাস নদী হত্যার ঘটনার কোনও জবাব না দিয়ে আগরতলায় ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আনতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! এর আগে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে যাননি। তিস্তা চুক্তি হলে তার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি হবে বলে তাদের স্বার্থ বুঝে তা আটকে দিতে পেরেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী!
এ অবস্থায় সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি গ্রহণ এড়িয়ে তিনি সমালোচনা এড়াতে পেরেছেন। কিন্তু ত্রিপুরার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মালামাল পরিবহনের স্বার্থে নদীর মাঝ বরাবর বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানিয়ে তিতাস নামের জ্যান্ত একটি নদী হত্যার বিষয়ে সরকার কেন আশ্চর্য নিরব?
প্রধানমন্ত্রী, দলের এতসব বড়বড় নেতা, ‘বিবেক মন্ত্রী’ বলে পরিচিত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদেরেরও কোনও বক্তব্য নেই কেন? না, ওদিকে ভারতীয় ট্রানশিপমেন্টের গাড়ি চলছে। এসব ব্যাপার বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রীর এক্তিয়ারের বাইরে বা অগোচরে হচ্ছে? চুপ করে থাকলে তো চলবে না। কথা বলতে হবে এবং দেশের মানুষকে সাফ সাফ জবাব দিতে হবে। যেখানে আমরা নদীতে বাঁধ দিয়ে বাঁশের বেড়া ফেলে প্রভাবশালীদের মাছ ধরার সমালোচনা করি, সেখানে এভাবে তিতাস হত্যাতো একটি অপরাধ। এ অপরাধের অবসান না করে অথবা বিষয়টি চাপা দিয়ে রেখে এ সময় আগরতলা গেলে সমালোচনা বাড়বে। সে সমালোচনা সহ্য করার, জবাব দেবার কোনও মোক্ষম যুক্তি সরকারের থাকবে না।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের ভরাডুবি নিয়েও এর হাইকমান্ড নিরব। নারায়ণগঞ্জে হারার পর দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, সেখানে দলীয়ভাবে কোনও প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এরপর সেখানে পরাজিত প্রার্থী দলের সাধারণ সম্পাদকের ইজ্জত তুলে যে কটু মন্তব্য করেছিলেন, ইজ্জতের ভয়ে বেচারা আর সেটি নিয়ে সওয়াল করেননি। দলটির অভ্যন্তরীণ শৃখংলা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা এমন ঘটনায় প্রায় প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে। নারায়নগঞ্জের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ঢাকায় নেতাদের বেশ কিছু বৈঠক হয়। সমঝোতা না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতারা পরে একের পর এক নারায়ণগঞ্জ গিয়ে শামীম ওসমানের প্রতি শেখ হাসিনার সমর্থন প্রকাশ করেন। সেখানকার ভোটাররা এই চাতুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে এমন বৈঠকের কথা শোনা যায়নি। সংসদ চলাকালে একদিন কুমিল্লার এক এমপি অন্যদের ডেকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আফজল খানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বিশ্বাস না হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএপি যারা করেন, তারা যার যার দলের গণতন্ত্রের অবস্থা জানেন। কুমিল্লার নেতারাও তাই আর এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সাহস বা চেষ্টা করেননি। এখন জানা যাচ্ছে, অনেক সমস্যার পাশাপাশি ৭২ বছর বয়স্ক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার চালাবার মতো শারীরিক অবস্থাও ছিল না। শেখ হাসিনার সমর্থন পাবার আনন্দে(!) পরিবারের ৪ সদস্য সহ নির্বাচন করছিলেন আফজল খান! যেন জিতলে ভবিষ্যতে শারীরিক অক্ষমতায় সিটি কর্পোরেশন অফিসে যেতে না পারলেও নিজের পোলা-মাইয়ার মাধ্যমে কর্পোরেশন দখলে রাখতে পারবেন! কিন্তু কুমিল্লার ভোটার পাবলিকরা যে ‘আবুল কিসিমের’ না তা তারা সরকারি পছন্দের ইভিএম প্রযুক্তি দিয়েই জানিয়ে দিয়েছেন! স্থানীয় দলের সবার সঙ্গে কথা না বলে একতরফা একজন বিতর্কিত প্রার্থী ঢাকা থেকে চাপিয়ে দেওয়ায় ভিতরের কুশীলবরা যা করার তাই করেছেন! এর কারণে গত সংসদ নির্বাচনে বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও তিন বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী মিলে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন!
