নতুন বছরের চাওয়া-তবু স্বপ্ন দেখে যাই
পূর্বাকাশে নতুন বছরের নতুন সূর্য। ঘন কুয়াশার আস্তরণ দূরে ঠেলে সেই সূর্য লোকালয়ে উঁকি দিতে একটু দেরি করেছে হয়তো। কিন্তু স্বপ্নরা বসে নেই। থার্টিফার্স্ব নাইটের আনন্দের আবাহনে পুরোনো সব দুঃস্মৃতি অনেকে মুছে ফেলেছেন। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন নতুন করে। স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকছে, দোকানিরা পুরোনো খাতা হালনাগাদ করে নতুন খাতায় হাত দিতে চাইছেন নতুন বছরের নতুন প্রত্যয় নিয়ে। নতুন প্রত্যয়মাখা স্বপ্নে পুরোনো দুঃস্মৃতিগুলো
হয়তো বুকে দুরু দুরু কাঁপুনি তুলছে। তবু স্বপ্নরা ডানা মেলে উড়তে চাইছে। স্বপ্ন তো এমনই। পূরণ হোক আর না হোক, নতুন স্বপ্ন দেখতে তো আর মানা নেই। নতুন বছরে নতুন সূর্য উঠবে আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই। কেবল এই দিনটি আলাদা মানুষের অবচেতন মনের ধারণার কারণে। সকালের সূর্যই পুরো দিনের পূর্বাভাস—এমন ধারণায় নতুন বছরের নতুন দিন পুরো বছরের পূর্বাভাস নয় ঠিকই, তবু এটি সবকিছু নতুন করে শুরু করার দিন। নতুন প্রত্যয় আর উৎসাহ-উদ্দীপনার দিন। সেই উদ্দীপনা সব শ্রেণীর মানুষের জন্য, সর্বস্তরের জনতার জন্য। আর সব অঙ্গনের মতো ক্রীড়াঙ্গনও নতুন বছরে নতুন শুরুর স্বপ্ন দেখছে—ক্রিকেট-ফুটবল-হকিতে ফেলে আসা বছরের সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরুর স্বপ্ন।
প্রতিবছরই নতুন স্বপ্ন নিয়ে সবাই নতুন বছর শুরু করে। কিন্তু বছর শেষে সেই স্বপ্নগুলো কজনেরই পূর্ণ হয়? তবু মানুষ নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও ঠিক তা-ই। বছরের শুরুতে প্রত্যাশা থাকে অনেক, আর শেষে দেখা যায় প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে বিশাল ব্যবধান। তবু পরের বছরের জন্য নতুন স্বপ্ন আঁকা হয়। ২০১১ সাল শুরুর প্রারম্ভে এমনই হাজারো স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন, যেমনটা দেখেছিল ২০১০ সাল শুরুর প্রারম্ভে। ২০১২ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে, অনেক স্বপ্ন ডানা মেলে উড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্বপ্নই পূর্ণতা পাবে না। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে স্বপ্নপূরণ যেন নিয়তির চক্রে বাঁধা!
পৃথিবীতে স্বপ্ন আর স্বপ্নপূরণ হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানোর মতো। লাটাইটা ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারলেই কেবল সঠিকভাবে ঘুড়ি উড়বে। আর লাটাই ছেড়ে দিলেই ঘুড়ি আছড়ে পড়বে অন্যত্র। তেমনই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলেই কেবল স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের স্বপ্ন কেবল ঘুড়ি ওড়াউড়িতেই সীমাবদ্ধ। কারণ, স্বপ্ন-ঘুড়ির লাটাইটা মজবুত নয়; আর এটি নাড়ানোর লোকেরাও স্বার্থহীন নয়।
ঘুড়ি ওড়াতে কী ধরনের লাটাই প্রয়োজন? নিশ্চয়ই বলবেন, শক্ত-মজবুত লাটাই। আসলে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য শক্ত-মজবুত লাটাইয়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ ঘুড়িবিদ, যিনি নড়বড়ে লাটাই হলেও ঘুড়ি ঠিক ওড়াতে পারবেন। বাংলাদেশের না আছে শক্ত লাটাই, না আছে দক্ষ ঘুড়িবিদ। তাই বছরের শেষ দিকে এসে কেবল লাটাই ছেড়ে দিয়েই সুখ খোঁজেন এ দেশের ঘুড়িবিদেরা (পড়ুন বোর্ড ও ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তিরা)।
অবকাঠামোগত দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ খেলার অবস্থা নাজুক। তবু কিছুদিন পরপর ক্রীড়াঙ্গনে সুখবর আসে। বাংলাদেশের সব ক্রীড়া-ইভেন্টের মধ্যে ক্রিকেটই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। আন্তর্জাতিক সাফল্যও বেশি এসেছে এ খেলা থেকে। তার পরও প্রতিপক্ষ দলগুলোর কথা চিন্তা করলে বলা যায়, বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। গত নভেম্বরে টেস্টের আঙিনায় পা রাখার ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ে দেশের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে বলে তেমন কিছু বলা যাবে না; কেবল কয়েকটা স্টেডিয়াম হওয়ার মধ্যে উন্নতি সীমাবদ্ধ। অন্য সব খেলার একই হাল। তবু বছরের শুরুতে নানা প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। আর বছর শেষে সেসব প্রতিশ্রুতি বিলীন হয়ে যায়। আবারও নতুন বছর আসে, মেলে নানা প্রতিশ্রুতি। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন।
