আমানত শাহ্ লুঙ্গি অলিম্পিক আপডেট-ভাঙনের সুর বাজতে শুরু করেছে by মাসুদ পারভেজ

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরে এসেছেন বছরখানেকও হয়নি। এই সময়ের মধ্যে গান গাইতে তাই আর মঞ্চেও ওঠা হয়নি জর্জ মাইকেলের। জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেশ কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসা ব্রিটিশ এ গায়ক এত দিন একরকম বিশ্রামেই ছিলেন।


'ছিলেন' বলার কারণ বিশ্রাম বাদ দিয়ে আপাতত তিনি ধুন্ধুমার রিহার্সেলে ব্যস্ত। লন্ডন অলিম্পিকের বিদায়ী সুরের মূর্ছনায় সবাইকে ডুবিয়ে দিতে মঞ্চে উঠবেন তো তিনিও।
স্ট্র্যাটফোর্ডের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে যে সুর বেজে উঠবে রবিবার সন্ধ্যা নামতে না নামতেই। যদিও বিদায়ের রাগিণী এর মধ্যেই বাজতে শুরু করে দিয়েছে। কত হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা আর সাফল্য-ব্যর্থতার মহাকাব্য রচনার পর অলিম্পিক এসে পৌঁছেছে শেষের দ্বারপ্রান্তে। বেশির ভাগ ইভেন্টেরই ফয়সালা হয়ে গেছে। বাকি আছে কেবল অল্প কিছু। শেষের আগে সেগুলোরই কোনো একটা সাক্ষী হওয়ার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টাও থেমে নেই। সেই যে কবে ১৯৪৮ সালে অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ পেয়েছিল লন্ডন। এর ৬৪ বছর পর এবার আবার। আবার আয়োজক হওয়ার সুযোগটা ঠিক এ হিসাব মেনে চললে জীবদ্দশায় আর নিজেদের দেশে অলিম্পিক দেখার সুযোগই হবে না সিংহভাগ ব্রিটিশের। সে জন্যই লন্ডনের টিকিট বক্স অফিসগুলোর বাইরে ভিড় লেগেই আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিটের জন্য বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনার ছবিটাই যেন এখানেও ফুটছে। টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে এমনকি ১৮ ঘণ্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে অনেককে। কেউ কেউ এর চেয়েও বেশি অপেক্ষায় থেকেছেন। ৪৯ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ যেমন গত তিন দিনে সব মিলিয়ে ২৮ ঘণ্টা পার করে দিয়েছেন টিকিট অফিসের সামনে।
তাঁর চাই ১০ হাজার মিটার দৌড়ে সোনাজয়ী ব্রিটিশ অ্যাথলেট মো. ফারাহকে দেখার সুযোগ। সোমালিয়ায় জন্ম নেওয়া এ ব্রিটিশ অ্যাথলেট শনিবার পাঁচ হাজার মিটারেও সোনাজয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামছেন। সে লক্ষ্য পূরণ হবেই, নিশ্চয়তা নেই। সে জন্য বিজয়ের রেশ ধরে রাখতেই কিনা মেয়েদের ১০০ মিটার হার্ডলস থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন জেসিকা এনিস। মেয়েদের হেপটাথলনে সোনাজয়ী এ 'পোস্টার গার্ল'কে নিয়ে গোটা ব্রিটেন এমনই মাতোয়ারা যে অন্য কোনো ইভেন্টের ব্যর্থতা তাতে কিছুটা প্রভাব ফেলতেই পারত। হার্ডলস থেকে সরে দাঁড়ানোয় তাঁর উদ্যাপনের দৃশ্যটাই এখন সবার চোখে স্থায়ী হয়ে থাকতে পারছে।
অবশ্য শুধু জেসিকাকে নিয়েই নয়, এবার আরো কতজনকে নিয়েই না মেতে থাকতে পারছে ব্রিটেন। নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (২২টি) সোনা জেতা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এবার তাঁর ষষ্ঠ সোনা জিতে ব্রিটেনের ইতিহাস সেরা অলিম্পিয়ানের মর্যাদা পেয়ে গেছেন সাইক্লিস্ট স্যার ক্রিস হোয়ে। ৯৯ বছরের মধ্যে প্রথম ব্রিটিশ হিসেবে ট্যুর ডি ফ্রান্সের শিরোপা জেতা আরেক সাইক্লিস্ট অলিম্পিকেও অব্যাহত রেখেছেন তাঁর সাফল্যের ধারা। আয়োজনের পাশাপাশি নিজেদের অ্যাথলেটদের সাফল্য দিয়েও অলিম্পিক স্মরণীয় করে রাখার যে স্বপ্ন দেখেছিল ব্রিটেন, সে স্বপ্নও পূরণ হয়ে গেছে অনেকখানি। এমন কত স্বপ্ন যেমন এ অলিম্পিকে পূরণ হয়েছে, তেমনি ভেঙে চৌচিরও হয়ে গেছে কত! জীবনের মতোই এমন সব উত্থান-পতনের সাক্ষী হতে হতে অলিম্পিকও এসে দাঁড়িয়েছে শেষের দুয়ারে।
যেখানে গত রাতেই হয়ে গেছে স্প্রিন্টের অন্যতম আকর্ষক ইভেন্ট ছেলেদের ২০০ মিটার স্প্রিন্টও। এরপর ফুটবল আর বাস্কেটবলের ফাইনাল ছাড়া বিশ্বব্যাপী আকর্ষণীয় ইভেন্টও আর খুব একটা নেই। কেবলই অলিম্পিকের বিদায়ী সুর বেজে ওঠার অপেক্ষা। রবিবারের সমাপনী অনুষ্ঠান দিয়ে বাজবে সেই শেষের সুর। যে সুরে সুরারোপ করতে থাকবেন জর্জ মাইকেলও।

No comments

Powered by Blogger.