ঈদে এক কোটি পরিবার দশ কেজি করে বিনামূল্যে চাল পাচ্ছে- ভিজিএফ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিতরণ by তৌহিদুর রহমান

এবার ঈদে এক কোটি পরিবার দশ কেজি করে বিনামূল্যে চাল পাচ্ছেন। তবে ন্যূনতম চারটি শর্তে প্রতিটি পবিরারের মাঝে এই চাল বিতরণ করা হবে। দেশের ৬৪ জেলার ৪৮৬টি উপজেলা ও ৩১৫টি পৌরসভায় এক লাখ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।


সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচীর মাধ্যমে এই চাল বিতরণ করা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, এক কোটি পরিবারকে চাল দেয়ার লক্ষ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের দুুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগ থেকে চাল বিতরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে চাল বিতরণের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চাল বিতরণের জন্য বারোটি শর্ত নির্ধারণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগ। তবে এসব শর্তের মধ্যে কমপক্ষে চারটি শর্ত পূরণ হলেই কোন ব্যক্তি, পরিবার বা অতিদরিদ্র পরিবার চাল পাবেন।
সূত্রমতে, এবার বিনামূল্যের চাল বিতরণ শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হবে। শুধু মন্ত্রণালয়ের চারটি শর্ত পূরণ হলেই চাল দেয়া হবে। প্রকৃত দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষ যেন চাল পান সেজন্যই এই নিয়ম করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় যে বারোটি শর্ত নির্ধারণ করেছে। সেসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- যে পরিবারের মালিকানায় কোন জমি নেই বা ভিটাবাড়ি ছাড়া কোন জমি নেই। যে পরিবার দিনমজুরের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। যে পরিবার মহিলা শ্রমিকের আয় বা ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। যে পরিবারে উপার্জনক্ষম পূর্ণ বয়স্ক কোন পুরুষ সদস্য নেই। যে পরিবারে স্কুলগামী শিশুকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়। যে পরিবারে উপার্জনশীল কোন সম্পদ নেই। যে পরিবারের প্রধান স্বামী পরিত্যক্ত, বিচ্ছিন্ন বা তালাকপ্রাপ্ত মহিলা। যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা। যে পরিবারের প্রধান অসচ্ছল ও অক্ষম। যে পরিবার কোন ক্ষুদ্র্রঋণ প্রাপ্ত হয়নি। যে পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চরম খাদ্য/অর্থ সঙ্কটে পড়েছে এবং যে পরিবারের সদস্যরা বছরের অধিকাংশ সময় দু’বেলা খাবার পান না। তবে এসব শর্তের মধ্যে কমপক্ষে চারটি শর্ত পূরণ হলেই চাল পাবেন।
সূত্রমতে, ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় এই চাল বিতরণের জন্য আদমশুমারি-২০১১-এর জনসংখ্যা অনুযায়ী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক বরাদ্দকৃত ভিজিএফ কার্ড সংখ্যা পুনর্বিভাজন করে তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দুস্থ, অতিদরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি বন্যাক্রান্ত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ পরিবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই সঙ্গে বিনামূল্যে চাল বিতরণের তালিকা ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা ভিজিএফ কমিটি কর্তৃক প্রণীত ও সত্যায়িত হতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিজিএফ উপকারভোগীদের তালিকা এমনভাবে প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে যে কোন অবস্থাতেই একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ভিজিএফ বরাদ্দ যেন না পান। এছাড়া জেলা-উপজেলা খাদ্যগুদাম হতে বিতরণ কেন্দ্র পর্যন্ত চাল পৌঁছানোর পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ সরকারী খাত থেকে বহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াজেদ বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে বলেন, এবার ঈদে এক কোটি পরিবারের মাঝে দশ কেজি করে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরুও হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা ঈদের আগেই চাল বিতরণ কর্মসূচী সম্পন্ন করবেন। তিনি আরও বলেন, মুসলমান সম্প্রদায় বাদেও অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ সকলেই চাল পাবেন। ত্রাণ বিভাগের দেয়া ন্যূনতম চারটি শর্ত পূরণ হলেই চাল দেয়া হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে সারাদেশে ১৫ হাজার ৩৩১ টন চাল, ৩০ হাজার ৬৩১ টন গম বিতরণ করা হয়েছে। ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস, টিআর, ভিজিএফ, স্কুল ফিডিং, জিআর কর্মর্সূচীতে এই চাল বিতরণ করা হয়। তবে এর মধ্যে ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় ১২৮ টন চাল ও ১৬৪ টন গম বিতরণ করা হয়। মোট ২৯২ টন চাল-গম বিতরণ করা হয়। প্রায় প্রতি মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ চাল-গম ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে ঈদের সময় ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় এক লাখ টন চাল বিতরণের ফলে এই খাতে বিতরণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
সূত্রমতে, খাদ্য মন্ত্রণালয় মূলত দুইটি খাতে চাল বিতরণ করে থাকে। একটি আর্থিক খাত অন্যটি অনার্থিক। ভিজিএফ কর্মসূচী সরকারের সম্পূর্ণ একটি অনার্থিক খাত।

No comments

Powered by Blogger.