মালয়েশিয়ায় বাঙালী by মুনতাসীর মামুন

(পূর্ব প্রকাশের পর) কোন একটা নাম বলেছিলেন, মনে নেই] নামাজ শেষে সবার সঙ্গে মোলাকাত করেন। বাঙালীদের তিনি খুব পছন্দ করেন।’ আরেক বাঙালী বলছিলেন, টুইন টাওয়ার করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মাহাথির। টাওয়ার কমপ্লিট হলে টাওয়ারের মালিক মাহাথিরকে সর্বোচ্চ তলায় একটি অফিস দিয়েছেন।


মাহাথির মাঝে মাঝে সেখানে আসেন। লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। অস্বীকার করার উপায় নেই, আজকের মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির। আর এই রূপান্তরে বাঙালীদেরও একটা অবদান আছে।
যে কুয়ালালুমপুরে এসেছিলাম সে কুয়ালালুমপুর ঠিকই আছে, তবে প্রকৃতি বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার মনোরেল কী নেই? নতুন রাজধানী পুত্রজায়া না দেখলে বোঝা যাবে না এক যুগে রূপান্তরটা কী হয়েছে। পুত্রজায়ার প্রতিটি ইট পরিকল্পিত। ছুটির দিন পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে। দেখার, বিনোদনের জিনিসও এত আছে! বাঙালী শ্রমিকদের ঘাম মিশে আছে পুত্রজায়ার ইমারত, রাস্তাঘাটে। কেএলে সার্ভিস সেক্টরের সংখ্যা বাড়ছে এবং সেই বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে বাঙালীরা। মালয়েশিয়া যে সম্প্রতি প্রায় দুই লাখ অবৈধ বাঙালীকে বৈধ করল তা আমাদের স্বার্থে নয়, তাদের স্বার্থে। বাঙালী শ্রমিক না থাকলে শিল্প-কারখানার গতি শ্লথ হয়ে যাবে, সার্ভিস সেক্টরে ধংস নামবে। এখন অবশ্য অনেক নেপালী আসছেন মালয়েশিয়া। চীনা, ভারতীয়, থাই প্রভৃতির কথা না-ই বা বললাম। এভাবে মালয়েশিয়া আরও মেট্রোপলিটান হচ্ছে। গ্লোবালাইজেশন বা গেলোকনায়ন বদলে দিচ্ছে পৃথিবীর সব দেশ। হয়ত দু’তিন যুগ পর এমন সময় আসবে যখন নিজের দেশ বলে নির্দিষ্ট কিছু থাকবে না।
পরিবর্তনের কথা বলছিলাম, তার একটি উদাহরণ দিই। এই পরিবর্তনের পেছনে একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু নেতৃত্বের নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবারই।
আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর দেখে আমি আর হাশেম খান তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশে ব্যাংকের কারেন্সি মিউজিয়ামটিকে টাকা জাদুঘরে রূপান্তর করতে। এক কথায় উৎসাহী হয়ে উঠলেন আতিউর। নির্বাহী পরিচালক অসীমকে দায়িত্ব দিলেন। শুধু তাই নয়, বললেন, ‘আপনারা কুয়ালালামপুরের মালয়েশীয় স্টেট ব্যাংকের জাদুঘরটিও দেখে আসুন।’
