জামায়াতের ‘জিহাদি’ পুস্তিকা! by সেলিম জাহিদ
‘জামায়াত-শিবিরের অকুতোভয়, জানবাজ ও শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত কর্মীদের’ প্রতি দলের বন্দী নেতাদের মুক্ত করতে কারাগারের ‘লৌহ কপাট’ ভাঙার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের সাতজন প্রথম সারির নেতার বিচার চলছে।
এই অবস্থায় গত সপ্তাহ থেকে দলটির ‘ঢাকা মহানগর কমিটির আমিরের আহ্বান’ শিরোনামে ৪০ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির আমির ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম খান আত্মগোপনে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, প্রথম দফায় বইটির ৬০ হাজার কপি ছাপা হয়েছে। অফসেট কাগজে মুদ্রিত বইটি বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
পুস্তিকায় বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের কাছে নিজের জীবনের চাইতে আন্দোলন ও তার নেতাদের জীবনের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। ‘নেতাদের মুক্ত করার জন্য জান ও মালের কোরবানি দিতে’ কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে পবিত্র কোরআনের ৫৩টি আয়াত ও ১৭টি হাদিসের উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে বইটিতে।
পুস্তিকায় দলের কারাবন্দী নেতাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ‘অতন্দ্র প্রহরী’ বলে দাবি করা হয়। ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়, ‘...যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী, জামায়াতের নেতৃত্ব নির্মূল করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।’ যুদ্ধাপরাধের ঘটনাকে ৪০ বছর আগের ‘তামাদি’ হয়ে যাওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ বলেও দাবি করা হয় বইয়ে।
বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হকের কয়েকটি উদ্ধৃতিও তুলে দেওয়া হয়।
বইতে রাজধানীকে যেকোনো আন্দোলনের সূতিকাগার উল্লেখ করে কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বইয়ের ২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় কর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আমরা যে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি, তাতে সফলকাম হওয়ার জন্য দুইটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একটি হলো, আল্লাহর পথে জীবন দেওয়ার জন্য নিজেকে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত করা। আরেকটি হচ্ছে, এ পথে সর্বোচ্চ আর্থিক কোরবানি করার জন্য প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা।’
৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়, ‘...এ কাজের জন্য এমন একদল দুঃসাহসী কর্মীর প্রয়োজন, যারা আন্দোলনের বিজয় ও নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য অগ্নিকাণ্ডে ঝাঁপ দেওয়ার, কিংবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এর জন্য জেল-জুলুম, হুলিয়া, নির্যাতন, নিপীড়ন, চাকরি ও ব্যবসায় উন্নতি কিংবা ক্ষতি কোনো কিছুই তাদের আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও বিচ্যুত করতে পারবে না। সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, আপনজনের ভালোবাসা ও স্বপ্নকে উপেক্ষা করে সাফল্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সামনের দিকে এগোতেই থাকবে।’
রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বইটি যদি আসলেই জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ করে থাকে, তাহলে বলতে হবে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে এর মিল নেই।’
দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াতের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ জমিজমা, আবাসন, ব্যাংক, বিমাসহ নানা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে দলের কর্মসূচিগুলোতে এদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশানুরূপভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বইটিতে এ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দলের জন্য ‘সর্বোচ্চ আর্থিক কোরবানি’র প্রসঙ্গ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে একটি রাজনৈতিক দলের প্রকাশ করা পুস্তিকায় নেতাদের মুক্ত করতে কর্মীদের আত্মাহুতির মতো চরম পন্থায় উদ্বুদ্ধ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত—জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোরআন-হাদিসের কথা বলা হলে যদি আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে নেওয়া হয়, তাহলে তো কিছু বলার নেই।’
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো তাদের প্রচারপত্র ও পুস্তিকায় কোরআন ও হাদিসের সুবিধামতো অংশ উদ্ধৃত করে এভাবে কর্মীদের নাশকতায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে। বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা থেকে সময়ে সময়ে এ ধরনের পুস্তিকা ও প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
জামায়াতের পুস্তিকার বিষয়বস্তু উল্লেখ করে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বইটি আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখব। এতে প্রচলিত আইন, সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি হুমকির কোনো উপাদান আছে কি না? থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই দেশে সংঘাতময় রাজনীতি চলছে। তার মধ্যে এ ধরনের বক্তব্য ভয়ংকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে।’ তিনি বলেন, ‘যদি যুদ্ধাপরাধের বিচারটা স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে দ্রুত শেষ করা যেত, তাহলে এ সুযোগগুলো থাকত না।’ তাঁর মতে, দুই জোট যদি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনমুখী করে, তাহলে এ ধরনের জঙ্গি কথাবার্তা হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, প্রথম দফায় বইটির ৬০ হাজার কপি ছাপা হয়েছে। অফসেট কাগজে মুদ্রিত বইটি বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
