পুঠিয়ার রাজবাড়ি রক্ষার দাবি নিয়ে মাঠে সর্বস্তরের মানুষ

রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি রক্ষার দাবিতে গতকাল শনিবার ‘আমরা পুঠিয়াবাসী’র ব্যানারে উপজেলা সদরে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেয়। এ ছাড়া একই দাবিতে পুঠিয়ায় সব দোকানপাট বেলা সাড়ে তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। গতকাল বিকেলে উপজেলা ফটকের সামনে থেকে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে প্রায় আধা কিলোমিটারব্যাপী এ মানববন্ধন হয়। পরে মহাসড়কের


পাশে সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মইদুুল ইসলাম। বক্তব্য দেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, পুঠিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মর্জিনা বেগম, সাবেক সাংসদ আবদুস সাত্তার প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুঠিয়ার পাঁচ আনা রাজবাড়ি, টেরাকোটার নকশাসমৃদ্ধ কারুকার্যখচিত মন্দিরসহ রাজ এস্টেটের ৩৬ একর জমি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই আবেদন করেছেন পুঠিয়ায় কর্মরত খলিলুর রহমান নামের সাবেক এক সহকারী তহশিলদার।
জানা গেছে, সরকারপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে না পারায় গত ৭ ডিসেম্বর আবেদনকারীর পক্ষে একতরফা শুনানি হয়েছে। রায়ের দিন ছিল গত ২ জানুয়ারি। সরকারপক্ষ আপত্তি করায় আবার শুনানি শুরু হয়েছে।
খলিলুর রহমানের দাবি অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট এক বিনিময় দলিলের মাধ্যমে ভারতের মুর্শিদাবাদের হুররিপাড়ায় খলিলুরের ১১৯ একর জমির বিনিময়ে পুঠিয়া রাজ এস্টেটের ৩৬ দশমিক শূন্য ৩ একর জমি বিনিময় করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২ অক্টোবর রাজশাহীর জেলা প্রশাসক বিনিময় দলিলের কারণে পুঠিয়া রাজবাড়ির সম্পত্তি খলিলুরের নামে রেজিস্ট্রি করেন।
১৯৮৩ সালে সামরিক শাসনামলে প্রাচীন ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্য ৩ নম্বর সামরিক রেগুলেশন (এমএলও-৩-১৯৮৩) মূলে ওই সম্পত্তির যাবতীয় রায় ও কাগজপত্র বাতিল করা হয়। এর মাধ্যমে রাজ এস্টেটের সব সম্পত্তি থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করে সরকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
গত বছরের ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট এরশাদের শাসনকাল অবৈধ ঘোষণা করলে খলিলুর আবার হাইকোর্টে রিট করেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন, তা স্থানীয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসে নির্ধারিত সময়ের পরে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের পর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে নোটিশের জবাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয় থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। ফলে সরকারপক্ষে কোনো কাগজপত্র না থাকায় হাইকোর্টে আবেদনকারীর পক্ষে একতরফা শুনানি হয়।
খলিলুরের জামাই রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২ জানুয়ারি রায়ের নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু সরকারপক্ষ আপত্তি দেওয়ার কারণে আবার শুনানি হয়েছে। আজ রোববার আবার শুনানির তারিখ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খলিলুরের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি ও জমি জালিয়াতির অভিযোগ বেশ পুরোনো। পুঠিয়া রাজ এস্টেটের চার আনা রাজবাড়ির মালিকানা নিয়ে এর আগের একটি মামলায় ১৯৯৮ সালে তাঁর দলিলপত্র জাল বলে সাব্যস্ত হয়। ভাওয়াল রাজার সম্পত্তির দাবি তুলেও ২০০৬ সালে তিনি রিট করেছিলেন। পরে হাইকোর্টে তাঁর সেই রিট খারিজ হয়ে যায়।
লিয়াকত আলী বলেন, এই রাজবাড়ি শুধু পুঠিয়ার নয়, বাংলাদেশের সম্পদ। তবে এটাকে রক্ষার জন্য পুঠিয়াবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক দাবি করেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, আদালত অবশ্যই যথাযথ সিদ্ধান্ত জানাবেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ইতিমধ্যেই পুঠিয়ায় ৫৬ লাখ টাকার সংস্কারকাজ করেছে। পুঠিয়া রাজবাড়ি, মন্দির ও মাঠ উন্নয়নে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকার আরও একটি বাজেট পাস হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.