আতিউর যত সহজে বললেন কাজ তত সহজে হলো না। পুরো বিষয়টি বোর্ডে নিতে হলো যার দরকার ছিল না। কারণ একজন সচিব তা চান। মিটিংয়ে আরেক সচিব বললেন, এসবের কী দরকার? যাক প্রকল্প পাস হলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানালাম, আপনি মালয়েশীয় স্টেট ব্যাংকে লিখুন আমরা যাব। তা ছাড়া, আপনি সেখানে গেছেন। থাকার ভাল জায়গা আছে। তাদের জানান। দিন দশেক পর জিজ্ঞেস করলাম, ‘ই-মেইল করেছেন?’ বললেন, ‘না’ কারণ? কার্যবিররণী পাননি, তা স্বাক্ষরিত হয়নি। ব্যাংকের সচিব বলছেন, ‘এর দরকার নেই।’ কিন্তু তিনি তা করতে রাজি নন, কারণ তার ওপরওয়ালা যদি মাইন্ড করেন। অথচ তারা সবাই বোর্ড মিটিংয়ে ছিলেন। সবই জানেন। আতিউর ছিলেন বিদেশে সব শুনে ক্ষুব্ধ হলেন। তঁাঁর ক্ষোভের কারণে, আমদের আসার দিন তিনকে আগে ই-মেইল গেল। মাঝে ছিল শনি-রবি। ঢাকা ছাড়ার আগে আর ই-মেইলের উত্তর পাওয়া গেল না।
প্রথম দিনই হোটেলে এসে তৈরি হয়ে রওনা হলাম জাদুঘরের উদ্দেশে। আমাদের নেতা দাশগুপ্ত অসীমকে বললাম, ‘ড্রাইভারকে ঠিকানা দিন।’
‘ঠিকানা তো আনিনি।’ জানালেন অসীম।
‘বলেন কী! যেখানে যাব সেখানের ঠিকানা আনেননি।’ বলি আমি।
‘আমি আগে এসেছি, ব্যাংক নিগারায়। সেটিই তো স্টেট ব্যাংক। অসুবিধা হবে না।’ নিশ্চিন্ত মনে জানান অসীম।
ড্রাইভারকে সবাই বোঝালাম ব্যাংক নিগারায় যাব। ড্রাইভার সেখানে নিয়ে গেল। অসীম আবার সেখানে নেমে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কারেন্সি মিউজিয়ামটা কোথায়?’ ড্রাইভার ঠিকানা বুঝে নিল।
বিরাট এক ইমারতের সামনে আমরা নামলাম। মনে হলো এটিই বুঝি স্টেট ব্যাংক বা ব্যাংক নিগারা। অসীম বললেন, ‘জায়গাটা নতুন মনে হচ্ছে। বোধহয় স্টেট ব্যাংক নতুন বিল্ডিংয়ে এসেছে বা এক্সটেনশন হয়েছে।’
লোকজন তেমন নেই। বিরাট রিসেপশনে দু’একজন। খোঁজ নিয়ে জানলাম, হ্যাঁ। এখানেই কারেন্সি মিউজিয়াম। তিন তলায়।
উঠলাম তিন তলায়। একেবারে আধুনিক কায়দায় সাজানো। প্রদর্শনীর জন্য যেমন আছে প্রয়োজনীয় অবজেকটস। ডিজিটাল পদ্ধতিতেও সব কিছু জানা যায়। অনেকক্ষণ ধরে আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে আসার পর দেখি ওপর তলায় চিত্রকলার গ্যালারি। উৎসাহ নিয়েই গেলাম। আমরা তিনজনই চিত্রকলার সঙ্গে কোন না কোনভাবে জড়িত। বিরাট প্রদর্শনশালা। মালয়েশীয় চিত্রকলার সব নিদর্শনে সাজানো। সেখানেও ঘণ্টা খানেক কাটিয়ে বেরোনোর পর দীর্ঘশ্বাস ফেললাম না। সান্ত¡না পেলাম চিত্রকলায় আমরা এগিয়ে, অনেক এগিয়ে। অসীসকে বললাম, ‘আপনার কর্মকর্তাদের বোঝাতে পারবেন কেন স্টেট ব্যাংক জাদুঘর চিত্রশালা করে এত আধুনিকভাবে?’ অসীম ঘাড় নেড়ে অপারগতা জানালেন। লিফটে নামছি। দোতলায় মোটাসোটা এক মালয়ী ঢুকলেন।
‘গুড মর্নিং’
‘গুড মর্নিং’
‘আপনারা এখানে এসেছিলনে?’