অনেকে বলার চেষ্টা করছেন ক্রিকেট টিমের মতো হারের বৃত্তে পড়েছে বাংলাদেশ সরকারও! সে কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাকিব আল হাসান অলরাউন্ডার হিসাবে বিশ্বসেরার তকমা পেলেও দল কোনও জয় পাচ্ছে না! ভারতের শচিন টেন্ডুলকার রান পাচ্ছেন। কিন্তু শততম সেঞ্চুরি পাচ্ছেন না! বিদেশের মাঠে গত পাঁচ টেস্ট লাগাতার হেরেছে ভারত।
গত নির্বাচনে সুপার-ডুপার জয়েও আর আওয়ামী লীগ সরকারের কোনও ভালো পারফরমেন্স নেই! প্রতিটি খেলায় হারার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন যেমন বলেন, দল ধারাবাহিক উন্নতি করছে, সিরিজ বা সফর থেকে অনেক কিছু শিখেছে, প্রতিটি নির্বাচনে হারার পরও আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়! যেন কাদম্বিনীর মতো আওয়ামী লীগও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বারবার মরে প্রমাণ করবে নির্বাচনে আমি নিরপেক্ষ ছিলাম! ভোটাররা যে প্রত্যাখ্যান করছে, শুধু পিছন থেকে সরে যাচ্ছে, কেন সরে যাচ্ছে, সমস্যাগুলো কোথায়, এসব নিয়ে এ দলটির কোথাও আত্মসমালোচনা নেই! সে চেষ্টাও নেই। গত নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল সেটিকে বলা হয়েছিল চমকের মন্ত্রিসভা! কিন্তু আনুগত্য আর স্বেচ্ছাচারিতার চমকটি এর মাঝে নিদারুণ ব্যর্থ হয়েছে! এ সরকারের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরকারের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার পদ্মাসেতুর অর্থায়ন আটকে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক! এর মাঝে এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ নানা ক্ষেত্রে! ড ইউনুসের পর পদ্মাসেতু ইস্যুতে দাতাদের কাছে কোনঠাসা সরকার ভারতের ওপর নির্ভর করতে গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি! ভারতও এর মাঝে বুঝিয়ে দিয়েছে তার কাছে প্রথমে বড় তার রাজ্যগুলোর স্বার্থ! এসব নানা পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ হলো, ২০০৮ সালে জনগণের একতরফা ম্যান্ডেট পাওয়া সরকারটি হয়ে পড়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে ঋণ-জর্জরিত সরকার! বলা হচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেবার সামর্থ্য হারিয়েছে!
অথচ আওয়ামী লীগে এখনও দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, সিনিয়র নেতারা আছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সিনিয়র বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীরা এই সরকারের ঘনিষ্ঠ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো ঐতিহাসিক একটি কাজ করছে সরকার। কিন্তু এমন একটি সরকারের এমন লেজেগোবরে অবস্থা হবে কেন? দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রুপিং’এ নেতৃ্ত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা যে উপদেষ্টা শাসন চালু করছিলেন, সে শাসন মডেলটি এর মাঝে পুরোপুরি ব্যর্থ নয় কী? দলের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার অপছন্দের হতে পারেন, কিন্তু জোটে নিয়ে এসে যে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মঈনউদ্দিন খান বাদল, ফজলে হোসেন বাদশাহ’র মতো নেতাদের পায়ে যে শিকল পরিয়ে রাখা হলো, এদের মন্ত্রিত্ব-বঞ্চিত রাখতে যে দিলীপ বড়ুয়ার মতো অনির্বাচিত একজনকে মন্ত্রী করা হলো, উনার পারফরেন্স কী?
