তালা লাগাব, তবে কোথায় লাগাব?- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সদুপদেশ

যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ইতিহাসের কোনো স্বর্ণযুগে বাস করছিল। সেখানে তালার বালাই ছিল না; চুরি-ডাকাতি কী, তা মানুষ জানত না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনে সেখানে তালার প্রচলন ঘটল। তিনি বলেছেন, ঈদে বাড়ি গেলে ঘরে তালা লাগিয়ে যেতে।


কিছু কথা আছে, যা বলা অবান্তর, যা অর্থহীন; তা না বলাই ভালো। বাংলাদেশে জানমালের নিরাপত্তাহীনতার দশায় ঘরে তালা লাগাতে কেউ ভোলে না; কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভুলে গেছেন, কখন কী বলতে হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের অভিপ্রায় নিয়ে সন্দেহ করার কারণ নেই। তিনি একটি সদুপদেশই দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উপদেশটি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সাড়ে নিরানব্বই ভাগ মানুষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে শিশুসুলভ উপদেশ শুনতে রাজি নন। ইংরেজিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলা হয় ‘হোম মিনিস্টার’। কিন্তু বাংলাদেশে এখন ‘হোম’ মানেই নিরাপত্তার আশ্বাস নয়। যেখানে তালায় তালায় সুরক্ষিত শয়নকক্ষেও মানুষ নিহত হতে থাকে, যেখানে ঘরবাড়িতে অভিনব, রহস্যময়, নৃশংস খুনখারাবি হয়, সেখানে এমন কথা মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বোধকে পরিহাসের মতোই শোনায় বৈকি! তিনি আরও বলেছেন, ঈদ উপলক্ষে চাঁদাবাজি হওয়ার কোনো খবর তিনি পাননি। এ দ্বারা প্রমাণিত হলো, তিনি সংবাদপত্র পড়েন না এবং টেলিভিশনের খবর দেখেন না। এর থেকেও হতাশার কথা, তাঁর অধীন পুলিশ-গোয়েন্দা ও অন্যান্য সংস্থার লোকেরা হয় অন্ধ, নয়তো তাঁরা তাঁকে সত্য বলায় অপারগ। একটি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এহেন অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় কী!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই বলে ভয় দেখাতে চাননি যে, এবার কিন্তু তালা না লাগালে বিপত্তি হতে পারে। কিংবা তিনি এটাও বোঝাতে চাননি যে, চোর-ডাকাতেরা এবার বেপরোয়া হবে। কিন্তু কার্যত তাঁর কথার মানে এটাই দাঁড়ায়। এতে যেমন অহেতুক নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরও ছড়াবে, তেমনি গার্হস্থ্য অপরাধীরাও এর সুযোগ নেবে। বরং তিনি বলতে পারতেন, ঈদ উদ্যাপন নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সরকার আন্তরিক। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি অবশ্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েনের কথা বলেছেন। তালা প্রসঙ্গের অবতারণা না করে এখানেই তাঁর থেমে যাওয়া উচিত ছিল।

No comments

Powered by Blogger.