দায়িত্বহীনতার নজির গড়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন by আহমেদ কুতুব
এক যুগ আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেডে এক লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা আজ মৃতপ্রায়। ফেরত গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ। সরকারও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে।
আর এ সবই ঘটেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য তৎকালীন সরকার দুই হাজার ৪৯২ একর বেসরকারি ও সরকারি জমি কোরিয়ান ইপিজেডকে বরাদ্দ দেয়।
আর জেলা প্রশাসন সেই ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ধার্য করে ৯ কোটি টাকা। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণে এত বেশি টাকা ধার্য অযৌক্তিক বিবেচনা করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। আর সেই মামলার কারণে ঝুলে পড়ে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার মীমাংসা না হওয়ায় বিশাল এই ভূমি অলস পড়ে আছে। এদিকে চাহিদামতো জমি না পাওয়ায় ফেরত যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ।
অভিযোগ রয়েছে, জমি বরাদ্দ নিয়েও কোনো শিল্প-কারখানা না করায় কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের লিজ বাতিলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলাটি পরিচালনার সময় কোনো আইনজীবী না থাকায় জেলা প্রশাসন তাতে হেরে যায়। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ আপিলে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে এবারও কোনো আইনজীবী না থাকলে সরকার সাড়ে ৯ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সরকারের বোর্ড অব গভর্ন্যান্স। জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ করা এবং বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে তা বুঝিয়ে দেওয়া। এর বাইরে আর কোনো দায়িত্ব নেই।' তিনি বলেন, "কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের পর টাকা জমার নির্দেশনা দেওয়া হলে তারা সরকারি খাসজমির বিপরীতে সাড়ে ৯ কোটি টাকা 'অতিরিক্ত' ধার্য করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে মামলা করে। মামলাটি বর্তমানে অ্যাপিলেট ডিভিশনে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। জেলা প্রশাসন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে মামলা পরিচালনার জন্য আবেদন জানিয়েছে। মামলা পরিচালনার সময় সরকারের কোনো আইনজীবী থাকে কি না সেটা আমি জানি না।"
কার অবহেলায় এক যুগেও প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হলো না- প্রশ্ন করা হলে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, 'জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কোরিয়ান ইপিজেড সাড়ে ৯ কোটি টাকা না দিয়ে ১৯৯৯ সালে মামলা করেছে। সেই থেকে জায়গাটি খালি পড়ে আছে। এক লাখ বেকার লোকের কর্মসংস্থান না হওয়ার সব দায়দায়িত্ব কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।'
জানা গেছে, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি না থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে কোরিয়ান ইপিজেডের পক্ষে মামলার (মামলা নম্বর ১৯২৮/৯৯) একতরফা রায় দেন হাইকোর্ট। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে জরুরি অবস্থার সময়ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় হাইকোর্টে আপিলও খারিজ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কোরিয়ান ইপিজেডের (কেইপিজেড) জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'খাস জায়গা অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত ৫০% হারে যে টাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ধার্য করেছে, তা আইনসম্মত ছিল না। তাই মামলা করেছি। জেলা প্রশাসন বাড়তি টাকার এ ঝামেলা সৃষ্টি না করলে এত দিনে এই ইপিজেড পুরোদমে চালু হয়ে যেত। এক লাখ বেকারের চাকরিও হতো। জেলা প্রশাসনের কারণে একদিকে আমরা শিল্প-কারখানা করতে পারছি না, অন্যদিকে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না।'
বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বিদেশি প্রায় দুই ডজনের মতো প্রতিষ্ঠান শিল্প-কারখানা স্থাপনে সরকারের কাছে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চাহিদামতো জায়গা দিতে না পারায় হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ফেরত গেছে। এর মধ্যে চীনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাইকো, রিবক, এডিডাস, ডিপিএল সুইটকেজ গ্রুপসহ নামিদামি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিনিয়োগ বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুব কবির বলেন, 'সম্প্রতি বিদেশি কম্পানি ডিপিএল সুইটকেজ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু সরকারের কাছে জায়গা না থাকায় তারা ফেরত গেছে। বিগত কয়েক বছরে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ শুধু জায়গার অভাবে ফেরত গেছে। পরিসংখ্যান না থাকায় কত টাকার বিদেশি বিনিয়োগ ফেরত গেছে, তা নির্দিষ্ট করে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।'