‘হ্যাঁ, কারেন্সি মিউজিয়াম দেখতে।’
‘আপনারা কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?
‘হ্যাঁ, বাংলাদেশ থেকে এসেছি।’
লিফট একতলায় এল। বেরোলাম সবাই।
‘আরে; আপনাদেরই তো খুঁজছি। শুনেছি, আপনারা আসবেন, কিন্তু কখন কোথায় কিছু তো জানাননি।’
লিফটের বাইরে এক তরুণী দাঁড়িয়ে। ভদ্রলোক বললেন, ‘পেয়েছি।’
তরুণীটি বললেন, ‘আমাদের পরিচালকও তো আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। অবশ্য তিনি এখন লাঞ্চে, কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করছেন।’
‘লাঞ্চ করেছেন আপনারা?’ জানতে চাইলেন ভদ্রলোক।
‘না,’ জানালাম আমি।
‘চলেন চলেন লাঞ্চ করবেন আমাদের সঙ্গে, পরিচালকও থাকবেন।’
‘আমরা কিন্তু ই-মেইল করেছিলাম’, জানালেন অসীম, ‘জবাব পাইনি।’
জানা গেল ই-মেইল গিয়েছিল সদর দফতরে, সেখান থেকে তাদের জানান হয়েছে কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় হয়তো ঠিকঠাকমতো যোগাযোগ হয়নি।
না, কাহিনীর এখানে শেষ নয়।
মুদ্রা জাদুঘরের পরিচালক লুসিয়েন। খুব সম্ভব ব্রিটিশ বা ফরাসী। হয়তো অনেক দিন ধরেই আছেন। মালয়েশীয় স্থাপত্য নিয়ে রবিউল ভাইয়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললেন। দেখা গেল, নামকরা কয়েকজন স্থপতি তারও যেমন বন্ধু, রবিউল ভাইয়েরও তেমনি বন্ধু। লুসিয়েন আলাদা একটি ঘরে আমাদের নিয়ে লাঞ্চে বসলেন। খাবার ঘরটি বিশাল। এই ইমারতে [কমপ্লেক্সে] যারা কাজ করেন তাদের জন্য ব্যবস্থা। অল্প দামে খাবার।
লুসিয়েন জানালেন পুরো ইমারতটিতে জায়গা আছে প্রায় এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ বর্গফুট। ব্যাংক নিগারা আলাদাভাবে এই ইমারতটি করেছে সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। এখানে আছে নিউম্যাসমিটিক বা মুদ্রা জাদুঘর, ব্যাংক নিগরার চিত্রকলা সংগ্রহের প্রদর্শনীশালা, আলাদা প্রদর্শনী কক্ষ, চমৎকার একটি লাইব্রেরি [ডিজিটাল ব্যবস্থাসহ]। আছে সেমিনার কক্ষ। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সভা-সেমিনার বা প্রশিক্ষণ এখানেই হয়। খালি স্পেসও আছে অনেক। লুসিয়েন আমাদের পুরো ইমারতটি দেখিয়ে তার অফিসে নিয়ে গেলেন। পরিচয় করিয়ে দিলেন কিউরেটদের সঙ্গে।
আমাদের স্টেট ব্যাংকের কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের মাতব্বরদের এ ধরনের কল্পনাশক্তি বা ভিশনই নেই, দৈনন্দিন কেরানির মতো ভাবনা ছাড়া। ড. আতিউরের আছে। তাই তার পক্ষে বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে কিনা জানি না।
একজন মহিলা মুদ্রা বিষয়ক বিভাগের কিউরেটর। এক যুগ ধরে তিনি এটি গড়েছেন। ব্যাংক তাকে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। তিনি আমাদের হাতে একটি করে কাগজ ধরিয়ে দিলেন। আমাদের কর্মসূচী দু’দিনের । বললেন, ‘আমরা তো ঠিক জানি না আপনাদের আগ্রহের বিষয় কী! তাই আমাদের মতো সফরসূচী সাজিয়েছি।’ অথচ, আমরা কিছুই জানি না। এই ইমারতের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা মুদ্রা জাদুঘরের জন্য।
অসীম বাবু পরের দিন ফের গেছেন সেই মহিলার কাছে খুঁটিনাটি জানতে। ফিরে এসে বললেন, ‘জানেন তাদের মুদ্রা সংগ্রহের বাজেট কত?’
