মুসলমানদের জন্য রোজা সহজ করা হয়েছে by সৈয়দ গোলাম মোরশেদ
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, 'রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস হালাল করা হলো, তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত আছেন যে তোমরা নফসের খেয়ানত করে থাকো।
অতএব তিনি তোমাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিপাত করলেন এবং তোমাদের স্নেহের ক্ষমা করলেন। অতএব তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিতাবস্থ করেছেন (২ঃ১৮৩) তা আকাঙ্ক্ষা করো এবং খাও ও পান করো, যতক্ষণ প্রভাতের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা তোমাদের জন্য স্পষ্ট করা না হয়। অতঃপর সিয়াম পূর্ণ করো রাতের দিকে এবং তোমরা স্ত্রী সংগম কোরো না মসজিদে অবস্থানকালে। এটি আল্লাহর সীমারেখা সুতরাং এর (স্ত্রীর) কাছে যেয়ো না। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাঁর (আল্লাহর) পরিচয় ব্যাখ্যাদান করেন, যেন তাঁরা তাকওয়া অবলম্বন করে (সুরা বাকার : ১৮৭)।'
প্রথম যখন সিয়াম পালনের নির্দেশ দেওয়া হয় তখন রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে এরপর জাগলেও পানাহার ও স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ ছিল। বর্ণিত আছে, একবার হজরত ওমর (রা.) সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে চাইলে স্ত্রী তাঁকে বলেন, 'আমি ঘুমিয়ে পড়েছিল, তাই আমার রোজা শুরু হয়ে গেছে।' কিন্তু হজরত ওমর (রা.) নাছোড়বান্দা। তিনি স্ত্রীর কথায় কর্ণপাত না করে সহবাস করেই ফেললেন। পরদিন হজরত ওমর (রা.) অনুতপ্ত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলে মহান আল্লাহ উপর্যুক্ত আয়াতটি নাজিল করলেন।
পূর্ববর্তী নিয়মে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনেক অসুবিধা হতো, কেউ কেউ কায়িক পরিশ্রম করে সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরে ইফতার করার আগেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। ফলে রাতে জাগ্রত হলেও তাঁদের খাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকত না। অনুরূপভাবে রাতে স্ত্রী সহবাসেরও সুযোগ থাকত না। এ দুই ধরনের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তায়ালা সিয়াম পালনের আনুষ্ঠানিক বিধান সহজতর করে দিয়েছেন। এতে তিনি রাতে স্ত্রী সহবাস ও সেহরি খাওয়ারও সুব্যবস্থা করে দিলেন।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের পরিচ্ছদ বা লেবাস। এ কথার অর্থ স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের সমর্থক, সহায়ক, আনন্দ ও আনন্দদায়ক। পোশাক যেমন মানুষকে শীত-তাপ থেকে রক্ষা করে, তেমনি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মান-ইজ্জত, আবরু ও সম্ভ্রম রক্ষাকারী। দাম্পত্য জীবনে ইসলামের বিধান হলো, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে পোশাকের মতো সাজিয়ে রাখবে। উপর্যুক্ত আয়াতে সিয়াম প্রসঙ্গে লেবাসের অর্থ একটি বিশেষ রূপ গ্রহণ করেছে। নারী ও পুরুষ একে অন্যকে লেবাসের মতো জড়িয়ে রাখতে খুবই ভালোবাসে, ফলে নফসের বশবর্তী হয়ে মানুষ সিয়ামের নিয়ম ভঙ্গ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে! আল্লাহপাক তা বিশেষভাবে অবগত আছেন। তাই আইনের কড়াকড়ি শিথিল করে সিয়ামকে সহজতর করা হয়েছে।
আত্মসত্তাকে দেহমনের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার সাধনার নাম হচ্ছে সিয়াম। এই বিচ্ছিন্নতা প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দেহস্থ অবস্থায় আছে। মৃত্যুর দ্বারা যেকোনো সময় এ বিচ্ছেদ কার্যকর হতে পারে। শারীরিকভাবে মৃত্যু ঘটার আগে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দেহমনের এ বিচ্ছিন্নতা অর্জন করতে হয়। তাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'মৃত্যুর আগে মরে যাও।' এ মরা আত্মহত্যা নয়, বরং নফসানিয়াতের মৃত্যু ঘটিয়ে আত্মিক চৈতন্য অর্জন করা।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
প্রথম যখন সিয়াম পালনের নির্দেশ দেওয়া হয় তখন রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে এরপর জাগলেও পানাহার ও স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ ছিল। বর্ণিত আছে, একবার হজরত ওমর (রা.) সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে চাইলে স্ত্রী তাঁকে বলেন, 'আমি ঘুমিয়ে পড়েছিল, তাই আমার রোজা শুরু হয়ে গেছে।' কিন্তু হজরত ওমর (রা.) নাছোড়বান্দা। তিনি স্ত্রীর কথায় কর্ণপাত না করে সহবাস করেই ফেললেন। পরদিন হজরত ওমর (রা.) অনুতপ্ত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলে মহান আল্লাহ উপর্যুক্ত আয়াতটি নাজিল করলেন।
পূর্ববর্তী নিয়মে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনেক অসুবিধা হতো, কেউ কেউ কায়িক পরিশ্রম করে সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরে ইফতার করার আগেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। ফলে রাতে জাগ্রত হলেও তাঁদের খাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকত না। অনুরূপভাবে রাতে স্ত্রী সহবাসেরও সুযোগ থাকত না। এ দুই ধরনের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তায়ালা সিয়াম পালনের আনুষ্ঠানিক বিধান সহজতর করে দিয়েছেন। এতে তিনি রাতে স্ত্রী সহবাস ও সেহরি খাওয়ারও সুব্যবস্থা করে দিলেন।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের পরিচ্ছদ বা লেবাস। এ কথার অর্থ স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের সমর্থক, সহায়ক, আনন্দ ও আনন্দদায়ক। পোশাক যেমন মানুষকে শীত-তাপ থেকে রক্ষা করে, তেমনি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের মান-ইজ্জত, আবরু ও সম্ভ্রম রক্ষাকারী। দাম্পত্য জীবনে ইসলামের বিধান হলো, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে পোশাকের মতো সাজিয়ে রাখবে। উপর্যুক্ত আয়াতে সিয়াম প্রসঙ্গে লেবাসের অর্থ একটি বিশেষ রূপ গ্রহণ করেছে। নারী ও পুরুষ একে অন্যকে লেবাসের মতো জড়িয়ে রাখতে খুবই ভালোবাসে, ফলে নফসের বশবর্তী হয়ে মানুষ সিয়ামের নিয়ম ভঙ্গ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে! আল্লাহপাক তা বিশেষভাবে অবগত আছেন। তাই আইনের কড়াকড়ি শিথিল করে সিয়ামকে সহজতর করা হয়েছে।
আত্মসত্তাকে দেহমনের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করার সাধনার নাম হচ্ছে সিয়াম। এই বিচ্ছিন্নতা প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দেহস্থ অবস্থায় আছে। মৃত্যুর দ্বারা যেকোনো সময় এ বিচ্ছেদ কার্যকর হতে পারে। শারীরিকভাবে মৃত্যু ঘটার আগে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দেহমনের এ বিচ্ছিন্নতা অর্জন করতে হয়। তাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'মৃত্যুর আগে মরে যাও।' এ মরা আত্মহত্যা নয়, বরং নফসানিয়াতের মৃত্যু ঘটিয়ে আত্মিক চৈতন্য অর্জন করা।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
No comments