গঙ্গার পানি শোধন প্রক্রিয়া

দুই দশকের বেশি সময় আগে গঙ্গার পানি শোধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভারত সরকার। এক্ষেত্রে জার্মানিও সহায়তা করেছে। কিন্তু এখনও পুরোপুরি সাফল্য মেলেনি। এবার বিশ্ব ব্যাংক এবং ইসরায়েলের সহায়তায় নতুন উদ্যমে শুরু হচ্ছে এই কাজ।


হিমালয়ের পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে ভারতের উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে গঙ্গা। এর দুই পাড়ের শহর আর গ্রামে বাস করে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ। এমনকি তাদের অনেকেরই জীবনযাত্রা এই গঙ্গার ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের বৃহত্তম ২০টি নদীর একটি এই গঙ্গা। কিন্তু খরার মৌসুমে এই গঙ্গা যেন শুধু বর্জ্য প্রবাহিত হওয়ার মতো সরু নালায় পরিণত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোরও একটি গঙ্গা।
এক সময়ের পবিত্র এবং জীবন দানকারী হিসেবে বিবেচিত গঙ্গার পানি এখন মানুষের মল, মূত্র, বর্জ্য এবং রোগ জীবাণুতে ভরপুর। তাই দূষিত পানিকে পরিষ্কার করে গঙ্গার রূপ, সৌন্দর্য এবং হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য আড়াই বিলিয়ন ইউরোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারত। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সোয়া আট শ’ মিলিয়ন ইউরো ঋণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্ব ব্যাংক। আর ভারতকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ ইসরায়েল।
ভারত সরকার ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে চায় যে, শিল্প বর্জ্য কিংবা পৌর এলাকার অপরিশোধিত পানি গঙ্গার পানিতে গিয়ে মিশবে না। তবে গঙ্গার পানি পরিশোধনে সহায়তাকারী ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ইসরায়েল নিউ টেকের প্রধান ওডেড ডিস্টেলের মতে, গঙ্গার পানি পরিষ্কার করতেই প্রায় ২০ বছর লেগে যাবে। তাঁর ভাষায়, ‘এটি অনেক বড় প্রকল্প। এটির মধ্যে দূষিত পানি পরিশোধন এবং সেচ ব্যবস্থাসহ পানি ব্যবস্থাপনার কাজ রয়েছে। রয়েছে প্রযুক্তিগত দিকও।’
দূষণ বেড়েই চলেছে
তবে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা নিয়ে গঙ্গা পরিষ্কারে নামার ফলে ভারতের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ পদ্ধতিতেও ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কারণ এতদিন ভারতের কৃষিজীবী মানুষ সাধারণত সেচের জন্য মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করত। এর ফলে কৃষি জমি থেকে রাসায়নিক পদার্থ ধুয়ে গঙ্গায় চলে যেত। কিন্তু এখন সেই ধারা পাল্টাতে পরীক্ষা চালাচ্ছে ইসরায়েলি-ভারতীয় যৌথ প্রতিষ্ঠান নন্দনজায়েন। তারা ভারতে চুইয়ে পড়া সেচ প্রযুক্তির যথার্থতা খতিয়ে দেখছে। ক্ষুদ্রসেচ নামে পরিচিত ইসরায়েলি এই প্রযুক্তি পানি এবং সার উভয় সাশ্রয় করে। এই পদ্ধতিতে পানি চুইয়ে চুইয়ে গাছের মূলে পৌঁছে যায়।
নন্দনজায়েনের পরিচালক আমনন ওফেন বলেন, এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে ভারতের কৃষি কাজে পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, ‘বর্তমানে ভারতে সেচ কাজে খরচ হয় বছরে ০.৫ বিলিয়ন ডলার। তবে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সেটা দেড় বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।’ এ কারণেই এখন বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান ভারতে তাদের পরিষেবা সম্প্রসারণ করছে বলেও উল্লেখ করেন ওফেন। এছাড়া গঙ্গার পানি পরিশোধন করতে এর তীরবর্তী এলাকায় বেশ কিছু প্রাকৃতিক জলাশয় ও লেক তৈরির কথা বলছে ইসরায়েলের জীব-প্রকৌশল বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াটার রিভাইভ।’ এক্ষেত্রে প্রথমে গঙ্গা থেকে দূষিত পানি একটি নালা দিয়ে সেই জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং আবার সেই পানি গঙ্গায় ফেরত পাঠানোর আগেই পরিশোধন করে ফেলা হবে। এই পদ্ধতিতে ইসরায়েলের ইয়ারকন নদীর পানি পরিশোধন করতে আশিটিরও বেশি জলাশয় তৈরি করা হয়। ‘ওয়াটার রিভাইভ’র পরিবেশবিদ লিমোর গ্রুবার বলেন, ‘এই পদ্ধতি একদিকে প্রাকৃতিক ও উন্নতমানের এবং পাশাপাশি এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে।’
রাফিউল ইসলাম সরকার

No comments

Powered by Blogger.