‘কত?’
‘বছরে এক মিলিয়ন রিংগিত।’
‘অসীম; ঠাট্টা করে বলি আমি, ‘আপনার কর্তাদের জানিয়েন, আমাদের বলে লাভ নেই। আমাদের ধারণা আছে। আপনাদের গবর্নরেরও আছে। কিন্তু আপনাদের নেই।’
অসীম স্বভাবসুলভ হাসি হাসেন।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা জাদুঘরের জন্য বরাদ্দ কয়েক লাখ টাকা। মাসখানেক আগে দুষ্প্রাপ্য কিছু মুদ্রা সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। এখনও বিল হয়নি। হয়ত কর্মকর্তার সঙ্গে তার স্ত্রীর ঝগড়া হয়েছে, মন ভাল নেই, বিলে সই করবেন না। বা তাদের ধারণা, সবাই তাদের কাছে এসে মুদ্রা নিয়ে ধরনা দেবে। এ জন্য বলছিলাম, পরিবর্তনের অর্থ আমাদের কাছে হয়ত মন্ত্রী বা আপনার পরিবর্তন। মালয়েশিয়ার স্টেট ব্যাংক যেখানে ১০ লাখ রিংগিত শুধু মুদ্রা সংগ্রহের জন্য সেখানে মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, কী হবে এসব করে? কিন্তু, মন্ত্রীকে দিয়ে বিদেশী সংস্থার চাকরিটি ঠিক করে নিয়েছেন। অর্ধশিক্ষিত, দৃষ্টিভঙ্গিহীন কেরানি কর্মকর্তা দিয়ে দেশের পরিবর্তন হবে না। আসলে, পাশ্চাত্যের মতো হায়ার ও ফায়ারের ব্যবস্থা না থাকলে এবং ক্যাডার ও ক্যাডারের বাইরে অভিজ্ঞ লোক সমন্বয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে পরিবর্তন কীভাবে হবে? কুয়ালালামপুরে মাত্র একটি প্রকল্প বা পরিকল্পনা দেখে সরেজমিনে অনুভব করলামÑকেন আমরা তেমনভাবে এগোতে পারি না। এ ধরনের উদাহরণ আরও পরে দেয়া যাবে।
যে ক’দিন ছিলাম সে ক’দিন পত্র-পত্রিকায় গুম-খুনের সংবাদও দেখলাম যথেষ্ট। আমরা সেখানে থাকতে থাকতেই খবরে দেখলাম, ওলন্দাজ দূতাবাসে কর্মরত এক মালয়েশীয় [তিনি বিদেশে থাকতেন, ওলন্দাজ স্ত্রী নিয়ে ফিরে এসেছিলেন দেশে] দম্পতির একমাত্র পুত্র স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায়। মিডিয়ায় হৈচৈ। কয়েক দিন পর তাকে পুলিশ উদ্ধার করে। খুন খারাবির খবরও প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে পত্রিকায়। কিন্তু পুলিশ তাদের অর্থাৎ, ক্রিমিনালদের ধরে ফেলছে। অর্থাৎ পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতিটা কম। নিজের দেশের সঙ্গে পার্থক্যটা বিদেশ গেলেই চোখে পড়ে।

॥ ৬ ॥
রাত গাঢ় হচ্ছে। বললাম, ‘হাশেম ভাই খেতে যেতে হয়।’
‘অসীম আসুক। আমার শালিও আসবে।’ জানান হাশেম ভাই।
