চিরিরবন্দরে তদন্ত কমিটির কাজ শুরু, এ পর্যন্ত গ্রেফতার ১৮- সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা

দিনাজপুর ॥ জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন মোল্লার প্ররোচনায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় অনেক পুরনো মন্দিরের পাশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে মসজিদঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে জনগণকে বিভ্রান্ত ও উত্তেজিত করে হিন্দু সম্প্রদায়ের


বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুট ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগে দায়েরকৃত পৃথক ৩টি মামলায় এ পর্যন্ত ১৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা ৩টির অন্যতম আসামি জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন মোল্লা পলাতক রয়েছেন। পুলিশ বৃহস্পতিবার ভোরে লুন্ঠিত ৮টি গরু ও ১টি সেল মেশিন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৩ আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার অফিসার্স ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম জানান, সৃষ্ট ঘটনায় চিরিরবন্দর উপজেলার রাজাপুর গ্রাম থেকে লুণ্ঠিত হয়ে যাওয়া ৫০টি গরুর মধ্যে ৮টি গরু ও ১টি সেল শ্যালোমেশিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পার্বতীপুর উপজেলার যশাই গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লুণ্ঠিত মালামাল এবং পালিয়ে থাকা আসামিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, এই ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার দিন ৪ আগস্ট দুপুরে চিরিরবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ৬৪ জনকে আসামি করে সরকারী কাজে বাধা প্রদান, অগ্নিসংযোগ, মালামাল লুণ্ঠন ও মারপিটের অভিযোগে মামলা করে।
৭ আগস্ট চিরিরবন্দর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সতীশ চন্দ্র রায়ের পুত্র সুবাস চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ১১০ জনকে আসামি আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী ও দ্রুত বিচার আইনে এবং ৯ আগস্ট দুপুরে চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের দেবী প্রসাদ রায়ের পুত্র দীনেশ চন্দ্র রায় বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। এই ৩টি মামলায় অন্যতম আসামি হিসেবে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন মোল্লাকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আফতাব উদ্দীন মোল্লা এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি দানকারী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কলেজের প্রফেসর হামিদা খাতুনকে আসামি করা হয়েছে।
এই ৩টি মামলায় ১৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ৩ জন আসামিকে গত ৮ আগস্ট ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ জানান, একটি মহল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কৌশলে চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ নির্মাণে বাধা দিচ্ছে এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে ৪ আগস্ট ভোরে রাজাপুর বাজারে লোকজন সমাবেত করে। শান্তিশৃঙ্খলার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। কিন্তু তার পরেও রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার লক্ষ্যে এবং সরকার তথা প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল মালেককে প্রধান করে সরকারী কৌশলী (জিপি) ওয়াহেদ আলী নোবেল ও বীরগঞ্জ সার্কেল এএসপি টিএম শাহীন আহমেদের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ১৮ জন গ্রামবাসী, ৫ জন জনপ্রতিনিধি ও ৫ জন সরকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে।
আগামী ১৩ আগস্ট তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে দাখিল করবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৪০টি পরিবারের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে ২টি লুঙ্গি ও ২টি শাড়ী, ২০ কেজি করে চাল এবং ১ বান্ডিল করে ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.