নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং আমাদের নারী সমাজ by আবু মালিহা
আজকের দিনে বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার আদর্শিক চেতনা ও নৈতিক কর্মকা-ের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই সামনে রেখে মা-বোনদের তথা সর্বশ্রেণীর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বস্তুত নারী জাগরণে আমাদের আজকের সমাজ কী ভাবছেন তা অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।
জাতীয় কবির ভাষায় ‘এ বিশ্বে যা কিছু চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী/ অর্ধেক তার নর।’ বাস্তবিকই চিরন্তন এ মহাসত্য উপলব্ধি করেই নারী সমাজের দুর্ভোগ এবং কল্যাণকর ভূমিকা রাখার জন্য বাঙালী মুসলিম সমাজে নারীদের চেতনাকে জাগ্রত করার জন্য বেগম রোকেয়ার অবিস্মরণীয় ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। যে সমাজে নারী ছিল অবরুদ্ধ, অন্তপুরবাসিনী এবং পুরুষের সেবাব্রতই ছিল একমাত্র নারীত্বের জীবন, সে ক্ষেত্রে ঘুণে ধরা এ সমাজে পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করে সমাজের মূল স্রোতে সোচ্চার হওয়ার জন্য, নানা প্রতিকূলতার অর্গল ভেঙ্গে এবং সামাজিক অবরুদ্ধতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে উচ্চকিত হওয়ার জন্য, সর্বক্ষেত্রে অনির্বাণ শিখা প্রজ্বলনের বৈপ্লবিক চেতনা জাগ্রত করেছিলেন অবোধ নারী সমাজকে মহীয়সী বেগম রোকেয়া। বিশেষ করে তিনি যে সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে সময় নারী ছিল অবরুদ্ধ, বাইরের কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা ছিল প্রায় অসম্ভব। কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশ ছিল সমাজ জীবনে প্রবল। তাই সেখান থেকে নারীদের শিক্ষা-দীক্ষাসহ নানা বিষয়ে সমাজ জীবনে অগ্রগতি সাধন করা প্রায় কল্পনাতীত ছিল। তিনিই একমাত্র নারী যিনি সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন অর্গল ভেঙ্গে নারী জাগরণে আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যা আজকের নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য এসেছে।
তবে একটি কথা প্রণিধানযোগ্য যে, তিনি কোনকালেই সীমা লঙ্ঘন করে নারী জাগরণের কোন দিকনির্দেশনা দিয়ে যাননি। সম্ভ্রম, ইজ্জত ও পর্দা প্রথার সভ্যতা ও ভদ্রতার মানদ- বজায় রেখেই নারী যে পুরুষের ন্যায় সর্বক্ষেত্রেই যোগ্যতার ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টিকেই মূলত তুলে ধরেছিলেন। বস্তুত আজকে নারী সমাজের যে ধরনের ভূমিকা ও কার্যকলাপ তা পর্যালোচনা সাপেক্ষ। নারীর ভূমিকা যদি হয় নারীদের ইজ্জত ও সম্মান ভূলুণ্ঠিত করার মতো কোন কার্যকলাপ, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। নারী অধিকারের নামে যদি হয় বেহায়াপনা, উচ্ছৃঙ্খলতায় সয়লাব, তবে তা গর্হিত ও নিন্দনীয়। অবশ্যই সমাজ তা প্রতিহত করবে। কিন্তু বর্তমানে একশ্রেণীর নারী জাগরণের নামে নারীদের ঘরের বাইরে এনে নানা ধরনের লাম্পট্য জীবন চরিতার্থে উৎসাহিত করে সমাজ জীবনকে কলুষিত করছে এবং উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদের অনৈতিক পথে ধাবিত করছে। এতে করে পারিবারিক জীবনকে পর্যুদস্ত করে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে উৎসাহিত করে সমাজকে কলুষিত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত করা হচ্ছে। এর মানে তো নারী জাগরণ(!) নয়। তা হচ্ছে বল্গাহারা জীবনের উচ্ছৃঙ্খল ও অনৈতিক জীবনাচরণ। যা কখনও সভ্য সমাজে বিশেষ করে কোন মুসলিম সমাজের কাম্য হতে পারে না। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা অবশ্যই অপরিহার্য। বর্তমানে আমাদের সমাজে নারী গোষ্ঠী, নারী পক্ষ এবং নারী সমাজের নামে বিভিন্ন ব্যানারে তাদের কর্মকা- পরিচালিত হতে দেখা যায়। এ সব নারী সমাজ কিন্তু আদর্শিক দেউলিয়াত্বের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখতে দেখি না। এরা শুধুই সুখ-সম্ভোগের সস্তা জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রেই সরব ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নারীত্ব, নারীর প্রকৃত মর্যাদা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আদর্শিক চেতনা উদ্বুদ্ধকরণে কোন প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা হতে দেখি না। নারীদের ঘরের বাইরে আনাই যদি হয় নারীর উন্নতি, অগ্রগতি এবং অধিকার তাহলে তো এটাও এক ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার পরিচায়ক। আমরা অবশ্যই ধর্ম নির্দেশিত পথে সমাজের মা-বোনদের প্রকৃত অর্থেই সমাজে নৈতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে নারীদের সমাজে এবং রাষ্ট্রে ভূমিকা প্রত্যাশা করি। যা হবে নারীর প্রকৃত অর্থেই মুক্তি ও অগ্রগতির সোপান। নারী প্রতিষ্ঠিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন আদর্শ মা হিসেবে এবং আদর্শ স্ত্রী হিসেবে। শুধু তাই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রেই আদর্শবাদী নারীকে অবশ্যই পুরুষের পাশাপাশি সমাজে অবদান রাখতে হবে। তবেই সে সমাজ, রাষ্ট্র এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন বা ভূমিকা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হবে না। তাই আজকের দিনে বেগম রোকেয়ার মতো আদর্শবাদী নারীর প্রয়োজন অপরিহার্য। দেশের অর্ধেক নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয়, তবে সমাজ কুসংস্কারাচ্ছন্নই থেকে যাবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম বা নাগরিকদের জন্য সুশিক্ষার প্রশিক্ষণের প্রকট আকার ধারণ করবে যদি না নারী সমাজ নৈতিকতা সম্পন্ন সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। একজন মনীষী বলেছিলেন, ওভ ুড়ঁ মরাব সব ধ মড়ড়ফ সড়ঃযবৎ, ও ংযধষষ মরাব ুড়ঁ ধ মড়ড়ফ হধঃরড়হ বাস্তবিকই আদর্শ নারী জাতি গঠনে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তবে আমরা জাতির কোন ভাল ভবিষ্যত প্রত্যাশা করতে পারি না।
অতএব আদর্শ নারী-পুরুষের সমন্বয়েই একটি আদর্শ জাতি গঠন সম্ভব। তাই কোন প্রকার হীনম্মন্যতা বা কুসংস্কারকে পেছনে ঠেলে নারীদের আদর্শিক মান উন্নয়নে এবং নারী স্থান গঠনের লক্ষ্যে আমরাও এগিয়ে যেতে চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা ও আসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার আলোক মশাল হাতে নিয়ে। মা তথা নারী জাতির প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পুরুষের ভূমিকাও সমান তাপর্যপূর্ণ। অতএব সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে আমরা সকলেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলে তবেই নারী জাগরণ ও ক্ষমতায়নসহ সকল ক্ষেত্রেই সফলতা আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই নারীর অবরোধ ভেঙ্গে জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে বেগম রোকেয়ার আদর্শ নিয়ে নারীকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ।
তবে একটি কথা প্রণিধানযোগ্য যে, তিনি কোনকালেই সীমা লঙ্ঘন করে নারী জাগরণের কোন দিকনির্দেশনা দিয়ে যাননি। সম্ভ্রম, ইজ্জত ও পর্দা প্রথার সভ্যতা ও ভদ্রতার মানদ- বজায় রেখেই নারী যে পুরুষের ন্যায় সর্বক্ষেত্রেই যোগ্যতার ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টিকেই মূলত তুলে ধরেছিলেন। বস্তুত আজকে নারী সমাজের যে ধরনের ভূমিকা ও কার্যকলাপ তা পর্যালোচনা সাপেক্ষ। নারীর ভূমিকা যদি হয় নারীদের ইজ্জত ও সম্মান ভূলুণ্ঠিত করার মতো কোন কার্যকলাপ, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। নারী অধিকারের নামে যদি হয় বেহায়াপনা, উচ্ছৃঙ্খলতায় সয়লাব, তবে তা গর্হিত ও নিন্দনীয়। অবশ্যই সমাজ তা প্রতিহত করবে। কিন্তু বর্তমানে একশ্রেণীর নারী জাগরণের নামে নারীদের ঘরের বাইরে এনে নানা ধরনের লাম্পট্য জীবন চরিতার্থে উৎসাহিত করে সমাজ জীবনকে কলুষিত করছে এবং উঠতি বয়সের যুবক-যুবতীদের অনৈতিক পথে ধাবিত করছে। এতে করে পারিবারিক জীবনকে পর্যুদস্ত করে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে উৎসাহিত করে সমাজকে কলুষিত ও অন্ধকারে নিমজ্জিত করা হচ্ছে। এর মানে তো নারী জাগরণ(!) নয়। তা হচ্ছে বল্গাহারা জীবনের উচ্ছৃঙ্খল ও অনৈতিক জীবনাচরণ। যা কখনও সভ্য সমাজে বিশেষ করে কোন মুসলিম সমাজের কাম্য হতে পারে না। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা অবশ্যই অপরিহার্য। বর্তমানে আমাদের সমাজে নারী গোষ্ঠী, নারী পক্ষ এবং নারী সমাজের নামে বিভিন্ন ব্যানারে তাদের কর্মকা- পরিচালিত হতে দেখা যায়। এ সব নারী সমাজ কিন্তু আদর্শিক দেউলিয়াত্বের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখতে দেখি না। এরা শুধুই সুখ-সম্ভোগের সস্তা জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রেই সরব ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নারীত্ব, নারীর প্রকৃত মর্যাদা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আদর্শিক চেতনা উদ্বুদ্ধকরণে কোন প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা হতে দেখি না। নারীদের ঘরের বাইরে আনাই যদি হয় নারীর উন্নতি, অগ্রগতি এবং অধিকার তাহলে তো এটাও এক ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার পরিচায়ক। আমরা অবশ্যই ধর্ম নির্দেশিত পথে সমাজের মা-বোনদের প্রকৃত অর্থেই সমাজে নৈতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে নারীদের সমাজে এবং রাষ্ট্রে ভূমিকা প্রত্যাশা করি। যা হবে নারীর প্রকৃত অর্থেই মুক্তি ও অগ্রগতির সোপান। নারী প্রতিষ্ঠিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন আদর্শ মা হিসেবে এবং আদর্শ স্ত্রী হিসেবে। শুধু তাই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রেই আদর্শবাদী নারীকে অবশ্যই পুরুষের পাশাপাশি সমাজে অবদান রাখতে হবে। তবেই সে সমাজ, রাষ্ট্র এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন বা ভূমিকা নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হবে না। তাই আজকের দিনে বেগম রোকেয়ার মতো আদর্শবাদী নারীর প্রয়োজন অপরিহার্য। দেশের অর্ধেক নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয়, তবে সমাজ কুসংস্কারাচ্ছন্নই থেকে যাবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম বা নাগরিকদের জন্য সুশিক্ষার প্রশিক্ষণের প্রকট আকার ধারণ করবে যদি না নারী সমাজ নৈতিকতা সম্পন্ন সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। একজন মনীষী বলেছিলেন, ওভ ুড়ঁ মরাব সব ধ মড়ড়ফ সড়ঃযবৎ, ও ংযধষষ মরাব ুড়ঁ ধ মড়ড়ফ হধঃরড়হ বাস্তবিকই আদর্শ নারী জাতি গঠনে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তবে আমরা জাতির কোন ভাল ভবিষ্যত প্রত্যাশা করতে পারি না।
অতএব আদর্শ নারী-পুরুষের সমন্বয়েই একটি আদর্শ জাতি গঠন সম্ভব। তাই কোন প্রকার হীনম্মন্যতা বা কুসংস্কারকে পেছনে ঠেলে নারীদের আদর্শিক মান উন্নয়নে এবং নারী স্থান গঠনের লক্ষ্যে আমরাও এগিয়ে যেতে চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা ও আসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার আলোক মশাল হাতে নিয়ে। মা তথা নারী জাতির প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পুরুষের ভূমিকাও সমান তাপর্যপূর্ণ। অতএব সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে আমরা সকলেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলে তবেই নারী জাগরণ ও ক্ষমতায়নসহ সকল ক্ষেত্রেই সফলতা আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই নারীর অবরোধ ভেঙ্গে জ্ঞানের মশাল জ্বালিয়ে বেগম রোকেয়ার আদর্শ নিয়ে নারীকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ।
No comments