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য তৎকালীন সরকার দুই হাজার ৪৯২ একর বেসরকারি ও সরকারি জমি কোরিয়ান ইপিজেডকে বরাদ্দ দেয়।
আর জেলা প্রশাসন সেই ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ধার্য করে ৯ কোটি টাকা। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণে এত বেশি টাকা ধার্য অযৌক্তিক বিবেচনা করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। আর সেই মামলার কারণে ঝুলে পড়ে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার মীমাংসা না হওয়ায় বিশাল এই ভূমি অলস পড়ে আছে। এদিকে চাহিদামতো জমি না পাওয়ায় ফেরত যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ।
অভিযোগ রয়েছে, জমি বরাদ্দ নিয়েও কোনো শিল্প-কারখানা না করায় কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের লিজ বাতিলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলাটি পরিচালনার সময় কোনো আইনজীবী না থাকায় জেলা প্রশাসন তাতে হেরে যায়। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ আপিলে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে এবারও কোনো আইনজীবী না থাকলে সরকার সাড়ে ৯ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সরকারের বোর্ড অব গভর্ন্যান্স। জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার দায়িত্ব হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ করা এবং বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে তা বুঝিয়ে দেওয়া। এর বাইরে আর কোনো দায়িত্ব নেই।' তিনি বলেন, "কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের পর টাকা জমার নির্দেশনা দেওয়া হলে তারা সরকারি খাসজমির বিপরীতে সাড়ে ৯ কোটি টাকা 'অতিরিক্ত' ধার্য করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে মামলা করে। মামলাটি বর্তমানে অ্যাপিলেট ডিভিশনে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। জেলা প্রশাসন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে মামলা পরিচালনার জন্য আবেদন জানিয়েছে। মামলা পরিচালনার সময় সরকারের কোনো আইনজীবী থাকে কি না সেটা আমি জানি না।"
কার অবহেলায় এক যুগেও প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হলো না- প্রশ্ন করা হলে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, 'জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কোরিয়ান ইপিজেড সাড়ে ৯ কোটি টাকা না দিয়ে ১৯৯৯ সালে মামলা করেছে। সেই থেকে জায়গাটি খালি পড়ে আছে। এক লাখ বেকার লোকের কর্মসংস্থান না হওয়ার সব দায়দায়িত্ব কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।'
জানা গেছে, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কোনো প্রতিনিধি না থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে কোরিয়ান ইপিজেডের পক্ষে মামলার (মামলা নম্বর ১৯২৮/৯৯) একতরফা রায় দেন হাইকোর্ট। পরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে জরুরি অবস্থার সময়ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় হাইকোর্টে আপিলও খারিজ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কোরিয়ান ইপিজেডের (কেইপিজেড) জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'খাস জায়গা অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত ৫০% হারে যে টাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ধার্য করেছে, তা আইনসম্মত ছিল না। তাই মামলা করেছি। জেলা প্রশাসন বাড়তি টাকার এ ঝামেলা সৃষ্টি না করলে এত দিনে এই ইপিজেড পুরোদমে চালু হয়ে যেত। এক লাখ বেকারের চাকরিও হতো। জেলা প্রশাসনের কারণে একদিকে আমরা শিল্প-কারখানা করতে পারছি না, অন্যদিকে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না।'
বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বিদেশি প্রায় দুই ডজনের মতো প্রতিষ্ঠান শিল্প-কারখানা স্থাপনে সরকারের কাছে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চাহিদামতো জায়গা দিতে না পারায় হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ফেরত গেছে। এর মধ্যে চীনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাইকো, রিবক, এডিডাস, ডিপিএল সুইটকেজ গ্রুপসহ নামিদামি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিনিয়োগ বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুব কবির বলেন, 'সম্প্রতি বিদেশি কম্পানি ডিপিএল সুইটকেজ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু সরকারের কাছে জায়গা না থাকায় তারা ফেরত গেছে। বিগত কয়েক বছরে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ শুধু জায়গার অভাবে ফেরত গেছে। পরিসংখ্যান না থাকায় কত টাকার বিদেশি বিনিয়োগ ফেরত গেছে, তা নির্দিষ্ট করে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।'
No comments