সাম্প্রতিক-বিপদ সংকেত এবং নতুন 'সাকা' by শাকিল ফারুক
ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন চালু এবং সরকারদলীয় প্রার্থীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে আরো অনেক কারণেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাহাত্ম্যটা হয়ে উঠেছে বিরাট। সারা দেশের চোখ এখন এই নির্বাচনের দিকে। এমন এক নির্বাচনে সবার চোখের সামনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ব্যক্তিগত রেষারেষি এবং জেদের যে প্রদর্শনী দেখা গেল, তাতে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতারই প্রমাণ পাওয়া গেছে, এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই
নেই দলটির। আরেক দিকে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ঔদ্ধত্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এ ব্যাপারে সরকারের নীরবতাও বেশ বিস্ময়ের উদ্রেক করছে।
এখনই সময় সতর্কতার!
নিয়ম মোতাবেক সিটি করপোরেশনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবুও দলের সমর্থনেই মূলত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবেই জানান দেওয়া হয় সেই সমর্থনের। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন কে, এ নিয়েই ছিল জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় হেভিওয়েট নেতা শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াত আইভী_দুজনই মেয়র পদে দলীয় সমর্থনপ্রত্যাশী। কিন্তু এক নির্বাচনে দুজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কী উপায়! একজনকে তো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতেই হবে। সে জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে সমর্থনপ্রত্যাশী দুই নেতার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এই নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য লোভনীয় সব প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল এসব নেতার সামনে। এই নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন যে প্রার্থী, তাঁকে প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানোর মতো লোভনীয় প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শামীম ওসমান বা আইভী_কাউকেই তাঁদের অটল অবস্থান থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, দুজনই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের যে সংকট প্রতীয়মান হয়ে উঠল, তা ক্ষমতায় থাকা দলটির জন্য যথেষ্ট বিব্রতকরই বটে। যদিও দলটি বিভিন্নভাবে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে দুজন নেতার জেদ ধরে রাখাটা মূলত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতারই পরিচয় দিচ্ছে। গত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পেছনের অন্যতম এবং সাম্প্রতিক সময়ে (রোডমার্চের আগে) দলটির নেওয়া আন্দোলন কর্মসূচি ভেস্তে যাওয়ার মূল কারণ কিন্তু এই সাংগঠনিক দুর্বলতা। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তো দলের ভালো-মন্দ বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করেন যাঁরা, তাঁরা যে স্রেফ ক্ষমতার লোভেই রাজনীতিতে নেমেছেন, তা তো বোঝাই যায়। এমন নেতাদের বিরুদ্ধে যদি আওয়ামী লীগ নীরব ভূমিকা পালন করে, তাহলে এই নেতৃত্বহীনতা দলকে নিয়ে যাবে চরম নেতৃত্বের সংকটের দিকে। একজনের বিরুদ্ধাচরণ দেখে আরো দশজন উদ্বুদ্ধ হবেন, দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অটল থাকবেন নিজের জেদ নিয়ে।
এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে, সেটাও বেশ রহস্যজনক। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং আবু সাঈদ আল-মাহমুদ গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জে। তাঁরা সেখানে শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে শামীমকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরদিনই আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ যখন বলেন, দলীয়ভাবে কাউকে কোনো সমর্থন দেওয়া হয়নি, তখন সাধারণ মানুষ ধাঁধায় পড়ে যায়। তাহলে তিন সাংগঠনিক সম্পাদক ভরা মজলিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এলেন? হানিফ বলেছেন, ওই তিনজন 'ব্যক্তিগত' সম্পর্কের খাতিরে প্রচারণা চালাতে গিয়েছিলেন। তা যান, সমস্যা নেই। কিন্তু এই তিনজন একটি দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, তার কী হবে? যদি দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া এই তিন সাংগঠনিক সম্পাদক এ কাজ করে থাকেন, তাহলে তো তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নইলে দুই দিন বাদে যখন সবাই নিজের ইচ্ছামতো দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করবে, তখন আওয়ামী লীগ কিন্তু বিরাট বেকায়দায় পড়ে যাবে। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার!