ক্রীড়াঙ্গনে উন্নতির জন্য স্বপ্নবিলাসী ভাবনা কমাতে হবে। বাড়াতে হবে কর্মতৎপরতা। শুধু বাহিরটা ঝা-চকচকে না করে ভেতরটাও ঠিকভাবে সাজাতে হবে—নতুন বছরে এটাই হওয়া উচিত ক্রীড়াঙ্গনের মূল ভাবনা। অন্যথায় যাবতীয় স্বপ্নবিলাসী তৎপরতা বছর শেষে ব্যর্থ বলেই পরিগণিত হবে, যেমনটি হয়েছে অতীতে। বিগত বছরগুলোর কথা মাথায় রেখে নতুন উদ্দীপনায় সব শুরু করতে হবে। অন্যদের অনুকরণ না করে নিজেদের সংস্কৃতি বিকশিত করতে হবে। এককথায়, ক্রীড়াসংস্কৃতির বিকাশ সাধন করতে হবে। তবেই ধরা দেবে সাফল্য।
তোফায়েল আহমেদ, জামালপুর
প্রতিবছরই নতুন স্বপ্ন নিয়ে সবাই নতুন বছর শুরু করে। কিন্তু বছর শেষে সেই স্বপ্নগুলো কজনেরই পূর্ণ হয়? তবু মানুষ নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও ঠিক তা-ই। বছরের শুরুতে প্রত্যাশা থাকে অনেক, আর শেষে দেখা যায় প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে বিশাল ব্যবধান। তবু পরের বছরের জন্য নতুন স্বপ্ন আঁকা হয়। ২০১১ সাল শুরুর প্রারম্ভে এমনই হাজারো স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন, যেমনটা দেখেছিল ২০১০ সাল শুরুর প্রারম্ভে। ২০১২ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে, অনেক স্বপ্ন ডানা মেলে উড়ছে। কিন্তু বেশিরভাগ স্বপ্নই পূর্ণতা পাবে না। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে স্বপ্নপূরণ যেন নিয়তির চক্রে বাঁধা!
পৃথিবীতে স্বপ্ন আর স্বপ্নপূরণ হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানোর মতো। লাটাইটা ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারলেই কেবল সঠিকভাবে ঘুড়ি উড়বে। আর লাটাই ছেড়ে দিলেই ঘুড়ি আছড়ে পড়বে অন্যত্র। তেমনই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলেই কেবল স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের স্বপ্ন কেবল ঘুড়ি ওড়াউড়িতেই সীমাবদ্ধ। কারণ, স্বপ্ন-ঘুড়ির লাটাইটা মজবুত নয়; আর এটি নাড়ানোর লোকেরাও স্বার্থহীন নয়।
ঘুড়ি ওড়াতে কী ধরনের লাটাই প্রয়োজন? নিশ্চয়ই বলবেন, শক্ত-মজবুত লাটাই। আসলে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য শক্ত-মজবুত লাটাইয়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ ঘুড়িবিদ, যিনি নড়বড়ে লাটাই হলেও ঘুড়ি ঠিক ওড়াতে পারবেন। বাংলাদেশের না আছে শক্ত লাটাই, না আছে দক্ষ ঘুড়িবিদ। তাই বছরের শেষ দিকে এসে কেবল লাটাই ছেড়ে দিয়েই সুখ খোঁজেন এ দেশের ঘুড়িবিদেরা (পড়ুন বোর্ড ও ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তিরা)।
অবকাঠামোগত দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ খেলার অবস্থা নাজুক। তবু কিছুদিন পরপর ক্রীড়াঙ্গনে সুখবর আসে। বাংলাদেশের সব ক্রীড়া-ইভেন্টের মধ্যে ক্রিকেটই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। আন্তর্জাতিক সাফল্যও বেশি এসেছে এ খেলা থেকে। তার পরও প্রতিপক্ষ দলগুলোর কথা চিন্তা করলে বলা যায়, বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। গত নভেম্বরে টেস্টের আঙিনায় পা রাখার ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ে দেশের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে বলে তেমন কিছু বলা যাবে না; কেবল কয়েকটা স্টেডিয়াম হওয়ার মধ্যে উন্নতি সীমাবদ্ধ। অন্য সব খেলার একই হাল। তবু বছরের শুরুতে নানা প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। আর বছর শেষে সেসব প্রতিশ্রুতি বিলীন হয়ে যায়। আবারও নতুন বছর আসে, মেলে নানা প্রতিশ্রুতি। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন।
ক্রীড়াঙ্গনে উন্নতির জন্য স্বপ্নবিলাসী ভাবনা কমাতে হবে। বাড়াতে হবে কর্মতৎপরতা। শুধু বাহিরটা ঝা-চকচকে না করে ভেতরটাও ঠিকভাবে সাজাতে হবে—নতুন বছরে এটাই হওয়া উচিত ক্রীড়াঙ্গনের মূল ভাবনা। অন্যথায় যাবতীয় স্বপ্নবিলাসী তৎপরতা বছর শেষে ব্যর্থ বলেই পরিগণিত হবে, যেমনটি হয়েছে অতীতে। বিগত বছরগুলোর কথা মাথায় রেখে নতুন উদ্দীপনায় সব শুরু করতে হবে। অন্যদের অনুকরণ না করে নিজেদের সংস্কৃতি বিকশিত করতে হবে। এককথায়, ক্রীড়াসংস্কৃতির বিকাশ সাধন করতে হবে। তবেই ধরা দেবে সাফল্য।
তোফায়েল আহমেদ, জামালপুর
No comments