পুস্তিকায় বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের কাছে নিজের জীবনের চাইতে আন্দোলন ও তার নেতাদের জীবনের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। ‘নেতাদের মুক্ত করার জন্য জান ও মালের কোরবানি দিতে’ কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে পবিত্র কোরআনের ৫৩টি আয়াত ও ১৭টি হাদিসের উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে বইটিতে।
পুস্তিকায় দলের কারাবন্দী নেতাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ‘অতন্দ্র প্রহরী’ বলে দাবি করা হয়। ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়, ‘...যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী, জামায়াতের নেতৃত্ব নির্মূল করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।’ যুদ্ধাপরাধের ঘটনাকে ৪০ বছর আগের ‘তামাদি’ হয়ে যাওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ বলেও দাবি করা হয় বইয়ে।
বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়ে প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হকের কয়েকটি উদ্ধৃতিও তুলে দেওয়া হয়।
বইতে রাজধানীকে যেকোনো আন্দোলনের সূতিকাগার উল্লেখ করে কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বইয়ের ২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় কর্মীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আমরা যে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি, তাতে সফলকাম হওয়ার জন্য দুইটি বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। একটি হলো, আল্লাহর পথে জীবন দেওয়ার জন্য নিজেকে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত করা। আরেকটি হচ্ছে, এ পথে সর্বোচ্চ আর্থিক কোরবানি করার জন্য প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা।’
৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়, ‘...এ কাজের জন্য এমন একদল দুঃসাহসী কর্মীর প্রয়োজন, যারা আন্দোলনের বিজয় ও নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য অগ্নিকাণ্ডে ঝাঁপ দেওয়ার, কিংবা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এর জন্য জেল-জুলুম, হুলিয়া, নির্যাতন, নিপীড়ন, চাকরি ও ব্যবসায় উন্নতি কিংবা ক্ষতি কোনো কিছুই তাদের আন্দোলন থেকে এক ইঞ্চিও বিচ্যুত করতে পারবে না। সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা, আপনজনের ভালোবাসা ও স্বপ্নকে উপেক্ষা করে সাফল্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সামনের দিকে এগোতেই থাকবে।’
রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বইটি যদি আসলেই জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ করে থাকে, তাহলে বলতে হবে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে এর মিল নেই।’
দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াতের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ জমিজমা, আবাসন, ব্যাংক, বিমাসহ নানা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে দলের কর্মসূচিগুলোতে এদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশানুরূপভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বইটিতে এ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দলের জন্য ‘সর্বোচ্চ আর্থিক কোরবানি’র প্রসঙ্গ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে একটি রাজনৈতিক দলের প্রকাশ করা পুস্তিকায় নেতাদের মুক্ত করতে কর্মীদের আত্মাহুতির মতো চরম পন্থায় উদ্বুদ্ধ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত—জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোরআন-হাদিসের কথা বলা হলে যদি আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে নেওয়া হয়, তাহলে তো কিছু বলার নেই।’
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো তাদের প্রচারপত্র ও পুস্তিকায় কোরআন ও হাদিসের সুবিধামতো অংশ উদ্ধৃত করে এভাবে কর্মীদের নাশকতায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে। বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা থেকে সময়ে সময়ে এ ধরনের পুস্তিকা ও প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
জামায়াতের পুস্তিকার বিষয়বস্তু উল্লেখ করে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বইটি আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখব। এতে প্রচলিত আইন, সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি হুমকির কোনো উপাদান আছে কি না? থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই দেশে সংঘাতময় রাজনীতি চলছে। তার মধ্যে এ ধরনের বক্তব্য ভয়ংকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে।’ তিনি বলেন, ‘যদি যুদ্ধাপরাধের বিচারটা স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্যভাবে দ্রুত শেষ করা যেত, তাহলে এ সুযোগগুলো থাকত না।’ তাঁর মতে, দুই জোট যদি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনমুখী করে, তাহলে এ ধরনের জঙ্গি কথাবার্তা হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।
No comments