এ এক নতুন 'সাকা'
ফজলুল হক আমিনীর দোষ দিয়ে কী লাভ! সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতাই যখন সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বলতে পারেন এবং সংবিধান সম্পর্কে এমন কথা বলার পরও তাঁদের কিছু হয় না, তখন আমিনীদের মতো ধর্মবেচা রাজনৈতিক দলের নেতারা বললে সমস্যা কোথায়? গত ১৪ জুলাই তিনি এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।' তিনি শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি করারও হুমকি দিয়েছেন এবং সংশোধিত সংবিধান ছুড়ে ফেলার মন্তব্য করায় খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমিনী সংবিধান কোথায় ছুড়ে ফেলতে হবে, তাও বলে দিয়েছিলেন_এটাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা উচিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর এই লোকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। যে লোক দিব্যি পান চিবুতে চিবুতে বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করার পরিকল্পনা নিয়ে সবার নাকের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছেন, তাঁকে পলাতক দেখানোর বা পরোয়ানা জারির পরও গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে না। আমিনী এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে খুব জোর গলায় বলেছেন, তাঁর পেছনে নাকি সব সময় গোটা দশেক পুলিশ ঘুরে বেড়ায়। তিনি পলাতক নন। পরোয়ানা জারির পর আমিনী হুমকিও দিয়েছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। সরকার এই হুমকিতে ভয় পেয়েছে নাকি!
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমিনী সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে অ্যাখ্যায়িত করেছেন 'গান-বাজনা' হিসেবে এবং এ দেশের পতাকারও কোনো বিশেষত্ব দেখেন না তিনি। গলাবাজির মাত্রা যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, হয়তো দুই দিন পর আমিনী বলে বসতে পারেন, বাংলাদেশ নামে কোনো দেশই নেই!
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এখন জেলে। বিএনপির এই নেতা সব সময় প্রচারমাধ্যম মাতিয়ে রাখতেন একাই। তাঁর কথাবার্তায় যে ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হতো, তাতে বিরাট কোনো শক্তি তাঁর পেছনে রয়েছে বলেই ধারণা করা যেত। কিন্তু সাকা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বোঝা গেল, সবই ফাঁকি! ফাঁকা বুলি!
আমিনীও এখন সাকার 'লাইন' ধরেছেন বুঝি। ধর্ম বেচে রাজনীতি করার দিন যত ফুরিয়ে আসছে, ততই হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে মূলত নিজের চারপাশে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলাই এখন এসব নেতার মূল লক্ষ্য। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের একটা উদ্দেশ্য তো পেছনে আছেই। তাঁদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
এখনই সময় সতর্কতার!
নিয়ম মোতাবেক সিটি করপোরেশনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবুও দলের সমর্থনেই মূলত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবেই জানান দেওয়া হয় সেই সমর্থনের। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবেন কে, এ নিয়েই ছিল জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় হেভিওয়েট নেতা শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াত আইভী_দুজনই মেয়র পদে দলীয় সমর্থনপ্রত্যাশী। কিন্তু এক নির্বাচনে দুজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার কী উপায়! একজনকে তো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতেই হবে। সে জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে সমর্থনপ্রত্যাশী দুই নেতার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এই নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য লোভনীয় সব প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল এসব নেতার সামনে। এই নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন যে প্রার্থী, তাঁকে প্রতিমন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানোর মতো লোভনীয় প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শামীম ওসমান বা আইভী_কাউকেই তাঁদের অটল অবস্থান থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। তাঁরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, দুজনই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের যে সংকট প্রতীয়মান হয়ে উঠল, তা ক্ষমতায় থাকা দলটির জন্য যথেষ্ট বিব্রতকরই বটে। যদিও দলটি বিভিন্নভাবে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে দুজন নেতার জেদ ধরে রাখাটা মূলত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতারই পরিচয় দিচ্ছে। গত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পেছনের অন্যতম এবং সাম্প্রতিক সময়ে (রোডমার্চের আগে) দলটির নেওয়া আন্দোলন কর্মসূচি ভেস্তে যাওয়ার মূল কারণ কিন্তু এই সাংগঠনিক দুর্বলতা। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তো দলের ভালো-মন্দ বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করেন যাঁরা, তাঁরা যে স্রেফ ক্ষমতার লোভেই রাজনীতিতে নেমেছেন, তা তো বোঝাই যায়। এমন নেতাদের বিরুদ্ধে যদি আওয়ামী লীগ নীরব ভূমিকা পালন করে, তাহলে এই নেতৃত্বহীনতা দলকে নিয়ে যাবে চরম নেতৃত্বের সংকটের দিকে। একজনের বিরুদ্ধাচরণ দেখে আরো দশজন উদ্বুদ্ধ হবেন, দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অটল থাকবেন নিজের জেদ নিয়ে।
এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে, সেটাও বেশ রহস্যজনক। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং আবু সাঈদ আল-মাহমুদ গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জে। তাঁরা সেখানে শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে শামীমকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরদিনই আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ যখন বলেন, দলীয়ভাবে কাউকে কোনো সমর্থন দেওয়া হয়নি, তখন সাধারণ মানুষ ধাঁধায় পড়ে যায়। তাহলে তিন সাংগঠনিক সম্পাদক ভরা মজলিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এলেন? হানিফ বলেছেন, ওই তিনজন 'ব্যক্তিগত' সম্পর্কের খাতিরে প্রচারণা চালাতে গিয়েছিলেন। তা যান, সমস্যা নেই। কিন্তু এই তিনজন একটি দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন, তার কী হবে? যদি দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া এই তিন সাংগঠনিক সম্পাদক এ কাজ করে থাকেন, তাহলে তো তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নইলে দুই দিন বাদে যখন সবাই নিজের ইচ্ছামতো দলীয় সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করবে, তখন আওয়ামী লীগ কিন্তু বিরাট বেকায়দায় পড়ে যাবে। এখনই সময় সতর্ক হওয়ার!
এ এক নতুন 'সাকা'
ফজলুল হক আমিনীর দোষ দিয়ে কী লাভ! সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতাই যখন সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বলতে পারেন এবং সংবিধান সম্পর্কে এমন কথা বলার পরও তাঁদের কিছু হয় না, তখন আমিনীদের মতো ধর্মবেচা রাজনৈতিক দলের নেতারা বললে সমস্যা কোথায়? গত ১৪ জুলাই তিনি এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।' তিনি শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি করারও হুমকি দিয়েছেন এবং সংশোধিত সংবিধান ছুড়ে ফেলার মন্তব্য করায় খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমিনী সংবিধান কোথায় ছুড়ে ফেলতে হবে, তাও বলে দিয়েছিলেন_এটাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা উচিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর এই লোকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। যে লোক দিব্যি পান চিবুতে চিবুতে বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করার পরিকল্পনা নিয়ে সবার নাকের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছেন, তাঁকে পলাতক দেখানোর বা পরোয়ানা জারির পরও গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে না। আমিনী এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে খুব জোর গলায় বলেছেন, তাঁর পেছনে নাকি সব সময় গোটা দশেক পুলিশ ঘুরে বেড়ায়। তিনি পলাতক নন। পরোয়ানা জারির পর আমিনী হুমকিও দিয়েছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে সাত দিনের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। সরকার এই হুমকিতে ভয় পেয়েছে নাকি!
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমিনী সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে অ্যাখ্যায়িত করেছেন 'গান-বাজনা' হিসেবে এবং এ দেশের পতাকারও কোনো বিশেষত্ব দেখেন না তিনি। গলাবাজির মাত্রা যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, হয়তো দুই দিন পর আমিনী বলে বসতে পারেন, বাংলাদেশ নামে কোনো দেশই নেই!
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এখন জেলে। বিএনপির এই নেতা সব সময় প্রচারমাধ্যম মাতিয়ে রাখতেন একাই। তাঁর কথাবার্তায় যে ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হতো, তাতে বিরাট কোনো শক্তি তাঁর পেছনে রয়েছে বলেই ধারণা করা যেত। কিন্তু সাকা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বোঝা গেল, সবই ফাঁকি! ফাঁকা বুলি!
আমিনীও এখন সাকার 'লাইন' ধরেছেন বুঝি। ধর্ম বেচে রাজনীতি করার দিন যত ফুরিয়ে আসছে, ততই হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে মূলত নিজের চারপাশে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলাই এখন এসব নেতার মূল লক্ষ্য। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের একটা উদ্দেশ্য তো পেছনে আছেই। তাঁদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
No comments