ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা by মাহবুবুর রহমান

চারদিকেই ফসলি জমি ও ঘনবসতি। তার মধ্যখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। অনুমোদনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েই ইট পোড়ানো শুরু। আবার সেই ভাটাতেই জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।সম্প্রতি সরেজমিনে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কবিরহাট উপজেলার দুটি অবৈধ ইটভাটা ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে। ভাটার মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্বীকার করেন, ইটভাটার লাইসেন্সের (অনুমতিপত্র) জন্য তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে


আবেদন করেছেন। তাঁদের লাইসেন্স হওয়া সময়ের ব্যাপার। ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ধারা ৪-এর উপধারা ৫-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকা ও ফলের বাগান অর্থাৎ ‘অন্যূন ৫০টি পরিবার বাস করে এমন এলাকা এবং অন্যূন ৫০টি ফলজ বা বনজ গাছ আছে এমন বাগান’ থেকে তিন কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে নোয়াখালীর বেশির ভাগ ইটভাটা স্থাপনেই এই আইন মানা হয় না।
সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের বাদামতলী এলাকায় ‘ভাই ভাই ব্রিকস্’। টিনের চিমনির এই ভাটা ঘেঁষেই ফসলের বিশাল মাঠ। আশপাশে রয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর। ভাটায় পোড়ানোর জন্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ। স্থানীয় কৃষক আবদুল বারিক জানান, যে জমিতে ভাটাটি হয়েছে সেখানে বছরে একাধিক ফসল হতো। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে তাঁরা অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, ‘ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো শক্তি আমাদের নেই।’
ভাটার মালিক আবুল কাশেম বলেন, ভাটাটির লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন আছে। কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, পরিবেশসম্মত ভাটা করার জন্য যে ইট লাগবে তিনি কাঠ দিয়ে সেই ইট পোড়াচ্ছেন। তবে তাঁর ভাটায় মজুদ বিপুল পরিমাণ কাঠ কী জন্য রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।
কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের অমরপুর এলাকার ইটভাটা ‘রহিমা ব্রিকস’্ তৈরি করা হয়েছে ফসলি জমি নষ্ট করে। এই ভাটায়ও ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে অনুমোদন পাওয়ার আগেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাশেম জানান, তাঁর ফসলি জমির আল ঘেঁষেই ভাটাটি করা হয়েছে।
ভাটার মালিক এম এ এস ফারুক দাবি করেন, তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ভাটার লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই ইট পোড়ানো শুরু করেননি। তিনি আরও দাবি করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম মেনেই তিনি ইতিমধ্যে পরিবেশসম্মত চিমনি তৈরি করেছেন।
তাঁর ভাটায় কৃষিজমি কিংবা আশপাশের মানুষের ক্ষতি হবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয়ের পরিচালক মীর আবুল কাশেম মজুমদার দাবি করেন, কবিরহাটের ইটভাটাটির ছাড়পত্র দেওয়ার আগে এলাকার কেউ আপত্তির কথা তাঁদের জানাননি। তাই তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সুবর্ণচরে টিনের চিমনি দিয়ে তৈরি ইটভাটাটি সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান বলেন, কেউ যদি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যক্তিগত জমিতে ইটভাটা করে ফেলে তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা ও মালামাল জব্দ করা হয়। কিন্তু আমরা তার জায়গা থেকে ভাটা উচ্ছেদ করতে পারি না। তা ছাড়া আইনের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.