সময় পেরিয়ে যায়। আমরা হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে। যাদের জন্য অপেক্ষা করছি তাদের দেখা নেই। লবির এক কোণে ছোট এক দোকান। রবিউল ভাই হাশেম ভাইকে নিয়ে সেখানে গেছেন। আমি লবির বাইরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। রাস্তার অন্য পাশে, দোতলায় ছোট একটা নাইট ক্লাব/বার। ছোট কিন্তু বেজায় ভিড়। হৈ হৈ করে নাচের সঙ্গীত বাজছে, ভিড় উপচে ব্যালকনিতে, সেখানে তিন চারজন বিদেশী যুবক বসে, সামনে পানপাত্র। আমরা হানাফি। ইসলামের চার মজহাবের মধ্যে সবচেয়ে লিবারেল। মালয়েশিয়ানরা অনুসারী শাফি সম্প্রদায়ের। রক্ষণশীল। কিন্তু সেখানে বোধহয় নিজামী, আমিনী, খালেদা বা চরের পীরদের মতো তেমন কোন ধর্ম ব্যবসায়ী নেই। যারা ইসলামের স্বঘোষিত দারোয়ান হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ইসলাম রক্ষায় তাদের ঘুম নেই। ব্যবসায়ীদের ঘুম তো এমনিতেই কম, বা থাকলেও হয়ত দমিত।
না, কারও দেখা নেই। দোকান ঘুরে ফিরে এলেন দু’জন। রবিউল ভাইয়ের হাতে দামী চকোলেট। বললেন, ‘কিছু একটা না কিনলে কেমন দেখায়। তাই কিনলাম, খান।’ ‘আপনাদের তো ডায়াবেটিস, এই চকোলেট খাবেন কীভাবে?’
‘আরে কী হবে?’ আমার আপত্তি নেই। রবিউল ভাইও ঝটপট মুখে পুরলেন। কিন্তু, হাশেম ভাই রাজি হলেন না। কোন কিছুতেই তিনি তাঁর ভাষায় আমাদের ‘কুখাদ্য’ খাবেন না। আর পারলে সারাদিনই এক্সারসাইজ করবেন অর্থাৎ হাঁটবেন। একবার মনে আছে, দীর্ঘ যাত্রা শেষে দোহা বিমানবন্দরে ট্রানজিটে আমরা অপেক্ষা করছি। হাশেম ভাই সময়টা কাজে লাগাতে চাইলেন। ট্রানজিটের জন্য যে ঘরে বসেছিলাম সেখানে হাঁটতে লাগলেন। দু’তিন চক্কর দিয়েছেন এমন সময় মধ্যপ্রাচ্যের এক প্রহরী রূঢ়ভাবে তাঁর হাঁটা থামিয়ে দিল। বলল, বসে থাকতে হবে। তা সবাই জানে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষরা কেমন অভব্য হয়। আমি কিছু দেশে গেছি কিন্তু কখনও শুনিনি, মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের কেউ উল্লেখ করেছে ভব্য বলে।
কথা বলতে বলতে হাশেম ভাই হোটেলের সামনে কয়েকটা পাক চক্কর দিয়ে নিলেন, তারপর বললেন, ‘চলো’।
‘কিন্তু যাবো কোথায়?’
কাছে ধারে রেস্তোরাঁ আছে তিনটে। একটি ফাস্টফুডের, একটি ইরানী, আরেকটি আরবীয়। ফাস্টফুড নাকচ হয়ে গেল। আরবীটা সামনে পড়ল। সিঁডি বেয়ে দোতলায় উঠে বারান্দায় বসলাম। রেস্টুরেন্টের নাম ‘মুসাফির’।
‘যাক, মুসাফিরে ফিরে আসতে হলো মুসাফিরদের।’ বললাম আমি। (চলবে)

No comments

Powered by Blogger.