এ ধরনের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কিসের লোভে মেনন-ইনুরা এখনও এ সরকার অথবা জোটের সঙ্গে এখনও পড়ে আছেন? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার বিপদে পড়ে যাবে সে ভয়ে? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার কী তা মনে করে? বা ১৪ দলের সঙ্গে সাংবিধানিক রাজনৈতিক প্রতারনার বিষয়টি আগামী দিনগুলোতে এসে আরও তিক্ত পর্যায়ে যাবে না, মেনন-ইনুরাও যে ঘোষণা দিয়ে এক পর্যায়ে মহা অবহেলা অপমানের মহাজোট ছাড়বেন না সে গ্যারান্টি শেখ হাসিনাকে কে দিয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী, দলের এতসব বড়বড় নেতা, ‘বিবেক মন্ত্রী’ বলে পরিচিত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদেরেরও কোনও বক্তব্য নেই কেন? না, ওদিকে ভারতীয় ট্রানশিপমেন্টের গাড়ি চলছে। এসব ব্যাপার বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রীর এক্তিয়ারের বাইরে বা অগোচরে হচ্ছে? চুপ করে থাকলে তো চলবে না। কথা বলতে হবে এবং দেশের মানুষকে সাফ সাফ জবাব দিতে হবে। যেখানে আমরা নদীতে বাঁধ দিয়ে বাঁশের বেড়া ফেলে প্রভাবশালীদের মাছ ধরার সমালোচনা করি, সেখানে এভাবে তিতাস হত্যাতো একটি অপরাধ। এ অপরাধের অবসান না করে অথবা বিষয়টি চাপা দিয়ে রেখে এ সময় আগরতলা গেলে সমালোচনা বাড়বে। সে সমালোচনা সহ্য করার, জবাব দেবার কোনও মোক্ষম যুক্তি সরকারের থাকবে না।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের ভরাডুবি নিয়েও এর হাইকমান্ড নিরব। নারায়ণগঞ্জে হারার পর দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, সেখানে দলীয়ভাবে কোনও প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এরপর সেখানে পরাজিত প্রার্থী দলের সাধারণ সম্পাদকের ইজ্জত তুলে যে কটু মন্তব্য করেছিলেন, ইজ্জতের ভয়ে বেচারা আর সেটি নিয়ে সওয়াল করেননি। দলটির অভ্যন্তরীণ শৃখংলা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা এমন ঘটনায় প্রায় প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে। নারায়নগঞ্জের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ঢাকায় নেতাদের বেশ কিছু বৈঠক হয়। সমঝোতা না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতারা পরে একের পর এক নারায়ণগঞ্জ গিয়ে শামীম ওসমানের প্রতি শেখ হাসিনার সমর্থন প্রকাশ করেন। সেখানকার ভোটাররা এই চাতুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে এমন বৈঠকের কথা শোনা যায়নি। সংসদ চলাকালে একদিন কুমিল্লার এক এমপি অন্যদের ডেকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আফজল খানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বিশ্বাস না হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএপি যারা করেন, তারা যার যার দলের গণতন্ত্রের অবস্থা জানেন। কুমিল্লার নেতারাও তাই আর এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সাহস বা চেষ্টা করেননি। এখন জানা যাচ্ছে, অনেক সমস্যার পাশাপাশি ৭২ বছর বয়স্ক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার চালাবার মতো শারীরিক অবস্থাও ছিল না। শেখ হাসিনার সমর্থন পাবার আনন্দে(!) পরিবারের ৪ সদস্য সহ নির্বাচন করছিলেন আফজল খান! যেন জিতলে ভবিষ্যতে শারীরিক অক্ষমতায় সিটি কর্পোরেশন অফিসে যেতে না পারলেও নিজের পোলা-মাইয়ার মাধ্যমে কর্পোরেশন দখলে রাখতে পারবেন! কিন্তু কুমিল্লার ভোটার পাবলিকরা যে ‘আবুল কিসিমের’ না তা তারা সরকারি পছন্দের ইভিএম প্রযুক্তি দিয়েই জানিয়ে দিয়েছেন! স্থানীয় দলের সবার সঙ্গে কথা না বলে একতরফা একজন বিতর্কিত প্রার্থী ঢাকা থেকে চাপিয়ে দেওয়ায় ভিতরের কুশীলবরা যা করার তাই করেছেন! এর কারণে গত সংসদ নির্বাচনে বিপুল সাফল্য সত্ত্বেও তিন বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী মিলে বিএনপির প্রার্থীর চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন!
অনেকে বলার চেষ্টা করছেন ক্রিকেট টিমের মতো হারের বৃত্তে পড়েছে বাংলাদেশ সরকারও! সে কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাকিব আল হাসান অলরাউন্ডার হিসাবে বিশ্বসেরার তকমা পেলেও দল কোনও জয় পাচ্ছে না! ভারতের শচিন টেন্ডুলকার রান পাচ্ছেন। কিন্তু শততম সেঞ্চুরি পাচ্ছেন না! বিদেশের মাঠে গত পাঁচ টেস্ট লাগাতার হেরেছে ভারত।
গত নির্বাচনে সুপার-ডুপার জয়েও আর আওয়ামী লীগ সরকারের কোনও ভালো পারফরমেন্স নেই! প্রতিটি খেলায় হারার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন যেমন বলেন, দল ধারাবাহিক উন্নতি করছে, সিরিজ বা সফর থেকে অনেক কিছু শিখেছে, প্রতিটি নির্বাচনে হারার পরও আওয়ামী লীগের মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়! যেন কাদম্বিনীর মতো আওয়ামী লীগও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বারবার মরে প্রমাণ করবে নির্বাচনে আমি নিরপেক্ষ ছিলাম! ভোটাররা যে প্রত্যাখ্যান করছে, শুধু পিছন থেকে সরে যাচ্ছে, কেন সরে যাচ্ছে, সমস্যাগুলো কোথায়, এসব নিয়ে এ দলটির কোথাও আত্মসমালোচনা নেই! সে চেষ্টাও নেই। গত নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল সেটিকে বলা হয়েছিল চমকের মন্ত্রিসভা! কিন্তু আনুগত্য আর স্বেচ্ছাচারিতার চমকটি এর মাঝে নিদারুণ ব্যর্থ হয়েছে! এ সরকারের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরকারের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার পদ্মাসেতুর অর্থায়ন আটকে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক! এর মাঝে এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্কসহ নানা ক্ষেত্রে! ড ইউনুসের পর পদ্মাসেতু ইস্যুতে দাতাদের কাছে কোনঠাসা সরকার ভারতের ওপর নির্ভর করতে গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি! ভারতও এর মাঝে বুঝিয়ে দিয়েছে তার কাছে প্রথমে বড় তার রাজ্যগুলোর স্বার্থ! এসব নানা পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ হলো, ২০০৮ সালে জনগণের একতরফা ম্যান্ডেট পাওয়া সরকারটি হয়ে পড়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে ঋণ-জর্জরিত সরকার! বলা হচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেবার সামর্থ্য হারিয়েছে!
অথচ আওয়ামী লীগে এখনও দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ, সিনিয়র নেতারা আছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সিনিয়র বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীরা এই সরকারের ঘনিষ্ঠ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতো ঐতিহাসিক একটি কাজ করছে সরকার। কিন্তু এমন একটি সরকারের এমন লেজেগোবরে অবস্থা হবে কেন? দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রুপিং’এ নেতৃ্ত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা যে উপদেষ্টা শাসন চালু করছিলেন, সে শাসন মডেলটি এর মাঝে পুরোপুরি ব্যর্থ নয় কী? দলের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনার অপছন্দের হতে পারেন, কিন্তু জোটে নিয়ে এসে যে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মঈনউদ্দিন খান বাদল, ফজলে হোসেন বাদশাহ’র মতো নেতাদের পায়ে যে শিকল পরিয়ে রাখা হলো, এদের মন্ত্রিত্ব-বঞ্চিত রাখতে যে দিলীপ বড়ুয়ার মতো অনির্বাচিত একজনকে মন্ত্রী করা হলো, উনার পারফরেন্স কী?
এ ধরনের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কিসের লোভে মেনন-ইনুরা এখনও এ সরকার অথবা জোটের সঙ্গে এখনও পড়ে আছেন? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার বিপদে পড়ে যাবে সে ভয়ে? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার কী তা মনে করে? বা ১৪ দলের সঙ্গে সাংবিধানিক রাজনৈতিক প্রতারনার বিষয়টি আগামী দিনগুলোতে এসে আরও তিক্ত পর্যায়ে যাবে না, মেনন-ইনুরাও যে ঘোষণা দিয়ে এক পর্যায়ে মহা অবহেলা অপমানের মহাজোট ছাড়বেন না সে গ্যারান্টি শেখ হাসিনাকে কে দিয়েছে?
এমনিতে দিনে দুপুরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া তিতাসের মতো মহাজোট সরকারের অন্দরে-বাইরে প্রশ্ন বাড়ছে। এর সব প্রশ্নই শেখ হাসিনার দিকে। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি কোথাও কোনও গণতান্ত্রিকপন্থার ধার ধারেননি। অথবা যাদের তিনি কোনঠাসা করে রেখেছেন, তাদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে সম্পৃক্ত করার উপযুক্ত মনে করেন না! এর যেটাই হোক এসবের জবাব তাকে দিতে হবে। এসবের আগে এখন প্রায়োরিটি-প্রশ্নটি হলো তিতাস হত্যা নিয়ে। দেশের একটি জ্যান্ত নদী হত্যার প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর কোন পাতার কোন প্যারায় ছিল প্রিয় প্রধানমন্ত্রী?
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
No comments